আফগানিস্তানের শিয়া মুসলমানরা সেদেশের নতুন সরকারে তাদের অংশগ্রহণ বা প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে দেশটির মধ্যপ্রদেশের শিয়া মুসলমানদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা জানান। কারজাই বলেন, শিয়া মুসলিম নেতারা তার সাথে দেখা করে আফগানিস্তানের নতুন মন্ত্রিসভায় অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর তাদের মধ্যে এ সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগানিস্তানের নতুন মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেয়ার জন্য শিয়া জনগোষ্ঠীর আহ্বান বহু ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর দেশ আফগানিস্তানে স্বাভাবিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য আইন অনুযায়ী যে কোনো শাসন ব্যবস্থায় সব ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের অংশ গ্রহণের অধিকার রয়েছে এবং সেই সুযোগ তাদের দেয়া উচিত। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই আফগানিস্তানের শিয়া জনগোষ্ঠীও প্রত্যাশা করে তালেবান দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর তারা সব ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি যেন তারা পালন করে।
আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ হচ্ছে শিয়া মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং সেদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাদের বিরাট প্রভাব রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা নতুন সরকারে প্রতিনিধিত্ব করার প্রত্যাশা করে। প্রায় সপ্তাহ খানিক আগে আফগানিস্তানের শিয়া ধর্মীয় নেতাদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সম্মেলনে তারা আফগানিস্তানে সবাইকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠন ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে তারা দেশটির নতুন সংবিধানে শিয়া মুসলমানদের জাফরি মাজহাবকে স্বীকৃতি দিতেও তালেবানের প্রতি আহ্বান জানান।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তালেবানের যে ধর্মীয় ও আদর্শিক চিন্তাবিশ্বাস রয়েছে এবং শিয়াদের ব্যাপারে তাদের অতীত বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের আলোকে বলা যায় ওই দেশটির শিয়া মুসলমানদের দাবি দাওয়ার প্রতি তারা কতটুকু সাড়া দেবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
এদিকে, আফগানিস্তানের মাজার-ই শরিফে সংঘর্ষের খবর পেয়ে একদল তালেবান কর্মকর্তা অপ্রত্যাশিতভাবে ওই শহর সফরে গেছেন। মোল্লা ফাজেল, জাবিউল্লাহ মুজাহিদ, মৌলভি ওয়াসিকুল্লাহ, ক্বারি দ্বীন মোহাম্মদ ও মোল্লা আব্দুস সালাম হানাফি মাজার-ই শরিফে সংঘর্ষের কারণ অনুসন্ধানের জন্য ওই শহরে গেছেন। গতকাল রাতে সেখানে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। যদিও তালেবান দাবি করেছে সশস্ত্র ডাকাত দল ও তালেবানের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে কিন্তু কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে খোদ তালেবানের মধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বিভিন্ন খবরে জানা গেছে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে সশস্ত্র তালেবানের মধ্যেই প্রতিযোগিতা ও বিরোধ দেখা দিয়েছে এবং এ বিরোধের জের ধরে মাজার-ই শরিফে সংঘর্ষ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণেই তালেবান কর্মকর্তারা দ্রুত ওই এলাকায় ছুটে গেছেন সংঘর্ষের কারণ জানার জন্য।
এদিকে, আফগানিস্তানে নতুন ও স্থায়ী সরকার গঠনে বিলম্ব হওয়ায় এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় পুলিশ ও সেনা সদস্যদের ব্যবহার করা থেকে তালেবান বিরত থাকায় ভবিষ্যত নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে আতঙ্ক ক্রমেই বাড়ছে।
পার্সটুডে