অসমে একমাসে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ৪টি বেসরকারি মাদ্রাসা
Advertisements

ভারতের অসমে ফের আরও একটি মাদ্রাসা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত একমাসের মধ্যে বিজেপিশাসিত রাজ্যটিতে ৪ টি বেসরকারি মাদ্রাসা ভেঙে ফেলা হল। এবার অবশ্য প্রশাসনিক বুলডোজার নয়, সাধারণ মানুষের একাংশের পক্ষ থেকে ওই মাদ্রাসা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) অসমের গোয়ালপাড়া জেলার পাখিউড়া চর এলাকার একটি মাদ্রাসা গুঁড়িয়ে দেয় স্থানীয় জনতা। পুলিশের দাবি-এখানে দুই বাংলাদেশি জেহাদি অবস্থান করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত ছিল। জালালউদ্দিন শেখ নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে আলকায়েদার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গত আগস্টে গ্রেফতার করেছিল। তিনিই নাকি ওই দুই বাংলাদেশিকে মাদ্রাসাটিতে নিয়োগ দিয়েছিলেন। অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম এবং জাহাঙ্গীর আলম অবশ্য পলাতক রয়েছে। গোয়ালপাড়া পুলিশ বলেছে, জেহাদি কার্যকলাপের ঘাঁটি হওয়ার জন্য পাখিউড়া চরে মাদ্রাসা এবং এর পাশের ভবনটি স্থানীয় জনতা গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

গোলাপাড়ার পুলিশ সুপার ভিভি রাকেশ রেড্ডি বলেন, ‘এই এলাকার মানুষ ভারতবিরোধী ও জিহাদি কার্যকলাপের অভিযোগে আন্দোলন করছিল। এর আগে একজন আলেম জালালুদ্দিন শেখকে জিহাদি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল।’ রেড্ডি আরও বলেন, ‘এই মাদ্রাসায় দু’জন লোক পড়াতেন, যাদেরকে শিক্ষক বলা হয়েছিল, কিন্তু পরে দেখা গেছে যে তারা দেশবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত ছিল। রেড্ডি জানান, তাদের নাম আমিনুল ইসলাম ওরফে উসমান ও জাহাঙ্গীর আলম, যারা কয়েকটি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাদের তৎপরতার খবর জানাজানি হলে তারা পালিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে যে তাদের এলাকাকে দেশবিরোধী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল, এবং তারা এ ব্যাপারে কিছু জানতেন না। মাদ্রাসা ধ্বংস করা জনসাধারণের কাছ থেকে একটি শক্তিশালী বার্তা ছিল যে তারা দেশবিরোধী উপাদানগুলোর বিরোধী এবং তারা এ ধরনের কার্যকলাপে শামিল হতে চায় না।’

এসপি বলেন, ‘একিউআইএস’-এর গোয়ালপাড়া মডিউল ভাঙার পর, আমরা ক্লু পেয়েছি যে বরপেটা, মরিগাঁও এবং গোয়ালপাড়া মডিউল পরস্পর সংযুক্ত। মাদ্রাসায়ও একই ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলত। আমরা মনে করি এই সন্ত্রাসী স্লিপার সেল মডিউলগুলো সম্ভবত একই গ্রুপের লোকদের দ্বারা প্রশিক্ষিত হয়েছিল কারণ অসমের বিভিন্ন অংশে একই ধরনের ঘাঁটি তৈরি করা হচ্ছিল।’

অসমে এর আগে কথিত জেহাদি যোগ থাকার অভিযোগে সরকারিভাবে ৩টি মাদ্রাসা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৪ আগস্ট মরিগাঁও জেলার জামিউল হুদা মাদ্রাসা সরকারি কর্মকর্তারা গুঁড়িয়ে দেন। এর পরে ২৯ আগস্ট বরপেটা জেলার হাওলিতে জামিউল হুদা একাডেমি মাদ্রাসা এবং ৩১ আগস্ট বঙ্গাইগাঁও জেলার মারকাজুল মা-আরিফ কারিয়ানা মাদ্রাসা ভেঙে ফেলা হয়। জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে রাজ্যটিতে সম্প্রতি ইমাম এবং মাদ্রাসা শিক্ষকসহ ৩৭ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

এদিকে, অসমের সাবেক মন্ত্রী ও বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদ বলেছেন, ‘অসমে কোনও জেহাদি নেই, কোনও বাংলাদেশিও নেই।’ তার ওই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিজেপির সংখ্যালঘু নেতা আমিনুল হক লস্কর বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদকে একজন জেহাদি ও বাংলাদেশের এজেন্ট বলে অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। সিদ্দেক আহমেদ অবশ্য বলেছেন, কোথায় জেহাদিরা? যদি অস্ত্র সম্বলিত জেহাদি থাকে তাহলে সরকার তাদের বের করুক।

বিজেপির সংখ্যালঘু নেতা আমিনুল হক লস্কর মাদ্রাসা ভাঙার বিষয়ে সাফাই দিয়ে বলেছেন, রাজ্য সরকার সব মাদ্রাসা ভেঙে দেয়নি, শুধুমাত্র সেই মাদ্রাসাগুলো ভেঙেছে, যেখানে জেহাদি কার্যকলাপ চলছিল।

Advertisements