সরকারি দপ্তরের নেমপ্লেট ব্যবহার করে এক কর্মকর্তা অবৈধপন্থায় আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এমন ঘটনা ঘটেছে গাজীপুর কাপাসিয়ায়।
অভিযোগ আছে, ঘুস ও অনিয়মের মাধ্যমে ফাইল জিম্মি করে অবৈধপন্থায় চাঁদা নিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন দুর্গাপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী আবদুল হাই সিকদার। যার লিখিত আয়ের সঙ্গে নজিরবিহীন বৈসাদৃশ্য রয়েছে সম্পদের। এ কর্মকর্তা নলগাঁও সিকদারবাড়ির মৃত কাদু সিকদারের ছেলে।
জানা গেছে, আবদুল হাই সিকদার ১৯৮৯ সালে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী পদে চাকরিতে যোগদান করেন। পরে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পান। এর পর কপাল খুলে যায় এ কর্মকর্তার। পেছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি। কয়েক বছরের ব্যবধানে খারিজ, খাজনা, নামজারি, পর্চার কাজে ঘুস ও দালালি করে অগাধ সম্পদ গড়ে তোলেন এ কর্মকর্তা।
শুধু নিজের নামেই নয়, স্ত্রী শিরিন সুলতানার নামে রয়েছে আলিশান বাড়ি, মার্কেটসহ নামে-বেনামে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদ।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ব্যস্ততম এলাকার উত্তর বিলাসপুর সড়কের ভাঙা মসজিদসংলগ্নে রয়েছে ব্যতিক্রমী চোখধাঁধানো নজরকাঁড়া ৮ কাঠা জমিতে পাঁচতলা আলিশান বাড়ি।
এ ছাড়া আলাদা একটি মার্কেট ও একটি টিনশেড বাড়ি, নিজ গ্রাম নলগাঁও নতুনবাজারে তিনতলা মার্কেটসহ আলাদা আরও একটি মার্কেট।
শুধু তাই নয়, নতুনবাজারের পূর্ব পাশে তিন রাস্তার মোড়ে রয়েছে প্লট। ভূমি উপসহকারী পদে চাকরি করে কয়েক বছরে হয়ে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক, যা কল্পনাকেও হার মানিয়েছেন।
পাঁচতলা বাড়িসহ একাধিক মার্কেটের বিষয়ে বিলাসপুরের স্থানীয় ঠেলাগাড়িচালক জলিল বলেন, এ এলাকায় প্রায় ১০ বছর ধরে বসবাস করছি। এ এলাকার পাঁচতলা বাড়ি, টিনশেড বাড়িটি ও মার্কেটটিও নায়েব আবদুল হাই সিকদারের নামেই পরিচিত।
প্রতিবেশী রাফিও একই কথা বলেন। তিনি জানান, পাঁচতলা বাড়িটি আবদুল হাই সিকদারের নামেই আমরা জানি।
এ এলাকার চা দোকানদার হালিমের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ এলাকার সুন্দর পাঁচতলা বাড়িটি আবদুল হাইয়ের। এ ছাড়া টিনশেড বাড়ি ও মার্কেটও তার বলেই আমরা জানি।
উপজেলার চাঁদপুর ইউপি সদস্য স্বপন সিকদার যুগান্তরকে বলেন, গাজীপুরে পাঁচতলা বাড়িসহ একাধিক বাড়ি, মার্কেট, নিজ গ্রাম নলগাঁও নতুনবাজারে তিনতলাসহ একাধিক মার্কেট ও তিন রাস্তার মোড়ে প্লটসহ নামে-বেনামে অনেক সম্পদের মালিক আবদুল হাই সিকদার।
গাজীপুরে পাঁচতলা বাড়ি ও মার্কেটের বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হয় ভূমি সহকারীর স্ত্রী শিরিন সুলতানার সঙ্গে। সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি যুগান্তরকে বলেন, গাজীপুরের বাড়ি ও মার্কেটগুলো আমাদের।
এ বিষয়ে কথা হয় ভূমি সহকারী আবদুল হাই সিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, গাজীপুরের পাঁচতলা বাড়ি ও মার্কেট আমার। উপজেলার নতুনবাজারের মার্কেটগুলোও আমাদের। তবে চাকরিতে ১৯৮৯ সালে যোগদান করলেও ২০১১ সালের পর তেমন কিছু করতে পারিনি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসএম সাইফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমরা নানা অনিয়মের কথা শুনেছি। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।