আদিবাসী বলা না বলা
Advertisements

শুনতে অবাক লাগলেও কথা সত্যি যে দুনিয়াতে নানান রাষ্ট্র মানেই তা একেকটা এথনিক [Ethnic] জাতির নিজ নিজ ভুখন্ডেই গড়ে নেয়া রাষ্ট্র নয়। আজকের আমেরিকার এথনিক জাত অরিজিন মূলত বৃটিশ (সাধারণভাবে ইউরোপীয়) অথচ তারা আমেরিকা মহাদেশ বা নর্থ আমেরিকায় মাইগ্রেটেড হয়ে গিয়ে সেখানে “নিজেদের” রাষ্ট্র কায়েম করেছেন। আর উলটা বা সবচেয়ে কমন চিত্র হল যেমন এথনিক পুর্ববঙ্গের বাঙালি নিজ ভুখন্ডেই নিজ রাষ্ট্র গড়েছে।

এথনিক – শব্দ শুনেই ঘাবড়াবার কিছু নাই। ইংরাজিতে জাত বলতে দুইটা শব্দ আছে race আর ethnic এভাবে দুইটা। যার প্রথমটা মূলত মানুষের ১০ লাখ বছরেরও আগের যাযাবর জীবনকালের সময়ে একেক মানুষের সাথে অপর মানুষের মধ্যে পরিচয় (identity) বৈশিষ্টে যে ভিন্নতা দেখা যেত; সেটাকে ব্যাখ্যা করে। যেমন,সেগুলোকে কে কোন জাত-ক্যাটাগরির যেমন গায়ের রঙ কেমন, চুলের বৈশিষ্ট কী ইত্যাদি দিয়ে বিভক্তি-পরিচয় দাঁড় করানো – এভাবে জাত পরিচয় করাটাকে ইংরাজিতে RACE বা রেস অর্থে জাতি পরিচয় বুঝায়। যেমন আরেক বিভক্তি-চিহ্ন, দুনিয়ার প্রতিটা রেস অর্থে জাতির রক্তের ডিএনএ বৈশিষ্ট আলাদা।

আর পরেরটা বা অন্য জাতি ধারণাটা হল, এথনিক অর্থে জাতি। এটা মূলত যখন মানুষের যাযাবর বৈশিষ্টের জীবনযাপন এর সুদীর্ঘ মিলিয়ন বছরকালের পরে এর বদলে কৃষিকাজভিত্তিক যে জীবনযাপন শুরু হয়ে গেছিল সেই কালপর্ব সম্পর্কিত হল এথনিক জাতি। মোটামুটি ছয় হাজার বছর আগে শুরু হয়েছিল এই বৈশিষ্টের জীবন যাপন। আর যার প্রধান বৈশিষ্ট হল যাযাবর-গিরি ছেড়ে ভুমিতে থিতু হয়ে বসবাস; মানে, চাষবাস শিখে ফেলার পরের মানুষ-জীবন। কৃষিকাজভিত্তিক জীবনযাপনের শুরু, এখান থেকে এথনিক জাত ধারণা মানুষের আবির্ভাব। আমরা কী খাই, কেমনে রেঁধে খাই, কী কালচার, ধর্মবোধ ও পালন ইত্যাদি সব এর অন্তর্ভুক্ত বৈশিষ্ট। অন্যভাষায় এটাকে আমরা সিভিলাইজেশন এর শুরুও বলি। যেমন আমরা সিন্ধু সভ্যতা (Indus-Valley Civilization) এর অংশ; সেখান থেকে একটা উপ-বিভাগ ‘বাঙালি’; সেই “বাঙালি” এথনিক জাতির অংশ। বাঙালি আমাদের এথনিক জাতিগত নাম। এবং আমাদের রাষ্ট্র হিসাবে যা পুর্ববঙ্গের বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ট; যার এখনকার নাম বাংলাদেশ। আবার রাষ্ট্রগঠনের বিচারে এর ভিতরে অনেক ভিন্ন ভিন্ন এথনিক জনগোষ্ঠি যেমন বাঙালি হিন্দু, বাঙালি মুসলমান এবং অনেক ছোট ছোট মঙ্গোলয়েড [Mongoloid] এথনিক অরিজিনের মানুষ আছে। সাধারণ বিচারে আমরা সবাই সমতলভুমিতে বসবাসকারী অর্থে সমতলি। তবে মঙ্গোলয়েড [Mongoloid] এথনিক অরিজিনের মানুষদের একটা অংশ সমতলি নয় তুলনামূলক তারা পাহাড়ে বাস করে বলে অনেকে তাদের পাহাড়ী বলে থাকে। এরা অন্তত ১৯৯৭ সালের পরে নিজেরাই নিজেদেরকে পাহাড়ী বলেও ডেকেছে। রাষ্ট্র মূলত রাজনৈতিক বিচারে ভিত্তিতে গঠন হয় বলে ( মানে কেবল এথনিক বিচারেই নয়) এথনিক সহ আমাদের মধ্যে অন্য যতই ভিন্নতা যাই থাক, একই রাষ্ট্রের ভিতরের আমরা সবাই সম-মর্যাদার ও সম-অধিকারের নাগরিক।

সবার আগে একটা সাবধানবাণীঃ
এই আলোচনায় মানুষ যেই এথনিক বা রেসিয়াল [racial] অরিজিনের হোক না কেন কাউকেই কারো চেয়ে উঁচা-নিচা দেখা বা দেখানো যাবে না। ভাবা যাবে না। এটা বড় অপরাধ হবে। এই ভাবনাটা মনের পিছনে সবসময় জাগিয়ে রেখে, জীবন্ত রেখে তাই এই আলোচনাটা পড়তে হবে। এতে অনেক কিছুই ঠিকঠাক বুঝা হবে।

অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, মঙ্গোলয়েড বলতে তারা প্রধানত পাহাড়ে বা উচু ভুমিতে যাদের শুরুর বসবাস; যদিও লম্বা কালপর্বে তারা ক্রমশ সমতলের দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, এরকম! মঙ্গোলয়েড ধারণাটা যত না ethonic পরিচয় ঘটিত এর চেয়ে এটা রেসিয়াল [racial] বিচার-বৈশিষ্ঠের এক পরিচয়। আসলে এটা কোন ভুগোলে (সমতলে না পাহাড়ে এভাবে কোন ভৌগলিক অবস্থানে) বাস করে সেটাই প্রধান করে দেখে একটা বিচার-বৈশিষ্ট। অক্সফোর্ড ভাষার ডেফিনেশন অনুসারে, এটা – “relating to the broad division of humankind including the indigenous peoples of East Asia, SE Asia, and the Arctic region of North America.”।

এখানে এই আলোচনাটা শুরু করেছি যেখান থেকে, সেটা ঠিক এথনিক বা রেসিয়াল অরিজিনের বিচার প্রসঙ্গে না; বরং এর চেয়েও কে কোথায় এই একালে (মানে ১৬০০ সালের পরে) রাষ্ট্র গড়েছে – রাষ্ট্র পত্তন করেছে – সেদিকে ফোকাস রেখে। মানে নিজ এথনিক ভুমিতে সে রাষ্ট্র গড়েছে তা হ্যা কিংবা না এমন কিনা – এদিকে ফোকাস করে।

আরেক ধরনের রাষ্ট্র পত্তন; মাস মাইগ্রেশনঃ
এবার আরেক ধরনের রাষ্ট্র পত্তন বা গড়ার দিকে যাব। এর মূল বৈশিষ্ট হল এরা নিজ এথনিক ভুমির থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে পরিকল্পিত স্থানান্তর [মাইগ্রেশন বা migration] করে অন্য এথনিক জনগোষ্ঠির দেশে নিজ রাষ্ট্র গড়ে নিয়েছিল। এধরণের এখনকার সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হল, আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি রাষ্ট্র!

যারা সকলেই পুরা লট ধরে এথনিক ইউরোপের বাসিন্দা যার আবার সংখ্যাগরিষ্ট অংশটাই বৃটিশ অরিজিন পরে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের যারা এতে অংশ নিয়েছিল। ঐতিহাসিক নথিপত্র বলছে, বৃটিশ কোম্পানির জাহাজ ১৬০৭ সালে সর্বপ্রথম নর্থ আমেরিকা মানে এখন যেটা ইউএসএ এর এক অঙ্গরাজ্য ভার্জিনিয়াতে জাহাজ ভর্তি বৃটিশ গরীব কৃষক নিয়ে ল্যান্ড করেছিল। কৃষকদের বলা হয়েছিল মাঙনা আমেরিকায় তাদের নেয়া হবে, প্রচুর চাষাবাদের জমি দেয়া হবে সাথে চাষাবাদি-জীবনযাপনে্র জন্য শুরুর অর্থও দেওয়া হবে। অর্থাৎ উদ্দেশ্য পরিকল্পিত এক এথনিক মাইগ্রেশন। মাইগ্রেশন এর বাংলা উদ্বাস্তু হলেও এখানে ব্যাপারটা উলটা। মাস (গণ) মাইগ্রেশনের লোকেরা এখন আমেরিকার নায়ক শুধু না, সারা দুনিয়ার নায়ক হয়ে থাকছিল যার প্রভাবই এখনও প্রবল!

এখানে উভয় পক্ষ মানে, এই মাইগ্রশনে যে নিয়ে যাবার আয়োজন-খরচ করেছে আর যাকে (কৃষক) নিয়ে গেছে উভয়েই মূলত একই এথনিকগোষ্ঠি – বৃটিশ। কিন্তু উভয়ের আসল সম্পর্ক টা ঠিক এথনিক পরিচয়ের নয়। বরং এদুইয়ের বৃটিশ একপক্ষ (সংখ্যায় কম) অন্যের ভুখন্ড-জমিতে হয়েছে কলোনিদখলদার আর অন্য বৃটিশ পক্ষ হল যাদেরকে জাহাজ ভরে ঐ দখলি ভুমিতে নিয়ে ফেলা হয়েছে যাতে তারা চাষাবাদের দখলি জমিতে “প্রজা” হতে পারে!

তাহলে ১৭৭৬ সালে আমেরিকান স্বাধীনতা, স্বাধীন রাষ্ট্র এসব কথার অর্থ কী?
এর সোজা অর্থ হল, আমেরিকায় চাষাবাদের জমি দখলদার আর চাষাবাদের জমির প্রজা উভয়ের যারা এথনিকভাবে বৃটিশ তাদের দুই অংশের মধ্যে (প্রায় দেড়শ বছর পরে) পরস্পরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। আর পরিণতিতে চাষাবাদের প্রজাদের বিজয় ঘটেছিল। আর এটাই ১৭৭৬ সালের স্বাধীন আমেরিকা! অর্থাৎ বৃটিশ বা ইউরোপীয় এথনিক অরিজিনের প্রজা কৃষকদের বিজয়-টাকে আমেরিকান স্বাধীনতা বলে আমরা জানি।[এই রচনা লিখার সময়ে তা সংক্ষেপ রাখার জন্য অনেক কিছুই বিস্তারে বলি নাই; অবশ্য তা আমার অন্য প্রসঙ্গের লেখায় আছে সেগুলো এড়িয়ে মূল প্রসঙ্গে চলে গেছি।]

তাহলে স্থানীয় এথনিক – কথিত রেড ইন্ডিয়ান যারা – এরা কোথায় গেলো?
সেটা বুঝতে গেলে, এই মাইগ্রেশন প্যাটার্ণটা বুঝতে হবে। জাহাজগুলো হবু প্রজাদের দখলিভুমিতে খালাস করে দিবার পরে প্রজারা স্থানীয় জমি বাছাবাছি আর বাড়িঘর স্থাপন চাষাবাদ ইত্যাদি করতে শুরুতে মনোযোগী হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়রা (যাদেরকে কলোনিদখলদারদের ভাষায় দেয়া নাম রেড ইন্ডিয়ান) যেসব জমিতে আগেই বসবাস করছিল সেগুলা তো সব পরীক্ষিত চাষাবাদের [arable land] জমি। ফলে স্বভাবতই মাইগ্রেন্ট প্রজাদেরকে স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে রক্তক্ষয়ী মারামারিতে জড়িত হতে হয়েছিল, এতে অস্ত্র অবিকশিত বলে স্থানীয়দের পরাজয় ও ফলাফলে আপোষে স্থানীয়রা তাদেরকেই আরো গহীন বনাঞ্চলের দিকে সরে গিয়ে বসতি স্থাপন করা – এটাই ঘটেছিল। আর এটাই এখনকার কানাডা-আমেরিকার অতীত, পিছনকালের মুখ্য বৈশিষ্ট।

আমরা এখন নর্থ আমেরিকা থেকে ল্যাটিন আমেরিকার দিকে যাব। এগুলো আবার বৃটিশ বা ফ্রেঞ্চ এরা নয় এই পুরা অঞ্চল্টাই স্প্যানিশ নয়ত পর্তুগীজ কলোনি দখলে চলে যায়, প্রায় পাশাপাশিই তবে বৃটিশদের থেকে কিছুটা আগে ১৪৯৩ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপগুলো স্পানিশ কলোনি হবার মধ্য দিয়ে এটা শুরু হয়েছিল। যদিও একটা বড় ফারাক আছে এখানে, আসছি সেদিকে।

বামপন্থিদের কল্যাণে আমরা কলোনি-সম্পর্কিত বিষয় খুব ভাল বুঝি বলে ধারণা আছে; যদিও কথা সত্য না। প্রধানত বৃটিশ সাথে সারা ইউরোপ যখন ব্যাপক কলোনি দখলে মেতে উঠেছিল এর শুরু বলেছি ১৬০৭ সাল। আর একই বৃটিশেরা অবিভক্ত-ইন্ডিয়াকেও কলোনি করার শুরু ১৭৫৭ সাল। মানে, প্রায় দেড়শ বছর পরে।

তাহলে অবিভক্ত-ইন্ডিয়া কলোনিদখল হয়ে যাওয়া আর নর্থ আমেরিকার কলোনি হওয়া এদুইয়ের মধ্যে কী কোন ফারাক আছে?
হা আছে। আর এটা খুবই গুরুত্বপুর্ণ ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। এককথায় মূল ফারাক জাহাজ ভরে হবু-প্রজা নিয়ে যাওয়া! – এই ঘটনা-চিহ্ন বৃটিশেরা ইন্ডিয়া দখলের কালে জাহাজ ভরে বৃটিশ- কৃষক বা হবু প্রজা সাথে আনে নাই। অর্থাত নর্থ আমেরিকার ক্ষেত্রে ছিল কলোনিদখল ও মাইগ্রেশন দুটাই একসাথে। আর বৃটিশ-ইন্ডিয়া ছিল কেবল কলোনিদখল।

এসবের সোজা মানে হল, আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি এরা হল কলোনিদখল ও মাইগ্রেশন দুটাই একসাথে ঘটাবার আদর্শ উদাহরণ। আর স্থানীয় ট্রাইবাল জনগোষ্ঠিকে মেরে কেটে এরা একদম প্রান্তিক মানুষ করে দেয়া হয়েছিল শুধু তাই না তারা মাইগ্রেটেড দখলদারদের গড়া শহরের কেউ না; অস্তিত্ববিহীন এমন করে রেখে দিয়েছিল।

এদিকে ল্যাটিন আমেরিকা এটা নিজেই সুনির্দিষ্ট কিছুটা আরেকটা ধরনের। যেমন এটা মূলত বৃটিশ-ইন্ডিয়ার মতই; মানে, জাহাজভরা মাইগ্রেশন আনা নয়, কেবল কলোনিদখল। কিন্তু সমস্যা আরেকটা এবং বড় সমস্যা। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আবার দুইটা ধরণ। এর একদল যারা আমাদের বৃটিশ-ইন্ডিয়ার চোখে নেটিভ এই অর্থে যে স্থানীয় আর যাদের সাথে ছিল বৃটিশদের উঠা-বসা আর উচা-নিচা বজায় রেখেই একই শহরে বসবাস ছিল এরাই নেটিভ তেমন। কিন্তু এর বাইরেও এক বিরাট ট্রাইব জনগোষ্ঠি এবং ততোধিক বনাঞ্চল ও বনাঞ্চলের বাসিন্দা থেকে গেছিল। যারা ঠিক বৃটিশদের বেলায় স্থানীয় নেটিভ বলতে যা বুঝায় ঠিক তা্রা নয়। আর বনাঞ্চলের বাসিন্দা হলেও সংখ্যায় তারা বিরাট!

আসলে ঘটনা আরেকটু খুলে বলতে হবে। ঘটনাটা হল, আগে বলেছিলামঃ আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি এরা শুধু কলোনিদখল ও মাইগ্রেশন দুটাই একসাথে ঘটাবার আদর্শ উদাহরণই নয়। এরা স্থানীয় ট্রাইবাল জনগোষ্ঠিকে মেরে কেটে এরা একদম প্রান্তিক মানুষ শুধু না তারা মাইগ্রেটেড দখলদারদের গড়া শহরের কেউ না; অস্তিত্ববিহীন করে রেখে দিয়েছিল।

এর বাইরেও আরো ঘটনা আছে। আর এবার পুরা ঘটনায় শুধু উপরের চার দেশ নয় সাথে ল্যাটিন আমেরিকাকেও সামিল করে বুঝতে হবে। সেই তথ্যটা হল, মাইগ্রেন্টেরা শুধু স্থানিয় রেড ইন্ডিয়ান টাইপের লোকেদের বসতভিটা চাষাবাদের ভাল ও তৈরি জমিই দখল নিয়ে নিয়েছিল তাই না দ্বিতীয় পর্বে তা আরো ব্যাপক হয়েছিল। একটা আগে বলেছি যে তাতে স্থানীয় ট্রাইবাল জনগোষ্ঠিকে আরো প্রান্তিক এলাকায় বনাঞ্চলের গহীনে ঠেলে দিয়েছিল।

আর এবার দ্বিতীয় পর্বের উচ্ছেদের কথা শুনেন। দু-চারশ বছর পরে কলোনি মাইগ্রেন্টরাই (আমেরিকার মত) রাষ্ট্র বানায় ফেললে এরপর তাদের চোখ পড়ে যে আরো গহীন বনাঞ্চলের মাটির নিচের সম্পদের (তেল বা খনিজ) প্রতি। ফলে একারণে এবার গহীন বনাঞ্চল দখল ও এক্সপ্লোর বা খোড়াখুড়ি করা অঞ্চলের লোভে এবার তারা আবার আরেক ব্যাপক উচ্ছেদ ঘটিয়েছিল।

এবার আমাদের মূল প্রসঙ্গঃ
গহীন বনাঞ্চলের মাটির নিচের সম্পদের (তেল বা খনিজ) খোঁজে দ্বিতীয় উচ্ছেদ থেকেই এর পালটা ব্যাপক প্রতিক্রিয়াটাই হয়ে উঠেছিল গ্লোবাল হয়ে। কারণ ততদিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাতিসংঘ (১৯৪৫) গঠিত হয়ে গেছে।
তাই মোটামুটি ১৯৫৫ সালের পর থেকেই এমন উচ্ছেদের বিরুদ্ধে কী করা যায় তা জাতিসংঘের আলোচনায় আসতে থাকে। আসলে ল্যাটিন আমেরিকার ক্ষেত্রে সেখানকার ঘটনায় এর প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। আর এই প্রসঙ্গটা জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে উঠতে থাকে।

ওদিকে জাতিসংঘের আরেক আভ্যন্তরীণ গঠন সমস্যা ছিল – হিউম্যান রাইট ইস্যুতে। সমস্যার উতস হল, কমিউনিস্ট সদস্য রাষ্ট্রগুলো “হিউম্যান রাইট” মানে না’; এটা তাদের ইস্যু বা তাদের রাষ্ট্রের ইস্যু মনে করে না তারা এই যুক্তিতে। যদিও কমিউনিস্টদেরকেও সাথে নিয়েই তো রুজভেল্ট জাতিসংঘ গড়ে তুলেছিলেন এবং এছাড়াও ১৯৪৮ সালে ইউএন হিউম্যান রাইট চার্টার ঘোষিত হয়েছিল। তাই এমন বাস্তবতায় কলোনিদখল ও মাইগ্রেশন ইস্যুতে হাত দিবার আগেই জাতিসংঘ কমিউনিস্ট- ডিফারেন্স যতটা সম্ভব কমানো মানে মেরামত ও কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নিতে হয়েছিল। সেসব বিস্তারিত দিকে এখানে যাচ্ছি না। তাই প্রতিক্রিয়া আনতে জাতিসংঘের দেরি হয়েছিল।

এবার এক ঝটকায় বলে দেই অবশেষে ২০০৭ সালে জাতিসংঘের United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples – ঘোষিত হয়েছিল; আর সেটা হয়েছিল অধিকারের দিক থেকে বা বলা যায় ১৯৪৮ সালের হিউম্যান রাইট চার্টারের মত করে। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল, কলোনিদখল ও মাইগ্রেশন এককালের এদুই ঘটনা ও এর প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রাইবাল জনগোষ্ঠিকে আরেক উচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা করা।

এখন যারা আরও বিস্তারে যেতে বুঝতে চান আমি মূল ঘোষণাটার লিঙ্ক দিয়ে রেখেছি উপরে সেখান থেকে দেখে নিতে পারেন। এখন আমি এখানে নিচে কেবল মূলকথাটা নিজ ভাষায় তুলে ধরব।

উপরের ঘোষণার শিরোনামের মধ্যেই বলা আছে এটা Rights of Indigenous Peoples – বা ইন্ডিজিনিয়াস জনগণের অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণা। ফলে প্রথম সমস্যা হল, ইন্ডিজিনিয়াস [Indigenous] কাদেরকে গণ্য করা হবে। এই Indigenous এর বাংলা অনেকে করেছেন আদিবাসী। অনেকে ভুমিপুত্র ইত্যাদি এমন কিছুওও অনেকে করে থাকেন। বাংলাদেশে চাতুরিটা এখান থেকেই।

এখানে খেয়াল রাখতে হবে এই Indigenous শব্দটা এসেছে মাইগ্রেশন এর বিপরীত শব্দ হিসাবে – কিন্তু আমেরিকান মাইগ্রেশন সমস্যার প্রেক্ষিতে। কিন্তু বাংলাদেশে এই আমেরিকান মহাদেশীয় কলোনিদখল ও মাইগ্রেশন – এই বিশেষ প্রেক্ষিত থেকে আলাদা করে আনা হয়েছে। মানে ইউরোপীয় কলোনিদখল ও মাইগ্রেশন এদুইটা একসাথে চলার কালে যারা সারা আমেরিকাতে (বা এমন ভুখন্ডে) ইউরোপীয় এথনিক মাইগ্রশন যেটা হয়েছিল সেই সাপেক্ষে এই ইন্ডিজিনিয়াস রাইটের সুত্রপাত হলেও বাংলাদেশের পাহাড়িরা আকমেরিকান প্রেক্ষিত ফেলে দিয়েই এটা বাংলাদেশে প্রয়োগ করতে চায়। আবার শুধু কোন ভুখন্ডের আগের বাসিন্দা কারা ছিল সেটা বুঝাতেই এই Indigenous বা যা থেকে বাংলায় আদিবাসী অর্থ করেছেন অনেক।

এখন আমাদের পাহাড়ি জনগোষ্ঠির দাবি তাদেরকে সরকারীভাবে তাদেরকে আদিবাসী বলে পরিচয়ে ডাকতে হবে।
কিন্তু কেন এমনটা হল? আর তাদের এই দাবি কবে থেকে?

কিন্তু বাংলাদেশে পাহাড়ি জনগোষ্ঠি এই Indigenous অর্থে নিজেদের আদিবাসী বলে দাবি করা শুরু করেছে। যেখানে ঠিক যেমন এখনকার নর্থ বা আমেরিকা রাষ্ট্রে ইউরোপীয় এথনিক অরিজিনের সাদা আমেরিকান দেরকে সহজেই স্বীকার করতেই হবে যে তারা আমেরিকায় Indigenous বলে কেউ নয়। Indigenous বলতে যে কোন সাদা আমেরিকানকে স্বীকার করতেই হবে যে Indigenous হল একমাত্র রেড ইন্ডিয়ানেরা। কিন্তু এই অবস্থাটা কী বাংলাদেশেও?

অর্থাৎ জাতিসংঘের Indigenous রাইট ঘোষণা টা যে অর্থে সাদা আমেরিকানেরাও নিজেদের Indigenous মনে করার সুযোগ নাই। কিন্তু সেই একই অর্থে বাংলাদেশের পাহাড়িরা কী Indigenous বা আদিবাসী? কোনভাবেই না। কারণ, বাঙালিরা নিজ এই ভুখন্ডে মাইগ্রেন্ট নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা ইউএন এর Indigenous রাইট ঘোষণা টা যে অর্থে সেই অর্থে বাংলাদেশে না পাহাড়িরা রেড ইন্ডিয়ানদের মত আদিবাসী, না বাঙালিরা সাদা আমেরিকানদের মত ইউরোপীয়ান মাইগ্রেন্ট!

অথচ বাংলাদেশে পাহাড়ি জনগোষ্ঠি নিজেদেরকে এই Indigenous অর্থে নিজেদের আদিবাসী দাবি মানে হল আমরা যেন মাইগ্রেন্ট – মাইগ্রেশন করে বাংলাদেশে এসেছি আর পাহাড়িরা হল এর আদিবাসী বা ভুমিপুত্র!

বাংলাদেশে না পাহাড়িরা রেড ইন্ডিয়ানদের মত আদিবাসী, না বাঙালিরা সাদা আমেরিকানদের মত ইউরোপীয়ান বা কোন মাইগ্রেন্ট!

কিন্তু সাবধান, সবচেয়ে রহস্যময় জায়গা হল, পাহাড়িরা তাদেরকে আদিবাসী মানে Indigenous বলে ঘোষণা দিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছেই দাবি জানাচ্ছে কেন?

কারণ, কে Indigenous এনিয়ে জাতিসংঘের স্বীকৃত কোন সংজ্ঞা নাই। তাই বাংলাদেশ সরকার নিজেই যদি পাহাড়িদের Indigenous জনগোষ্ঠি বলে স্বীকার করে নেয় তবে পাহাড়িরা এবার জাতিসংঘকে তারা আদিবাসী (রেড ইন্ডিয়ানদের মত) সার্টিফিকেট দেখায় কাজটা সহজ করে নিতে পারবে; ফলে তাদের দাবি বাস্তবায়ন করতে পাহাড়িরা এরপর জাতিসংঘের কাছে দাবি জানাবে সংজ্ঞার সমস্যা মিটে গেছে। তাই সারা বাংলাদেশ বা এর কোন ভুখন্ড পাহাড়িদের রাষ্ট-ভুখন্ড বলে (জাতিসংঘ মিশন বসিয়ে) তা বুঝিয়ে দিয়ে যাবে। এই হল পাহাড়িদের মনোবাসনা। কিন্তু বাঙালি এথনিক গোষ্ঠি তারা কেন নিজেদেরকে বাংলাদেশের রেড ইন্ডিয়ান যেনবা তা কেন সাজাবে এর কোন ব্যাখ্যা কারো কাছে নাই!

সেকারণেই হাসিনা সরকার এসব “ষড়যন্ত্র” থেকে দূরে থাকতে ২০১০ সাল থেকেই (দীপুমনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমল) আদিবাসী বলা যাবে না বলে ইন্টারনাল নির্দেশ জারি করে জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি পর্যন্ত। যদিও ১৯৯৭ সাল থেকেই জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে বলে সন্তু লারমা এন্ড গং দের পক্ষে এলাইন হয়ে থাকার নীতি চালিয়ে গেছে। আর এই ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে এনেছে কথিত রাজা দেবাশীষ লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়তে গিয়ে জেনেছিলেন সেখানকার কিছু ষড়যন্ত্রকারি যাদের বাইরের পরিচয় তারা নাকি মানবাধিকার উকিল!

কেন ষড়যন্ত্র বলছিঃ
স্বাধীন বাংলাদেশে হবার পরের থেকে যদি ধরি পাহাড়িরা ইন্ডিয়ানদের কবলে পড়েছে তাদের হাতের পুতুল হয়েছে কমপক্ষে সেই ১৯৭৫ সাল থেকে। শেখ মুজিবের খুনের পরে ইন্দিরা গান্ধীই শেখ মুজিবের ভুল [তোরা বাঙালি হয়ে যা] ও সৃষ্ট জটিলতাকে ব্যবহার করে পাহাড়িদেরকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল যা এখনও ইন্ডিয়া ব্যবহার করে চলেছে। আর রাষ্ট্র আর কলোনিদখলের ইতিহাস না জেনে যা কিছুই ইন্ডিয়ান অবস্থান তা নিশ্চয় প্রগতিশীল এই বুঝ থেকে প্রগতিশীলেরা Indigenous বা আদিবাসী দাবির পক্ষে। ফলে জেনে না জেনে কথিত প্রগতিশীলেরা এর পক্ষে! যদিও এদের নেতারা (বিশ্ব শিক্ষক, এনজিও মালিকেরা) কিন্তু জেনেশুনেই ইন্ডিয়ানদের হাতিয়ার এজেন্ট! এরা এখনকার বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান আধিপত্য ফিরিয়ে আনা চক্রে অংশ নিয়েছে। ইউনুস সরকারকে ক্রমাগত ডিস্টার্বেন্সের মধ্যে রাখা যার প্রধান উদ্দেশ্য! আর সাধারণভাবে ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্য হল, পাহাড়িরা যেকোন কিছুতে (অস্ত্র-অর্থ সবধরণের) সাপোর্ট করে বাংলাদেশকে বিব্রত করা। ইন্ডিয়ার অনুমান এটা করলে তা ভারতের নর্থ-ইস্ট সামলাতে মাইলেজ পাবে। অনেক সময় বিনিময় মুল্যও এতে পারে ইত্যাদি! মজার কথা হল আজ TIB এর দাবি করেছে Indigenous বা আদিবাসী দাবি না মানাটা নাকি কর্তৃত্ববাদী সরকারের কাজ।

এমনটা অবশ্য বেশির ভাগ অথাকথিত উদার মানুষের ধারণা, আদিবাসী বলার দাবি এটা যেন বাচ্চাদের চকলেট চাওয়ার কোন আবদার মানে, – “দিয়ে দাও না, দিলে কী হয়” ধরনের ধারণা। মানে হল জাতিসংঘের এপ্রসঙ্গে (Indigenous) ও কোন প্রেক্ষিত পটভুমিতে এই ঘোষণা সে সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল তা মনে হয় না। অথবা কেন আমাদের পাহাড়িরা আদিবাসী সরকারী স্বীকৃতি চাচ্ছে তা এরা জানতেীদের কোন কৌতুহলও নাই। সবই উদারতা যেন দিয়ে দেও না কী হয়। অথচ (কর্মিরা না জানলেও) এর নেতারা সকলের জেনেশুনেই ইন্ডিইয়ার এজেন্ডায় দালালিতে। ফলে এরা বিশেষ করে এই সময়ে এরা জেনে না জেনে কার্যত ইন্ডিয়ান খেদমতগার হয়ে চলছে।

আবার ১৫ লাখের আশেপাশের এই ভুখন্ড (আমাদের একটা বড় উপজেলার কাছাকাছি) এর অন্যান্য (ভুমি বিতর্ক সহ) যেসব দাবি সেগুলো মিটিয়ে ফেলা এবং একটা শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর পাহাড়ি জনগোষ্ঠিকে দাড় করিয়ে দেয়া তেমন অমীমাংসেয় কোন সমস্যাই না। কিন্তু কার সাথে আমরা ডিল করব? যেখানে তথাকথিত জুম্মুল্যান্ডের নামে ভারতীয় হাতের পুতুল হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এদিকে ইন্ডিয়া বাংলাদেশে আধিপত্য ফেরত চায় অন্যদিকে তার নর্থ ইস্টের সমস্যায় আমাদের ব্যবহার করতে চায় পাহাড়িদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে।

এখন কিছু কথা একদম সোজাঃ
পাহাড়িরা যদি একবার মূল্যায়ন করে দেখত এতদিন ধরে একাজে তাদের আন্দোলনের লাভক্ষতি কী হয়েছে। এতদিন বলতে কিন্তু এটা অনেক পুরানা সেই ১৯৬২ সালের আশেপাশে আয়ুব খান কাপ্তাই নদীতে বাধ দিয়ে পানিবিদ্যুত বের করার খায়েস থেকে। সেকালে পরিবেশ বলে ধারণা তেমন কিছু ছিল না। আর এতে পরিবেশগত ক্ষতিও কম ছিল না। হ্রদের পানি আটকানোতে পানির স্থায়ী উচ্চতায় রাজার ঘরবাড়ি-সহ লেকের আশেপাশে সব পানির নিচে চলে গেছিল। সব সমসয়া কিন্তু এটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যেটুক বাসিন্দা এতে উচ্ছেদ হয়েছিল তাদের টাইবাল-এথনিক অপর অংশ মেঘালয়ের বাসিন্দা বলে বাংলাদেশের অংশ ক্রমশ সেখানে গিয়েই থিতু হয়েছিল। আর এখন ভারতের সুপ্রীম কোর্টের এক রায়ে এনিয়ে কোন বিতর্ক অস্থিরতা এখন আর নাই।

আর আয়ুবের শখের এই পানিবিদ্যুত ছিল মাত্র ৯০ মেগাওয়াটের যা একালে বাংলাদেশের চাহিদার তুলনায় কিছুই না – জাপার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ কে হাসিনা যে উপহার দিয়ে ঐ নেতাকে কিনে পকেটে রেখেছিল সেটা ছিল ১০০ মেগাওয়াতের এক রেন্টাল বিদ্যুৎ। ফলে কাপ্তাই বাধ এখন ভেঙ্গে দিলেও বাংলাদেশের বিদ্যুতে এর প্রভাব নাই। আর পানি কমে যাওয়াতে এর উতপাদনও এখন তেমন নয়; খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি! কিন্তু কেন বাংলাদেশে এসব কারেকশনে যাবে? আর সবচেয়ে বড়কথা কার সাথে নিগোশিয়েশন করে সব বিতর্ক ও বিবাদ মিটিয়ে ফেলবে??? কারণ, পাহাড়ী নেতারা জুম্মল্যান্ডের স্বপ্নে বিভোর আর ইন্ডিয়ার পুতুল হয়ে থাকার কবলে থাকতেই বেশি পছন্দ।

যেকথা বলছিলাম পাহাড়িদের এতদিনে লাভ-লোকশান কী?
তাদের যে ভুমি সমস্যা এটা আগে কোনদিনই ছিল না। এখানে আগে মানে? আগে মানে ১৯৭৫ সালের আগে। সোজাকথায়, ১৯৬২ সালে বাধ দেওয়ার সমস্যা মিটাতে গিয়ে এবার তারা নিজ চাষাবাদের জায়গা জমি হারিয়েছে বা বিতর্কিত হয়ে আছে। অর্থাৎ সমস্যা মিটবার বদলে বেড়েছে আর তা অনিশ্চিত হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ইন্দিরার প্ররোচনায় বাংলাদেশ ত্যাগ করে ফরে ভারতীয় ট্রেনিং ও অস্ত্রে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শশস্ত্র আক্রমণ এর পথে তারা গিয়েছে তাতে ইন্ডিয়ার হয়ত লাভ হয়েছে। আর পাহাড়িদের হয়েছে জমি হারানোর ক্ষতি। আবার কাজ ফুরিয়ে গেলে ইন্ডিয়া তাদেরকে বাংলাদেশের হাতে ডাম্প করে দিয়ে গেছে ১৯৯৭ সালে! নিচা হয়ে তাদের চুক্তি করতে হয়েছে। এরপর নিয়মিত তারা বাংলাদেশের কাছে ভাল দায়ীত্বশীল অপরপক্ষ কখনই হতে পারে নাই বা চায় নাই মূলত ভারতের পুতুল হয়ে থাকার কারনে। ভাল নেতৃত্ব না হবার কারণে, ভুয়া স্বপ্ন দেখা আর ভারতের পুতুল হয়ে আয়েসী জীবনের নেতৃত্ব। এটা খুবই সম্ভব পাহাড়িদের ভুমিসমস্যা একবছরের মধ্যে আইনি দলিল হাতে ধরিয়ে মীমাংসা করে ফেলা, একধণের স্বায়ত্বশাসন, কালচারাল বৈশিষ্ট সংরক্ষণ এবং সর্বোপরি মাত্র ১৫ লাখের মত লোকেদেরকে বাকি ১৬-১৮ কোটি সমতল বাসিন্দাদের সাথে পণ্য-বিনিময় সম্পর্ক গড়ে তুললে কাদের বেশি লাভ হবে? পনেরো লাখ লোক ১৬ কোটি লোকের বাজার পাবে। কিন্তু কোন দায়ীত্বশীল অপরপক্ষ না থাকলে এর কিছুই হবে না। হচ্ছে না।

এত কিছু সংঘাতের মাঝেও তারা কেবল চাকমা জনগোষ্ঠির দিকে তাকায় তাহলে বুঝবে শিক্ষা ও পেশায় দক্ষ জনগোষ্ঠি হিসাবে তাদের উত্থান ও বিকাশ বাকি সকল পাহাড়িদের কাছে ঈর্ষণীয়! এক ৫% কোটার সুবিধা থেকেই তারা স্যাচুরেটেড। ইতোমধ্যেই পাহাড়ি কৃষিপণ্য ঢাকার বাজারে এক বিরাট ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে! সেজন্য আলাপ-আলোচনা দরকার – দায়ীত্বশীল অপরপক্ষ দরকার! কোথায় সেটা?

সেই বাধের ইস্যু এখন সব পক্ষের কাছে অপ্রয়োজনীয়, কোন ইস্যুই না। কোন ফোকাস-ই নয়। ১৯৭৫ সালে ইন্ডিয়ায় যাওয়া এই সিদ্ধান্ত তাদের যে নেতৃত্ব নিয়েছিল তারা কী এর দায়দায়ীত্ব নিবে? কিন্তু তা নতুন যেসব ক্ষত তৈরি হয়েছে ক্রমাগত একালের ফোকাস সেখানেই। এর মানে এককথায় বললে, ১৯৭৫ সালের আগেও তারা এখনকার মত এত ক্ষতিকর ও কঠিন জীবনে ছিল না! তাহলে ইন্ডিয়ায় যাওয়া- সশস্ত্র সংগ্রাম এসবের এই সিদ্ধান্তের মুল্যায়ন কী, পিছন ফিরে দেখার হিম্মত কী তাদের হবে?

পাহাড়ি নেতারা ভেবেছিল হাসিনা তাদের ত্রাতা কারণ হাসিনা জিয়াউর রহমান বা আমাদের আর্মির বিরুদ্ধে তারা একে অপরকে ব্যবহার করতে পারবে। এখান থেকে পাহাড়ি ইস্যুতে প্রগতিবাদীর প্রবেশ ঘটেছিল। কিন্তু ২০১০ সালের হাসিনা? তিনি এই মামার বাড়ির আব্দারের মত আদিবাসী বলে ডেকে বাংলাদেশ নিজেই নিজ দেশ উদ্বাস্ত বা মাইগ্রেন্টের পরিচয় নিবে – এটা কী হাসিনা করতে রাজি হয়েছিল?

নিচে ২০২২ সালের এক নোটিশটা পড়ে দেখতে পারেন

আদিবাসী - আদিবাসী বলা না বলা – কেন ও কীসের ভিত্তিতে - সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ

এককথায় পাহাড়ি নেতৃত্ব নিজেও নিজেদেরকে রিভিউ-মুল্যায়ন করতে অক্ষম। বরং যেন তারা প্রগতিশীলতার নামে হিন্দুত্ববাদী বা ইন্ডিয়ার হাতের পুতুল হয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। অথচ পাহাড়ীদের অর্জন কী? তারা এতদিনে আগিয়েছে নাকি ক্রমশ আরো পিছয়ে গেছে???
পাহাড়ি নেতৃত্বের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা ছাড়াই, বর্তমানের ব্বাংলাদেশে যে ডিস্টার্বেন্স তৈরি এটাও পুরাটাই ইন্ডিয়ার পকেটেই যাবে! কিন্তু কে এসবের মুল্যায়ন করবে????

লেখকঃ
গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক

Advertisements