চলমান করোনা মহামারিতে সর্বাত্মক লকডাউনের কবলে পড়ে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষরা করোনা সংক্রমণের আতঙ্কের চেয়েও আয়-রোজগারবিহীন কষ্টকর পরিস্থিতিতে বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) যৌথ গবেষণায় জানা গেছে, মোট শ্রমশক্তির তিন শতাংশেরও বেশি লোক কর্ম হারিয়েছেন। প্রায় দেড় কোটি লোক মহামারির প্রভাবে নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান করোনার ধাক্কা সামাল দিতে না পেরে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। শহর এলাকায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে এমন ১০০ জনের মধ্যে চাকরি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে আছে ৬৯ জন।
শনিবার আয়োজিত ওয়েবিনারে সিপিডি’র গবেষণা বিষয়ক পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
সিপিডি’র গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, চাকরি হারানোদের মধ্যে ৬.৭ শতাংশ শহরাঞ্চলে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। ২০২১ সাল শেষ হতে হতেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চসংখ্যক কর্মহীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সিপিডি’র গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে দেশীয় শিল্প, নির্মাণ, পরিবহন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসা, খাদ্য ও ব্যক্তিগত সেবা। মধ্যম পর্যায়ে ঝুঁকিতে রয়েছে, আর্থিক খাত, অভ্যন্তরীণ পরিষেবা, আবাসন ও শিক্ষা খাত। এ ছাড়া কম ঝুঁকিতে রয়েছে কৃষি, স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগ খাত। ফলে শহর অঞ্চলের ৬৯ শতাংশ কর্মজীবী মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর গ্লোবাল ওয়ার্কার্স রাইটস-এর সভাপতি আবুল হোসাইন রেডিও তেহরানের কাছে করোনা আর লকডাউনে পর্যুদস্ত বেকার ও অসহায় দিনমজুরদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বেকার, দিনমজুর ও অসহায় মানুষ বিশেষ করে শহুরে গরীবদের এ রমজানে রাজনৈতিক পক্ষপাতমুক্ত বিশেষ সাহায্যে প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে, এশিয়া ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, করোনায় দেশের নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে রয়েছেন। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
এ ছাড়া, বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের আয় কমেছে ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকায় ৪২ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ৩৩ শতাংশ। বেতননির্ভর মানুষের আয় কমেছে ৪৯ শতাংশ।
সিপিডি আয়োজিত ওয়েবিনারে শ্রমিক নেতা হামিদা হোসেন বলেছেন, কঠোর লকডাউনের মধ্যে পোশাক কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শ্রমিকদেরকে কারখানায় আনার জন্য পরিবহণের ব্যবস্থা করতে হবে, কিন্তু কারখানা মালিকরা অধিকাংশই পরিবহনের ব্যবস্থা করেননি। এতে শ্রমিকরা দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে কারখানায় যাওয়া আসা করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের মধ্যে শারীরিক এবং সামাজিক দূরত্ব নেই, একসঙ্গে অনেকেই পায়ে হেঁটে আসছেন, এতে তাদের কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগহারে বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, প্রতিটি শ্রমিককে বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করা হোক। একই সঙ্গে শ্রমিকদেরকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হোক।#
পার্সটুডে