উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস জঙ্গিরা সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে তাদের তৎপরতা জোরদার করেছে। বিশেষ করে সিরিয়া ও ইরান সম্প্রতি একাধিক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারো আইএস জঙ্গিদেরকে ফিরিয়ে আনতে ইচ্ছুক।
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এক প্রতিবেদনে লিখেছে, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একটি দল এই সংস্থার নিরাপত্তা পরিষদে দেয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, যে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ইরাক, সিরিয়াসহ আশেপাশের আরো কিছু এলাকায় দায়েশ বা আইএস জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলা ও হুমকির ঘটনা বহুগুণে বেড়েছে। এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘আইএস জঙ্গিরা এখনও এইসব এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। এ ছাড়া, সন্ত্রাসীরা দুর্বল হয়ে পড়লেও এবং সিরিয়া ও ইরাকে তাদের কার্যকলাপ অনেকটা কমে এলেও আবারো তাদের সক্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে’। লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমেরিকা আবারো আইএস জঙ্গিদেরকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’।
এদিকে, আমেরিকা কেন ও কিভাবে জঙ্গিদেরকে মাঠে নামাতে চায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দায়েশ বা আইএস-এর কিছু জঙ্গি সদস্য এখনো সিরিয়ায় অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে অবস্থান করছে। আল-হাসাকা প্রদেশের আল-হল মার্কিন ঘাঁটি হচ্ছে জঙ্গিদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি। যদিও বলা হচ্ছে তাদেরকে মার্কিন ঘাঁটির কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, মার্কিন সেনাবাহিনী আইএস সন্ত্রাসীদের কারাগার থেকে সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, আমেরিকা সিরিয়ায় সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য এসব সন্ত্রাসীদের ফের প্রশিক্ষণ ও সজ্জিত করছে। এভাবে তাদেরকে দিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে এটাকে সিরিয়ায় মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতির পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে চাইছে ওয়াশিংটন।
প্রকৃতপক্ষে, সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য মার্কিনীরা সিরিয়ার সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে। আর এ কারণে তারা সিরিয়ায় থেকে যাওয়ার জন্য অজুহাত খুঁজছে। সিরিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক খাইয়াম আয-যাআবি এ ব্যাপারে রাই আল-ইয়াওম পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, ‘আমেরিকা আবারো আইএস জঙ্গিদেরকে সক্রিয় করে তুলছে। এ প্রসঙ্গে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করা যায় যার ফলে কেবল মার্কিনীরাই লাভবান হবে। আসলে ওয়াশিংটন চায় সিরিয়ায় অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতা বজায় থাকুক যাতে সন্ত্রাসী চক্র ও সিরিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আরো পৃষ্ঠপোষকতা করা যায়’।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সিরিয়াকে অস্থিতিশীল ও দুর্বল করে রাখার পাশাপাশি সিরিয়ায় ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব নষ্ট করাও আইএস জঙ্গিদেরকে ফিরিয়ে আনা আমেরিকার অন্যতম উদ্দেশ্য। যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে, ইরান, ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যকার যোগাযোগ লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা রোধ করা। এই প্রসঙ্গে সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত “জেমস জেফরি” বলেছেন, সিরিয়া থেকে তারা মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করবে না এবং আমরা দামেস্ক ও তেহরানের মধ্যকার প্রধান রুটটি বিচ্ছিন্ন করতে আল-তানফ-এ উপস্থিত রয়েছি।