আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন মাসুদ?
Advertisements

পাঞ্জশির উপত্যকাকে তালেবান বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার কথা ভাবছেন আহমদ মাসুদ। আর এর মাধ্যমে পুরো আফগানিস্তানের ওপর তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যুদ্ধ করার মতো সম্পদের অভাব এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন না থঅকায় তিনি তালেবানের সাথে ‘নিষ্পত্তিতে’ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। টেলিগ্রাফের উদ্ধৃতি দিয়ে বেশ কয়েকটি পত্রিকা এ খবর প্রকাশ করেছে।

আফগান মুজাহিদ আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদ ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ মাসুদ কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জশিরে তালেবানের বিরুদেধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে কেবল এই প্রদেশই ছিল তালেবানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এখন সালেহ ও মাসুদ আত্মসমর্পণ করলে পুরো আফগানিস্তানের ওপর তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

উল্লেখ্য, সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তানে অভিযান চালিয়েছিল, তখনো পাঞ্জশির ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এছাড়া ১৯৯০-এর দশকে তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনো এই এলাকার ওপর তারা কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পারেনি।

মাসুদ গতকালও বলেছিলেন, তিনি আত্মসমর্পণ করবেন না। তিনি জোর দিয়ে বলেছেনে, তিনি ও তার বাহিনী মৃত্যুবরণ করবেন, কিন্তু তবুও আত্মসমর্পণ করবেন না।

কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সবকিছু পাল্টে গেছে। তালেবান বাহিনী আরো কাছাকাছি চলে আসায় মাসুদের পক্ষে আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কিছুই করার নেই। ৩২ বছর বয়স্ক মাসুদ এখন তার ব্যক্তিগত সম্মান নিশ্চিত করতে পারলেই তালেবানের হাতে পাঞ্জশির তুলে দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মাসুদের এক উপদেষ্টা বলেন, পাঞ্জশির তালেবানকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। তারা বিশাল বাহিনী। বর্তমান অবস্থা ১৯৮০-এর দশকের মতো নয়। তালেবানের হাতে যুদ্ধে পারদর্শী সৈন্যবাহিনী রয়েছে।

সোমবার তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ দাবি করেছিলেন, তালিব যোদ্ধারা পাঞ্জশির ঘিরে ফেলেছে। শিগগিরই ওই এলাকা তাদের হাতে আসবে। তার আগে কাবুলের সুরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত তালেবান নেতা তথা হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা খলিল হাক্কানি বলেন, ‘আহমদ মাসুদের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি আফগানিস্তানের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্র সংবরণে সায় দিয়েছেন।’ ৩২ বছরের মাসুদও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলে, রক্তপাত এড়াতে তালেবানের সাথে তিনি আলোচনায় রাজি। যদিও এর মধ্যেই পাঞ্জশির, বাঘলান, পারওয়ানসহ কয়েকটি প্রদেশে তালেবান এবং নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের তীব্র লড়াইয়ের খবর সামনে এসেছিল।

মাসুদের বাবা আহমদ শাহ মাসুদ প্রায় আড়াই দশক আগে তালেবানবিরোধী নর্দার্ন অ্যালায়্যান্স-এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই সময়ও পাঞ্জশিরের দখল নিতে পারেনি তালেবান। ২০০১-এ টুইট টাওয়ার হামলার দু’দিন আগে সাংবাদিকের ছদ্মবেশে আল কায়দার মানববোমা হামলায় তিনি নিহত হন। আহমদের বাহিনী এ বার উত্তর-মধ্য আফগানিস্তানে তালেবানকে শক্ত প্রতিরোধের মুখে ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল।

পাঞ্জশির উপত্যকায় এখনো মাসুদ অনুগত ৬,০০০ তাজিক যোদ্ধা রয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর। এ ছাড়া কয়েক হাজার আফগান সেনা এবং উজবেক ওয়ার লর্ড রশিদ দোস্তমের অনুগত মিলিশিয়া যোদ্ধারাও ছিল তালেবান প্রতিরোধের লড়াইয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাসুদ অস্ত্র সমর্পণ করলে গোটা আফগানিস্তানেই তালেবান নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ হবে।

Advertisements