গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনকে জোরদার করতে সকলকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে’ বিএনপি’র উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান তিনি। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপিতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে আলোচনা সভায় বক্তাদের বক্তব্য শুনেন। এ ছাড়া আলোচনা সভায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও অঙ্গ-সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ফখরুল বলেন, এই যে আত্মত্যাগ, মায়ের যেই অশ্রুধারা এটা কি বিফলে যাবে? আপনারা কি সেটা বিফলে যেতে দেবেন? এখন জেগে উঠবার সময় এসেছে। জেগে উঠবে সেই তরুণ-যুবক। কবি নজরুল ইসলাম তার কবিতায় বলেছেন, “কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।” আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। সমস্ত ভয়ভীতি সবকিছু তাচ্ছিল্য করে আমাদের দেশমাতৃকার ডাকে, আমাদের মা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবার লক্ষ্যে ও তার ডাকে, আমাদের নেতা তারেক রহমানের ডাকে। আসুন আমরা সবাই বেরিয়ে পড়ি। আমরা এমন একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলি যে, ভয়াবহ দানব আমাদের সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে তাদেরকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের রাষ্ট্র, গণতন্ত্রের রাষ্ট্র নির্মাণ করতে সক্ষম হই।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের কাছে আমার একটাই আবেদন, আমরা লড়াই করছি সবাই। আমাদের বয়স হয়েছে।
আমাদের যে কথা মেজর হাফিজ উদ্দিন বলেছেন, আমাদের বয়স ৭০’র উপরে। আমরা লড়াই করেছি, দেশকে স্বাধীন করবার জন্য শহীদ জিয়ার ডাকে যুদ্ধ করেছি। বেগম জিয়া ডাক দিয়েছেন- আমরা সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি, তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য সফল হয়েছিলেন নব্বইয়ের ছাত্রদের গণআন্দোলনের মধ্যদিয়ে। আমি একটা কথাই বলতে চাই, আজকে যে আমাদের সংকট, এই সংকট মহাসংকট। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই যে তথাকথিত বিনাভোটে ইলেক্টেড এমপি, আমি তাকে এমপিও বলতে চাই না, আমরা যে বাজারে মাংস কিনতে যাই, গোস্ত কিনতে যাই টুকরা টুকরা করে দেয়, সেই টুকরা টুকরা করে কেটে নাকি ফেলে দিয়েছে। আপনি কোন অবস্থায় বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছেন যে, সাবেক পুলিশপ্রধান তার আজকে হাজার হাজার দুর্নীতির চিত্র পত্র-পত্রিকায় বেরিয়ে আসছে। তাকে আপনি লালন করেছেন। অনেক আগে স্যাংশন দেয়ার পরও তাকে আপনি আইজি বানিয়েছেন। একইভাবে আজকে সাবেক সেনাপ্রধান তাকে স্যাংশন দেয়া হয়েছে, একটামাত্র কারণ, সে বাংলাদেশে লুট করেছে, চুরি করেছে এবং নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দায় কি শুধু ওদের? এই দায় এই সরকারের যারা আজকে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।
সভায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই আওয়ামী লীগকে লাইসেন্স দিলো রাজনীতি করার, আর সেই লাইসেন্স নিয়ে আজকে মেলা মেলা কথা বলছে। কার সম্বন্ধে ওই জিয়াউর রহমান সম্বন্ধে, কার সম্বন্ধে বেগম খালেদা জিয়ার সম্বন্ধে, কার সম্বন্ধে তারেক রহমানের সম্বন্ধে। তারা ভেবেছিল জিয়াউর রহমানকে হত্যা করলে বিএনপি আর থাকবে না। কিন্তু বিএনপি আছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাল ধরেছেন; বিএনপি টিকে আছে। এখন তারেক রহমান হাল ধরেছেন, বিএনপি টিকে থাকবে হাজার বছর ইনআশাল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অব.) মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি আন্দোলন করে যাচ্ছে। কোথায় সেই ছাত্রদল, কোথায় তরুণরা। আশা করবো আপনারা এখানে যারা ছাত্র আছেন পুরনো দিনে একাত্তরের কথা স্মরণ করে আপনারা মাঠে নামবেন বিএনপি’র ডাকে, রাজপথে নেমে আমরা এই লুটেরার দলকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করবো। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক হতাশ, আওয়ামী লীগ বোধহয় টিকেই গেল। ভাইরে এই চোরদের দল, যেখানে সেনাপ্রধান, পুলিশপ্রধান চোর, দুর্নীতিবাজ, এদের সরকার যদি টিকে থাকে তাহলে সভ্যতার ইতিহাস, প্রগতির ইতিহাস মিথ্যে হয়ে যাবে। অতএব, নিশ্চিন্ত থাকুন বিএনপি বাংলাদেশের জনগণের একমাত্র ভরসা। আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শধারী সেই পতাকা বহন করে ইনশাআল্লাহ ক্ষমতায় যাবো। বেগম খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। আমরা এদেশকে দুর্নীতিবাজ-দুর্বৃত্তদের হাত থেকে মুক্ত করতে চাই, আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকেন।
প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় সভায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, অধ্যাপক মামুন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।