বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও গুমের ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের আদালত গঠন করা হয়েছে। আজ (শুক্রবার) সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাতে দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনেক বিষয়েই তদন্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সেনাপ্রধান আরও বলেছিলেন, প্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। তদন্ত প্রক্রিয়াটি একটু ধীর গতিতে চলছে। এখানে বেশকিছু বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আজ (শুক্রবার) সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন আওয়ামী সরকারের সময় গুম ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। গুম ও নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গুমের শিকার ও নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা এ মানববন্ধনে অংশ নেন। প্রথমবারের মতো গুম ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা কোন খোলা জায়গা বা বড় পরিসরে তাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দাঁড়াতে পেরেছেন।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের ছবি, ব্যানার-পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ান স্বজনরা। গুম হওয়া ব্যক্তি যারা ফিরে এসেছেন তারা তাদের ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। এসময় ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান তারা।
মানববন্ধনে ১১ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহেনা আক্তার মুন্নি বলেন, ‘আমার ছোট ভাই সূত্রাপুর থানার ছাত্রদল সভাপতি ছিল। প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে পল্লবী থেকে তাকে তুলে নিয়ে গেছে। তাদের সবার হাতে অস্ত্র ছিল। আজ ১১ বছর কোনো খোঁজ পাইনি’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১১ বছর আমাদের আনন্দ ও উৎসব নেই। বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিকদের গুম করে নিয়ে যাবে, এতবড় সাহস হাসিনাকে কে দিয়েছে?’
এ সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হাজারবার ফাঁসি চান তিনি।
মানববন্ধনে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুমের শিকার ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান চেয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।
গতকাল (বৃস্পতিবার) গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সনদে স্বাক্ষর করেন।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য বিশেষ করে মানবাধিকার কর্মীদের জন্য একটি বড় মাইলফলক। ৭০০ জনের ওপরে মানুষ এখন পর্যন্ত গুমের কারণে নিখোঁজ হয়ে আছেন। আর যেন কেউ কখনো নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে কোনো বাহিনীকে দিয়ে কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে নাগরিকদের গুম করতে না পারে। এ জন্য এই সনদে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখন প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার গ্রহণ করা হবে।’