অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র গোটা আফগানিস্তান থেকে তার মাঝারি ও অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ঘাঁটিগুলো ভেঙে ফেলতে শুরু করেছে, প্রায় চার শ’ ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়ার কাজ চলতি মাসের মধ্যেই শেষ হবে।
বেশির ভাগ স্থাপনা ইতোমধ্যেই ভেঙে ফেলা হয়েছে। পেন্টাগন তার ৫টি প্রধান ঘাঁটির ভবিষ্যত নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র ইতোপূর্বে প্রধান ঘাঁটিগুলো খালি করার কথা ভেবেছিল। কিন্তু এখন কৌশলবিদেরা সিদ্ধান্তটি নিয়ে দোটানায় রয়েছেন।
এই ৫ ঘাঁটির প্রতিটির পেছনে যুক্তরাষ্ট্র বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। আফগান বাহিনীর জন্য এসব জটিল ঘাঁটিতে জনবল সরবরাহ করা ও নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। এসব ঘাঁটিতে খুবই স্পর্শকাতর ও অত্যাধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে। এসব সিস্টেমে যুক্তরাষ্ট্র অন্য কোনো দেশকে প্রবেশাধিকার দেয়নি। কারণ এগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করা সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আফগানিস্তানে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি মহা উদ্বেগের কারণ হয়ে পড়েছে। আর আফগানিস্তানে ইরানের উপস্থিতি ওয়াশিংটনের জন্য একই ধরনের উদ্বেগের কারণ। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব সিস্টেম আছে, সেগুলো এই দুই দেশের প্রবেশের সুযোগ ঘটুক, তা ওয়াশিংটন কখনোই চাইবে না।
বিশেষ করে ইরান সীমান্তের কাছে ফাররাহা ঘাঁটিটির কথা বলা যায়। ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ মেয়াদে ঘাঁটিটি চালু রাখার কথা ভাবছে। বাগরাম, কান্দাহার, জালালাবাদা, মাজার-ই শরিফ ও ফারাহার মতো প্রধান বিমানঘাঁটিগুলো ধরে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চালাবে। মজার ব্যাপার হলো, তালেবান মধ্যস্ততাকারীদেরকে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই আশ্বাস দিয়েছে যে তারা আফগানিস্তানে কোনো ঘাঁটি রাখবে না এবং তাদের বাহিনী প্রত্যাহারের আগেই সব ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেবে।
দি নিউজকে সূত্র জানিয়ছে, আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সফর আফগানিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রয়াসের অংশবিশেষ ছিল। আফগানিস্তান থেকে শেষ মার্কিন সৈন্যটি আট মাসের মধ্যে চলে যাবে।
চলতি মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চার হাজার সৈন্য চলে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ ২০ বছর ধরে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে গরিব আফগানিস্তানকে ধ্বংস করেছে।
আফগানিস্তান হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশনের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সফরের, ১০ বছরের মধ্যে প্রথম, ফলে আফগানিস্তানের পক্ষগুলো পাকিস্তানের নীতিই অবলম্বন করল। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ও পাকিস্তানের ব্যবস্থাপনায় দোহা প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
মরহুম নর্দার্ন নেতা আহমদ শাহ মাসুদের শিষ্য আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ আফগান সঙ্ঘাত নিরসনে পাকিস্তানের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তার এই বক্তব্য পাকিস্তানের জন্য খুবই ভালো খবর। কারণ তিনি ছিলেন আফগানিস্তানে পাকিস্তানবিরোধী লবির অন্যতম নেতা।
নয়াদিল্লী তাকে তাদের বড় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করত। আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে তার সঙ্গীদের ওপর ভারত বড় বিনিয়োগও করেছিল।
সূত্র জানিয়েছে, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে পাকিস্তানে আগমনকারী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ প্রেসিডেন্টকে পাকিস্তানের সাথে তার মতবিনিময়ের বিষয়টি অবগত করেছেন।
আফগানিস্তানবিষয়ক পাকিস্তানের বিশেষ দূত তার কূটনৈতিক দক্ষতা কাজে লাগিয়েছেন। আর এর ফলে এই সফরের ফলাফলে তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন।
সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর ও দি নিউজ