কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছেন মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। কীভাবে ভাইকে হত্যা করা হয়, সেই বর্ণনা আদালতে উপস্থাপন করছিলেন তিনি। ঠিক সেই সময়ে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি ও আলোচিত সিনহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি প্রদীপ কুমার দাশ কাঠগড়ায় বসে মুঠোফোনে কথা বলার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
তবে তিনি কার সঙ্গে কী বিষয়ে কথা বলেছেন তা জানা যায়নি।
সোমবার কক্সবাজার জেলার দায়রা জজ আদালতে মামলার প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলার সময় এ ঘটনা ঘটে। প্রদীপের কথা বলার একটা ছবি এর মধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় চলছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আদালত কক্ষের কাটগড়ার ভেতরে হাঁটু গেড়ে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ। এ সময় কয়েকজন ব্যক্তি আশপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় দায়িত্বরত এক পুলিশ কনস্টেবল প্রদীপকে মোবাইল ফোনটি সরবরাহ করেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মোবাইল ফোনে একের পর এক কল আনুমানিক ৩০-৪০ মিনিট কথা বলেছেন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ। ওই দিন পরনে ছিল কালো পোলো শার্ট ছিল তার। তবে প্রদীপ কার সঙ্গে কী বিষয়ে কথা বলেছেন তা জানা যায়নি।
এদিকে সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিন কারাগার থেকে আদালতে পৌঁছলে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে দেখে বিরক্তি নিয়ে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘আমাকে নতুন করে চেনানোর দরকার নেই।’
মঙ্গলবার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তাকে বেশ আত্মবিশ্বাসী ও চেহারা হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কয়েকজন আইনজীবী জানান, সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ মলিন মুখে আদালতে এলেও পরের দিন
খুব আত্মবিশ্বাসী ও হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় তাকে দেখা গেছে। মোবাইলে কথা বলার পরেই প্রদীপ আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্ন অনেকের।
আদালত চলাকালীন কাঠগড়ায় প্রদীপের মোবাইলে কথা বলার বিষয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, এটি সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আদালতের নজরে আনা হবে। তবে এ কারণে আদালতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না বলে জানান তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় সোমবার। বুধবার পর্যন্ত টানা তিন দিন এ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে। মামলায় মোট ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে বাদীসহ ১ থেকে ১৫ নম্বর সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন।
মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের সাক্ষ্য দিয়ে প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাহিদুল ইসলাম সিফাত।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টের গাড়ি তল্লাশি কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব ১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।