“খবর লেখার কাজে কর্মরতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এই খবরটা যাচাই-বাছাই করে পরিবেশন করুন, আমি বনের গাছে একটি আচরো দেইনি।” কথাগুলো বন মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনপ্রাপ্ত একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’ ওয়াল থেকে নেওয়া।
একটি বন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় দীর্ঘদিন হয়রানির পর গাজীপুরের অনুসন্ধানী সাংবাদিক মোজাহিদ গত ২৫ শে ফেব্রুয়ারি দুপুরে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন পান। গত ২১ নভেম্বর, ২০২০ (শনিবার) দৈনিক যোগফল পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘পট্টি মেরে’ বন মামলার আসামি বদলে ফেলেন বিট কর্মকর্তা আয়ুব আলী– শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই সংবাদে বিট কর্মকর্তা আয়ুব আলী শেখ ও রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টার মো. হারুন-অর-রশিদ খানের বক্তব্য নেন দৈনিক যোগফলের সাবেক স্টাফ রিপোর্টার মো. মোজাহিদ। জানা যায় দৈনিক যোগফলে প্রকাশিত সেই সংবাদটির সম্পূর্ণ তথ্য প্রমাণ যোগফল কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
পোস্টে জানা যায়, গত ৫ ই মার্চ শ্রীপুর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটের বনাঞ্চলের ৪৯ নম্বর কাপিলাতলী মৌজার গেজেটভুক্ত সাত নম্বর সিএস দাগে ১০-১২ জন ব্যক্তির বনভূমিতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে আকাশমনি গাছ শাল গাছের কপিস কর্তন করে ইটের সড়ক নির্মাণের অপরাধে রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিট কর্মকর্তা মো. আয়ুব আলী শেখ বাদি হয়ে একটি বন মামলার (মামলা নম্বর ০৯/রাজ পূর্ব /২০১৯-২০২০) এজাহার করেন। ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ পিস ইট, তিনটি আকাশমণি গাছের বল্লী, এক বোঝা গজারী ছাটি কপিচ, একটি গাইতী, দা ও করাত জব্দ করে জব্দ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জব্দ করা মাল নোট বইয়ের ৫৮/২৬৪৯ এ লিখে সাক্ষিদের স্বাক্ষর নিয়ে অফিস হেফাজতে নেওয়া হয়।
অনুসন্ধানী সাংবাদিক মোজাহিদ তার পোস্টে আরো লিখেন, পরে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১২০ নম্বর পত্রযোগে ১৫ মার্চ মামলার এজাহারসহ প্রয়োজনীয় নথি পাঠানো হয় রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে। বিটের অপরাধ বিবরণী রেজিস্টারের পাশাপাশি রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের অপরাধ বিবরণী রেজিস্টারেও মামলাটির যাবতীয় তথ্য লেখা হয়। অথচ পরে ওই মামলাটির এজাহার বাতিল করে এবং আসামিদের নাম পরিবর্তন করে একই মামলা নম্বরে ভিন্ন আর একটি বন মামলা দায়ের হয়েছে গাজীপুর বন আদালতে। মামলা নম্বর একই রয়েছে। কেবল আসামিদের নামের বদল হয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে অপরাধের ধরন বদলানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির সংবাদটি প্রচারের পর প্রাথমিক তদন্ত শেষে ওই বিট কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করে বন বিভাগ। তিনি এখন সিলেটে কর্মরত আছেন। এবং বদলির সম্ভাবনা ও দুর্নীতির প্রমাণ হলে চাকরির ক্ষতি হতে পারে এমন সন্দেহে তিনি মামলা দিয়েছেন বলে সাংবাদিক মোজাহিদ তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন। মুজাহিদের আইনজীবী এডঃ মোয়াজ্জেম হোসাইন এক ভিডিও বার্তায় বলেন, সারা দেশে সাংবাদিকদের উপর জুলুম নির্যাতন চলছে, এটা তারই একটি অংশ। তিনি আরো বলেন, যে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি এই মিথ্যা মামলার এজহাত করেন।
মুজাহিদের আইনজীবীর বক্তব্যের সাথে মিলে যাচ্ছিল বিট কর্মকর্তা আইয়ুব আলীর কথা। বাংলাভূমির সাথে একান্ত এক সাক্ষাতকারে মুঠোফোনে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদটি আমার ব্যক্তিগত জীবন ও চাকরি জীবনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। সেই সময়ে আমি চাকরি বাঁচাতে মামলার এজাহার করেছিলাম, মামলা গ্রহন ও যাচাই বাছাইয়ের দায়িত্ব আদালতের।”