তালেবান জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ গঠনের পরিকল্পনা করছে।
শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তালেবান সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে এমন খবরই জানিয়েছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
খবরে জানানো হয়, তালেবান নেতৃত্ব আফগানিস্তানের সব জাতিগোষ্ঠীর নেতাদের নিয়ে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে।
তালেবান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন সরকারের অংশ হিসেবে প্রায় ১২ নেতার নাম বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক এই সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
আলজাজিরাকে তালেবান সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে ‘আমিরুল মুমিনিন’ (মুমিনদের নেতা) আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাতের নেতৃত্ব দেবেন।
সূত্র জানায়, ভবিষ্যতের সরকার গঠন ও মন্ত্রীদের মনোনয়নের জন্য সর্বোচ্চ নেতৃত্বের এক কাউন্সিল গঠন করা হবে।
ইতোমধ্যেই আফগানিস্তানে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর তালেবানের পক্ষ থেকে দেশটির বিচার, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য ও রাজধানী কাবুল বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আলজাজিরাকে তালেবান সূত্র জানিয়েছে, সরকার গঠনের আলোচনায় অংশ নিতে ইতোমধ্যেই তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদার কাবুলে অবস্থান করছেন। অপরদিকে দলটির প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের ছেলে ও সামরিক শাখার প্রধান মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব কান্দাহার থেকে কাবুলে এসেছিলেন।
সূত্র জানায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ পশতুন জনগোষ্ঠী ছাড়াও দেশটির তাজিক ও উজবেক জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে সরকার গঠন করা হবে।
সরকার গঠনে নতুন মুখ নিয়ে আসার পরিকল্পনা তালেবান নেতৃত্ব করছে বলে সূত্রটি জানায়।
এদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও আফগানিস্তানের হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রিকন্সাইলেশনের সাবেক প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহকে সরকারের অংশ হিসেবে নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তালেবান নেতৃত্বকে চাপ দিচ্ছে বলে আলজাজিরাকে তালেবান সূত্রটি জানায়।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার জেরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় আফগানিস্তানের তৎকালীন তালেবান সরকার পিছু হটে।
তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলে দেশটিতে।
দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে দেশটি থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় ওয়াশিংটন। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়।
চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্যে পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাতে শুরু করে তালেবান। মে থেকে অভিযান শুরুর পর সাড়ে তিন মাসের মাথায় ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলের অধিকার নেয় তালেবান যোদ্ধারা।
সূত্র : আলজাজিরা