![২৫ আফগানকে হত্যার স্বীকারোক্তি প্রিন্স হ্যারির; বিচার হবে কি? ২৫ আফগানকে হত্যার স্বীকারোক্তি](https://i0.wp.com/bhawalbarta.com/wp-content/uploads/2023/01/২৫-আফগানকে-হত্যার-স্বীকারোক্তি-প্রিন্স-হ্যারির.jpg?fit=900%2C489&ssl=1)
ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের ছোট ছেলে হ্যারি আফগানিস্তানে ২৫ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। প্রিন্স হ্যারি বেশ কিছু দিন ধরেই রাজপরিবার ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। তার আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হবে। সেই বইয়েই তিনি আফগানিস্তানে মানুষ খুনের কথা স্বীকার করেছেন।
প্রিন্স হ্যারি দুই বার আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে এসেছেন। প্রথমে ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মাঝামাঝিতে স্থল বাহিনীর সদস্য হিসেবে এবং ২০১২ ও ২০১৩ সালে অ্যাটাক হেলিকপ্টার অ্যাপাচি’র পাইলট হিসেবে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েছেন। হ্যারি বলেছেন তিনি তালেবানদের হত্যা করেছেন। তবে তালেবানের প্রভাবশালী নেতা আনাস হাক্কানি বলেছেন, তারা যাচাই করে দেখেছেন, প্রিন্স হ্যারি যে দিনগুলোতে ২৫ তালেবানকে হত্যার কথা উল্লেখ করেছেন, সেই দিনগুলোতে হেলমান্দে তালেবানের কেউ মারা যায়নি।, কাজেই এটা স্পষ্ট বেসামরিক এবং সাধারণ মানুষকে তিনি হত্যা করেছেন।
আফগানিস্তানে আমেরিকা ও ব্রিটেনের হামলার খবরাখবর সংগ্রহ করা সাধারণ সাংবাদিকদের পক্ষে ছিল বেশ কঠিন, কেবল তারা যেসব তথ্য প্রকাশ করত সেগুলো সম্পর্কেই জানা যেত। এরপরও নানাভাবে কিছু তথ্য-প্রমাণ ফাঁস হয়ে গেছে। স্বাধীন সূত্রগুলোর তথ্য মতে, ব্রিটিশ সেনারা আফগানিস্তানে মানুষ হত্যার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল। এ কারণে তারা একেক জন মানুষকে হত্যার পর তার আঙুল কেটে নিজের কাছে রেখে দিত এবং নিজের ঘোষিত সংখ্যার প্রমাণ হিসেবে আঙ্গুলগুলো প্রদর্শন করত।
আফগানিস্তানের প্রখ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক হোসেইনি মাজারি বলেছেন, ‘আমেরিকা ও ব্রিটেনের কাছে আফগানদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। তারা আফগানিস্তানে বিনোদনের অংশ হিসেবে মানুষ খুন করত। তারা সামরিক প্রশিক্ষণের জন্যও আফগানদের চাঁদমারি হিসেবে ব্যবহার করত।’ তবে এখনও আফগানিস্তানে দখলদারদের ভয়াবহ নির্মমতা ও বিপর্যয়ের চিত্র পুরোপুরি প্রকাশ হয়নি বলে জানান এই বিশ্লেষক।
অতীত ইতিহাস বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায়, ব্রিটিশ বাহিনী যেখানেই গেছে সেখানেই বিনোদনের অংশ হিসেবে মানুষ হত্যা করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ও এমন অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আফগান যুদ্ধে অংশ নিয়ে হ্যারির মতো এত গুরুত্বপূর্ণ ব্রিটিশ ব্যক্তিত্ব যেখানে নির্মমভাবে সাধারণ মানুষ হত্যা করেছেন এবং অবলীলায় এখন তা স্বীকার করছেন সেখানে সাধারণ সেনাদের নির্মম আচরণ যে আরও কত ভয়াবহ পর্যায়ে ছিল তা সহজেই অনুমেয়।
আফগানিস্তানে ২০ বছরের অন্যায় দখলদারি ও হত্যা-নির্যাতনের পরও মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো সাড়া-শব্দ নেই। এ কারণেই দরিদ্র দেশগুলোর মানুষদের নিয়ে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর এমন খেল-তামাশা থামছে না। তাদের থামাতে বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। এ কারণে আফগানিস্তানে ব্রিটিশ ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন দখলদার বাহিনীর দখলদারি ও হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখন সময়ের দাবি।