১১ শতাংশের মালিকানা
Advertisements

কভিড-১৯ মহামারীতে বিপর্যস্ত এক পরিস্থিতিতে পড়ে বিশ্ব। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আরোপ করা বিধিনিষেধে পুরো অর্থনীতিজুড়ে দেখা দেয় স্থবিরতা। চাকরি হারিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয় লাখ লাখ মানুষ। এ অবস্থায়ও আয় বেড়েছে অতিধনীদের। ফুলেফেঁপে উঠেছে তাদের সম্পদের পরিমাণ। নতুন একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর বৈশ্বিক সম্পদে বিলিয়নেয়ারদের অংশ রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।

দ্য ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাবের বার্ষিক বৈষম্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অন্তত ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার সম্পদ থাকা দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শীর্ষ ধনীর হাতে বৈশ্বিক মোট সম্পদের ১১ শতাংশের মালিকানা রয়েছে। এ অতিধনীদের সংখ্যা ৫ লাখ ২০ হাজার। বৈশ্বিক সম্পদে তাদের অংশ গত বছরের চেয়ে ১ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে বৈশ্বিক সম্পদে বিলিয়নেয়ারদের মালিকানা ১৯৯৫ সালেও ১ শতাংশ ছিল। যেখানে ২০২১ সালে তাদের অংশ ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

কভিডজনিত বিধিনিষেধে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিধ্বস্ত অবস্থা পার করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তায় বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো বিপুল পরিমাণ প্রণোদনার জোগান দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেই অতিধনীদের সম্পদ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের দেয়া প্রণোদনার অর্থ শেয়ার ও রিয়েল এস্টেটের মূল্যকেও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে দিনশেষে সেগুলো শীর্ষ আয় করা ব্যক্তিদের সম্পদে গিয়েই যুক্ত হয়েছে।

এ প্রতিবেদনের ভূমিকা লিখেছেন দারিদ্র্য নিয়ে গবেষণার জন্য ২০১৯ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়া অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্তার দুফলো। তারা বলেছেন, সম্পদ হলো ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক লাভ এবং ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা ও প্রভাবের প্রধান উৎস। সুতরাং এগুলো প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষাই বৈষম্য আরো বাড়িয়ে তুলছে। আমরা এমন একটি বিশ্বে বসবাস করছি, যেখানে অতিধনী অল্প কিছু মানুষের হাতে রয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষমতার বড় একটি অংশ।

একই সময়ে অর্থনৈতিক বৈষম্যও বেড়েছে। বিশেষ করে শক্তিশালী সামাজিক প্রতিশ্রুতি না থাকা দেশগুলোয় বৈষম্য ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি থেকে সঞ্চিত সব অতিরিক্ত সম্পদের ৩৮ শতাংশের দখল নিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। যেখানে নিচের ৫০ শতাংশ মানুষ পেয়েছে এ সম্পদের মাত্র ২ শতাংশ। কাজের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী মোট আয়ে নারীদের অংশ এখনো ৩৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। এটি ১৯৯০ সালের ৩০ শতাংশ থেকে বাড়লেও পুরুষদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

সমীক্ষাটিতে বলা হয়েছে, কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব মোকাবেলায় মার্কিন নাগরিকদের সহায়তা করার জন্য বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা দেয় দেশটির সরকার। নাগরিকদের পকেটে এ নগদ অর্থ জমা হওয়ায় দেশটিতে বৈষম্য কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।

গবেষণাটির প্রধান লুকাস চ্যান্সেল বলেছেন, কভিড সংকট অতিধনী ও বাকি জনসংখ্যার মধ্যে বৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। তবু ধনী দেশগুলোয় সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে দারিদ্র্যের ব্যাপক বৃদ্ধি রোধ করা গেছে। যদিও দরিদ্র দেশগুলোয় এমনটা ঘটেনি। মহামারীটি দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামাজিক রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা তুলে ধরেছে।

১৯৯০ দশকের পর থেকে বেশির ভাগ দেশেই সম্পদের বৈষম্য বাড়ছে। বর্তমানে বৈশ্বিক সম্পদের বৈষম্য প্রায় একই স্তরেই রয়ে গেছে, যা ২০ শতকের প্রথম দিকে পশ্চিমা দেশগুলোয় শীর্ষে ছিল।

প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, সম্পদের বৈষম্যের সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষ্যগুলোর একটি বড় সম্পর্ক রয়েছে। ধনী দেশগুলোয় জনসংখ্যার দরিদ্রতম অর্ধেক নাগরিক এরই মধ্যে ২০৩০ সাল নাগাদ জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রার কাছাকছি রয়েছে। তবে বাকি ধনী অর্ধেক নাগরিক এ লক্ষ্যের বাইরে রয়েছে।

প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, নিঃসরণের ক্ষেত্রেও এমন বৈষম্য পরামর্শ দেয় যে ধনীদের জলবায়ু নীতিগুলোয় আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। এখন পর্যন্ত কার্বন করের মতো নীতিগুলো প্রায়ই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের গোষ্ঠীগুলোর ওপর অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে ধনী গোষ্ঠীগুলো তাদের ভোগের অভ্যাস অপরিবর্তিত রেখেছে।

সূত্রঃ বণিক বার্তা

Advertisements