ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এবং আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি গত সপ্তাহে দুবাইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি আফগান নেতৃত্বের ওপর ভারতের প্রভাব বাড়ানোর ইঙ্গিত বহন করে।
গত এক বছরে ভারত তালেবানের সঙ্গে ধীরে ধীরে সম্পর্ক উন্নত করছে। তবে এই বৈঠকটি ভারত ও তালেবান সরকারের মধ্যে প্রথম উচ্চস্তরের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভারত গত দুই দশকে আফগানিস্তানে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সাহায্য ও পুনর্গঠন কার্যক্রমে বিনিয়োগ করেছে। বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে আঞ্চলিক উন্নয়ন, বাণিজ্য, মানবিক সহযোগিতা, স্বাস্থ্য খাত এবং শরণার্থীদের সহায়তার মতো বিভিন্ন বিষয়।
এই বৈঠক তালেবানের সাথে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিকচিহ্ন স্থাপন করেছে। ভারতের কাবুল দূতাবাস আংশিকভাবে পুনরায় চালু এবং তালেবানের অধীনে আফগান কূটনীতিকদের কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া—এসব পদক্ষেপ এই সম্পর্কের উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়।
ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো কবির তানেজার মতে, ভারতের এই সম্পর্কোন্নয়ন তালেবান-বাস্তবতার প্রতি একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং বাস্তবধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির অংশ। তবে, এটি বড় কোনো কৌশলগত পরিবর্তন নয়।
তালেবানদের জন্য ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে পাকিস্তানের সাথে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর। বৈঠকের মাধ্যমে তালেবান দেখাতে চায় যে তাদের কাছে বিকল্প কৌশলগত অংশীদার রয়েছে।
তালেবানদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ভারত এখনো পিছিয়ে আছে। অন্যদিকে, চীন, তুরস্ক, এবং কাতারের মতো দেশগুলো এ ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে।
এই বৈঠকে আফগান নাগরিকদের জন্য ভিসার সুবিধা পুনরায় চালু করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে, শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য পর্যটন ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভিসা প্রদান আবার শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতের জন্য একটি নৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে ভারতের তালেবান শাসনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
আফগানিস্তানে ভারতের কৌশলগত উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও, তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সুসংহত নীতি তৈরি করতে ভারত ব্যর্থ হয়েছে।
জিন্দাল স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক রাঘব শর্মা মন্তব্য করেন, অতীতে ভারত আফগানিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিদের (হামিদ কারজাই ও আশরাফ গনি) ওপর অতি নির্ভরশীল ছিল, যা ভুল সিদ্ধান্ত প্রমাণিত হয়েছে।
ভারতের উচিত আফগানিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে অনুধাবন করে দীর্ঘমেয়াদি এবং সুসংহত কৌশল গ্রহণ করা।
সূত্রঃ আল-জাজিরা