দুনিয়া নতুন বছর ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে এসে পড়েছে। তার মানে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শপথ নেয়ার দিন ২০ জানুয়ারি আরো ঘনিয়ে এল। প্রায় সব কিছু ঠিক মতই আগাচ্ছে, তেমন কোন বাধা দেখা যাচ্ছে না। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্রমে খাঁচার ভেতরে প্রবেশ করে ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছেন যেন। কিন্তু তবু একটা ভাগাভাগির লাইন আমেরিকান সমাজ ও মিডিয়ায় টানা হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই; যা সম্ভবত আর মুছবে না কোনো দিন। তা হল তথাকথিত আমেরিকান জাতিবাদিতা। অলীক জাতিবাদিতার পক্ষে-বিপক্ষের একটা ভাগাভাগির দাগ থেকেই যাবে।
আগেই একে ‘তথাকথিত’ বলে দিলাম, আর সেই সাথে ট্রাম্পের চালু করা এই জাতিবাদিতা অলীক বা কাল্পনিক- তা আগেই বললাম এ জন্য যে, আমেরিকা রাষ্ট্র ৭৫ বছর আগে একবার গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেছিল, অর্থাৎ এক গ্লোবাল পণ্য বিনিময়বাণিজ্য ব্যবস্থায় প্রবেশে সবাইকে সুযোগ এনে দিয়েছিল, সব রাষ্ট্রকে জড়তা ভেঙে তাতে শামিল করেছিল, সে রাস্তায় সবাইকে নামিয়ে গ্লোবাল আইন নিয়মকানুন তৈরি করে ফেলেছিল, দুনিয়ার বাণিজ্য বিনিময়ের অভিমুখ নির্ধারণ করে গ্লোবাল পণ্য-পুঁজির বিনিময় বা বাণিজ্য এনে দিয়েছিল।
কিন্তু সেই আমেরিকা এখন বুড়া বয়সে উলটা জাতিবাদি সংরক্ষণবাদিতা দিয়ে, নিজ বাজারে অন্যের ঢোকা বন্ধ করে, চীন ও ইইউর সাথে ট্যারিফ আরোপের যুদ্ধ লাগিয়ে গ্লোবাল বাণিজ্য অসম্ভব করে তুলবে, এটা কি কেউ ভেবেছিল? এটা কীভাবে ঘটল?
তামাসার দিকটা হল, জাতিবাদী অর্থনীতি, আত্মনির্ভর অর্থনীতি, সংরক্ষণবাদিতা অথবা নিজে আমদানিও করব না রফতানিও করব না এমন চিন্তা – এটা দুনিয়ায় একসময় একমাত্র টিকে ছিল সেসব দেশে ও সে সবকালে (১৬০৭-১৯৪৫) যখন ইউরোপের ওসব চিন্তার নেতা ও রাষ্ট্রের প্রধান অর্থনৈতিক তৎপরতা বলতে ছিল অন্য দেশকে কলোনি দখল করা আর সেখান থেকে লুট ও শোষণে সম্পদ উঠিয়ে আনা; এমন রূপের কলোনি-দখলদার রাষ্ট্র। কিন্তু আমেরিকা তো কখনো এমন দখলদার রাষ্ট্র বা তেমন অর্থনৈতিক দেশ ছিল না। এছাড়া ১৯৪৪ সালে ব্রেটনউড বহুরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান (আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক) দুনিয়ায় চালু হয়ে যাওয়ার পর সেটা হওয়া শুধু আমেরিকার জন্য নয়, ইউরোপসহ যে কারো জন্যই আরো অসম্ভব হয়ে গেছিল।
সে কারণে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ ধরনের জাতিবাদিতা মানে, পণ্য-পুঁজি আমদানিও করব না, রফতানিও করব না। এ ধরনের বাণিজ্যবিরোধী ধরনের স্বপ্ন আকাক্ষা তো আসলে কলোনি আমলের চিন্তা। যা বর্তমান বাস্তবতার দুনিয়াটাতে আর নাই।
তাই ট্রাম্পের জাতিবাদিতা হল, চীনকে একঘরে করে বা চীনকে বাদ দিয়ে সর্বোচ্চসংখ্যক বাকি রাষ্ট্রকে নিয়ে আগের মতোই আমেরিকান নেতৃত্বের (চীন বাদে) গ্লোবাল বাণিজ্যের সমাজ কায়েমের এক অলীক প্রচেষ্টা যেটা শতভাগই বাস্তবায়ন-অযোগ্য। তবে মানতে হবে জাতিবাদে প্রপাগান্ডা মূল্য অনেক ও সুড়সুড়ি তোলার ক্ষমতাও অপরিসীম। এ ছাড়া, এথেকে নিজ দেশে জাতবাদী এক মিথ্যা ঐক্য ধারণা- অথবা ‘আমরাই শ্রেষ্ঠ’ ধারণার জন্ম দেয়া যায় খুব সহজেই। কেবল এখানে এসে মোদী ও ট্রাম্প নীতিতে এক ছিলেন।
তবে মোদীরটা প্রায় খোলাখুলি নিজের সাথেই অসততা বা প্রতারণা। যেমন, লাদাখ সীমান্তে চীনের সাথে সঙ্ঘাত শুরুর পর থেকে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক এখনো দেয়া আছে, প্রপাগান্ডা ও পণ্য আমদানিবিরোধিতার পক্ষে ক্যাম্পেইনও চলছে। কিন্তু বাস্তবে যেটা হচ্ছে তা হল, আগের চেয়ে চীনা পণ্য ভারতে আমদানি কমা দূরে থাক, এখন তা (গত অক্টোবর থেকে) ৩০% বেশি আমদানি হচ্ছে। এছাড়া মোদীর মনবাসনা ও মনের গোপন নীতি হল, আপনার নিজদেশ কাউকে দেশের বাজারে ঢুকতে দেবে না। এর মানে, অন্যেরা রফতানি করতে পারবে না কিন্তু আপনিই কেবল ওসব দেশে পাল্টা রফতানি করতে চান – এই নীতি। বিদেশি মুদ্রা খুবই লোভনীয় জিনিষ গণ্য করা। এটাই অলীক জাতিবাদিতা, যার কায়েম-বাস্তবায়ন অসম্ভব।
আর এ দিকে মোদীর বিপরীতে ট্রাম্পের আমেরিকার বাস্তবতা হল, এখানে আমেরিকান বাণিজ্যস্বার্থ দুই ভাগে বিভক্ত; দুটা ক্যাম্প তৈরি হয়ে গেছে। স্মল বা মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজগুলো মনে করে, তাঁরা স্বপ্ন-কল্পনায় দ্যাখে যে চীনের আসন্ন গ্লোবাল প্রভাবক-আধিপত্যের কারণে নিজ এন্টারপ্রাইজগুলো নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না।
তাই ট্রাম্পের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিই তাদের আত্মরক্ষার উপায়। কিন্তু এটা ‘মনে মনে পোলাও খাওয়া’র মত। কারণ তাঁদের ভয়ের অনুমানটা ঠিকঠিক যাচাই করে দেখা হয়নি, তাই পরীক্ষিত নয়। বাস্তবে ওসব স্বপ্ন-কল্পনা সত্য না হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। আর এসবের বিপরীতে, চীনের আসন্ন গ্লোবাল প্রভাবে এক ধাক্কা আমেরিকার স্মল বা মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজগুলোর উপর আসবে অবশ্যই, শুরুওও হয়েছে অবশ্যই। কিন্তু তাতে এগুলো সব বিনাশ বা বন্ধ হয়ে যাবে এটি সত্য নয়। বরং এই ধাক্কায় ঢেলে সাজানো আসন্ন হবে অবশ্যই। তাতে কোনো ধরনের স্মল বা মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ বন্ধ হয়ে যাবে আবার নতুন ধরনের কিছু স্মল বা মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ জন্মানোর সম্ভাবনাও তৈরি হবে। আর গ্লোবাল নেতৃত্বের বদলকালে কিছু কোলেটারাল ড্যামেজও হবে অবশ্যই। তাই ব্যাপারটাকে বিদেশীর বিরুদ্ধে দেশীর সংরক্ষণবাদী বিষয়ের চোখে দেখবার বিষয় নয়। বরং নতুন অর্থনৈতিক নেতা আসন্ন হবে বলে তার সাথে নিজেকে খাপ-খাইয়ে নিয়ে টিকানোর জন্য ঢেলে সাজানো, খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য কিছু পরিবর্তন – এসব তো করতেই হবে। এড়ানো যাবে না। তবু জাতিবাদী প্রপাগান্ডায় সফল সুড়সুড়িতে অলীক শত্রুর বিরুদ্ধে জাতিঐক্যের গানই অনেক সফলতা পাবে, অন্তত প্রথম কয়েক বছরে।
এর বিপরীতে আমেরিকায় যারা বড় এন্টারপ্রাইজ, যারা গ্লোবাল প্রতিষ্ঠান মানে গ্লোবাল রফতানি বাণিজ্যভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান; এরা বাইডেনের আমলকে স্বাগত জানাবেন। কারণ এতোমধ্যেই যা ঘোষিত বাইডেনের নির্ধারিত নীতি তা হল, ট্রাম্পের জাতিবাদিতায় আমেরিকার অনেক ক্ষতি হয়েছে; তাই আমাদের যত দ্রুততায় আগের সময়ের গ্লোবাল বাণিজ্য সম্পর্ক এবং পারলে যতটা সম্ভব গ্লোবাল নেতা থাকার নীতি ফিরিয়ে আনতে হবে। এটাকে বাইডেনের পরামর্শকরা বলছেন, ডেমোক্র্যাট দলের পুরনো বা ক্লাসিক নীতি অথবা ওবামার নীতিতে ফিরে যাওয়া ও কন্টিনিউ করাই বাইডেনের সাধারণ নীতি হবে এবং এই বার্তাটাই সে চীনকে দিতে চায় বলে যতটা সম্ভব ওবামার আমলের যত পুরনো লোক (উপদেষ্টা, সচিব) আছেন তাদের দিয়েই বাইডেনের স্টাফ মূলত সাজানো হচ্ছে। আর তারা যেহেতু আগে চীনের সাথে কাজ করেছেন, পূর্ব-পরিচয় অভিজ্ঞতা আছে ফলে তা আমেরিকার ওপর চীনা আস্থা (ট্রাম্পের কারণে যেটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে) ফিরানোর একটা আলাদা মাইলেজ হতে পারে। অর্থাৎ বাইডেনের আমেরিকা সেই পুরানা গ্লোবাল বাণিজ্যের ট্রাকেই ফিরে যাবে; কথিত জাতিবাদিতায় নয়। তাই সবখানেই সেটা পুনরুদ্ধার করাই বাইডেনের মৌলিক নীতি হবে।
কিন্তু বাইডেনের আমেরিকা ওবামা আমলের নীতিতে কতটা ফিরতে পারবে?
সেটা এক বিরাট প্রশ্ন, অবশ্যই। পুরনো জায়গায় ওবামার লেভেলে আবার ফিরতে না পারার শঙ্কাও ক্রমে বাড়ছে। ব্যাপারটা বুঝতে সবার আগে প্রশ্ন করা যাক, আসলে ‘ফিরতে পারা’ মানে কী?
সংক্ষেপে বললে আমেরিকা গ্লোবাল নেতৃত্ব নিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে ১৯৪২ সাল থেকে। সুনির্দিষ্ট সে যা করেছিল তা হল, ঐ বিশ্বযুদ্ধের মূল নির্ধারক নেতৃত্ব নেয়া, হিটলারবিরোধী অক্ষশক্তি জোট গড়া; তাতে সোভিয়েত ইউনিয়নকেও শামিল করা, ওই বিশ্বযুদ্ধে নিজেদের বিজয় ঘটানো, যুদ্ধের মেজর খরচ হিসেবে পক্ষের সব রাষ্ট্রকে আমেরিকা কোনো চুক্তি ছাড়াই অর্থ জুগিয়ে চলেছিল, যুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত করার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন বাদে সবাইকেই আবার যুদ্ধ-পুনর্বাসন ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য, নতুন করে এবং এবার জাপান-জার্মানি-ইটালিসহ সারা ইউরোপকে নতুন বিনিয়োগ দেয়া।
আর সেই সাথে ইউরোপ যেন এবার কমিউনিস্টদের দ্বারা দখল না হয়ে যায় তাই জার্মানি ও জাপানে স্থায়ীভাবে সামরিক ব্যারাকে আমেরিকান সৈন্য রেখে দেয়া। আর এসব কিছুর খরচ আমেরিকা একা বহন করা। আর আমেরিকা কখনোই এই নিরাপত্তাদানের খরচ ইউরোপের কাছে চায়নি। এরই বিনিময়ে আমেরিকা ইউরোপের মন পেয়েছিল। আর সেই থেকে আমেরিকা পায় নিজে গ্লোবাল (অর্থনীতি তো বটেই) পলিটিক্যাল একচ্ছত্র লিডারের স্বীকৃতি। তা দিয়েছিল অ-কমিউনিস্ট সারা ইউরোপ। এছাড়া বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা পক্ষজোটের অন্যান্য রাষ্ট্রে যা কিছু খরচ বা বিনিয়োগ করেছিল কিস্তিতে হলেও তারা সেসব খরচের অর্থ ফিরিয়ে দিয়েছিল। আর অবকাঠামো ঋণও তারা স্বল্প সুদসহ ফেরত দিয়েছিল কিস্তিতে।
তবে সামরিক ব্যয় যেমন ইউরোপে সব আমেরিকান-ব্যারাক রাখার খরচ বা সামরিক জোট ন্যাটো পরিচালনার খরচের কমপক্ষে নব্বই ভাগ একা আমেরিকা বহন করে এসেছে, এ পর্যন্ত। কিন্তু এবার ট্রাম্প এসে কেবল ট্রাম্পই এইবার ইউরোপের কাছে সামরিক ব্যারাক রাখার খরচ চেয়েছিলেন। এর চেয়েও ‘শকিং’ ব্যাপারটা হল, ট্রাম্প নিজেই আমেরিকার গ্লোবাল বাণিজ্যের নেতা অবস্থান ছেড়ে সরে গিয়েছিলেন। ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার শুরুর ঐ বছর (২০১৭) গ্লোবাল ইকোনমিক ফোরামে ব্যক্তি তিনি অংশ নেয়নি। আর পরে যেখানেই অংশ নিয়েছেন (যেমন জি৭ বা জি২০) সেখানে জাতিবাদী ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে চলতে চেয়ে কথা বলে গেছে্ন। ফলে সবখানে তাল কেটে যাওয়া কথা। এসব মিলিয়ে গত ৭৫ বছরের যে আমেরিকা গ্লোবাল নেতার পরিচয় পেয়েছিল তা ট্রাম্প তার শেষ চার বছরে সদম্ভেই সব মুছে ফেলেছিলেন।
আর ঠিক সে কারণেই, আসন্ন বাইডেন প্রশাসনের সাধারণ নীতি হবে আমেরিকাকে যতটা সম্ভব আগের গ্লোবাল নেতার আসনে ফিরিয়ে নেয়া। এ কাজে এবার মূলত তার আগানোর পথ হবে নীতিগত জায়গায় শক্ত করে দাঁড়িয়ে সব কিছুকে ফিরিয়ে আনা। আর এ কাজে সবার উপরে থাকবে হিউম্যান রাইট ইস্যুতে এক শক্ত আপসহীন অবস্থান। মোদির ভারত এতে ‘সাফার’ করবে অবশ্যই, কিন্তু ভারতকে কষ্ট দিতে হবে, এটা বাইডেনের কোন পলিসি নয়।
বরং হিউম্যান রাইট ইস্যুতে শক্ত আপসহীন অবস্থান নিলে গ্লোবাল অর্থনৈতিক নেতৃত্বের প্রশ্নে আমেরিকা চীনের কাছে পরাজিত হয়ে গেলেও গ্লোবাল রাজনৈতিক নেতৃত্ব সহসাই আমেরিকার হাত থেকে চলে যাবে না এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আমেরিকার গ্লোবাল রাজনৈতিক নেতৃত্ব অনেকটা আর অনেকদিনই হয়ত ঠেকিয়ে রাখতে পারবে এবং তা সম্ভবত অনেক দীর্ঘ দিন আমেরিকার হাতে থাকবে। এই হল পিছনের অনুমান। তবে এবার প্রকাশিত এক গবেষণা-স্টাডি রিপোর্ট বলছে, করোনাভাইরাসকে কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে এবং এই ম্যানেজমেন্ট সাকসেসের কারণে ২০৩৫ সালে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে অর্থনৈতিক নেতৃত্ব চীনের পাওয়ার কথা ছিল। [এ দশকের মধ্যেই চীন হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি: রিপোর্ট] সেটা এখন ২০২৮ সালের মধ্যেই চীন অর্জন করে ফেলবে বলে অনুমিত হচ্ছে। তাই অন্তত গ্লোবাল রাজনৈতিক নেতার আসন ধরে রাখতে বাইডেন নিজ দেশের হিউম্যান রাইট ইস্যুতে শক্ত আপসহীন অবস্থানের কথা বলছেন। তিনি শুধু ভারতের কাশ্মীর নীতিই নয়, ভারতের নাগরিকত্ব আইন এবং মুসলমানদের প্রতি নিপীড়ন ও বৈষম্য নিয়েও উচ্চকিত হবেন বলে জানিয়ে আসছেন। একই অবস্থান নেবেন বাংলাদেশের হিউম্যান রাইট ইস্যুতেও। এ কারণে এসব দেশের নেতৃত্ব চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
ভারতের দিবাস্বপ্নঃ
এ দিকে গত ২৪ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসে এমন এক প্রো-ভারতীয় রিপোর্ট ছাপা হয়েছে যাকে বলা চলে, বাইডেনের নীতির চাপের কথা ভেবে ভারতীয় মিডিয়া ও রাজনীতিতে যে দম বন্ধ অবস্থা তৈরি হয়েছে তা থেকে ভান করে হলেও যেন তাদের সাময়িক নিঃশ্বাস নিতে দিতেই এই রিপোর্ট লেখা হয়েছে। তাই যেন এটা এক দিবাস্বপ্নের আকাঙ্খায় লেখা রিপোর্ট।
ঐ রিপোর্টের শিরোনাম, ‘বাইডেন হিউম্যান রাইট ইস্যুতে জোর দিলেও আমেরিকা-ভারত সম্পর্ককেও বিস্তারে নেবেন’ [Biden Is Expected to Expand U.S.-India Relations While Stressing Human Rights]। এই শিরোনামটা নিজেই এক হার-স্বীকার করা সান্ত্বনামূলক শিরোনাম। কারণ হিউম্যান রাইট ইস্যুর ব্যাপক ‘খামতিতে থাকা’ মোদী বাইডেনের সাথে আলাপে গেলে বলাই বাহুল্য, প্রতিটা পদেই সমালোচিত হবেন আর এই সমালোচনার ভয় ও মনমরা অনৈতিক অবস্থানের ছাপ সবার ওপর সব ইস্যুতেও থাকবে। তাই বাইডেনের পক্ষেও সম্পর্ক কোনো দিকে এগিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে যাবে। এ ছাড়া এমন দুই নেতার বৈঠকে যদি একজনের চোখে অপরজন খাটো হয়ে থাকেন ওবে ঐ পরিস্থিতিতে আলোচনাই আগাবে না। শুধু তা নয়, সেটি একটি বেইজ্জতির কাণ্ড হয়ে যেকোনো সময় হাজির হয়ে যেতে পারে এই ভয় ঢুকবে ভারতের সবার মনে। আর এই ভয়েই সম্ভবত মোদী বাইডেনের সামনে মুলাকাতে আসতেই চাইবেন না। তাই, মোদী সাক্ষাতের কোন মিটিং এড়িয়ে চলতে চাইবেন, এটাই হওয়ার কথা।
তবে ওই রিপোর্ট এসব প্রশ্নের মীমাংসা না করতে পেরে শেষে অস্বাভাবিকভাবে (বাইডেন ডেমোক্রাট অথচ) এবার রিপাবলিক থিংকট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের কিছু মন্তব্য নিয়ে এসেছে, নিজেদের মনোবল বাড়াতে। যেমন কার্নেগি ইন্ডিয়ার অ্যাশলে [Ashley J. Tellis], ট্রাম্পের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফান বিগান [Stephen Biegun] বা থিংকট্যাঙ্ক ব্যক্তিত্ব রিচার্ড ফনটেইন [Richard Fontaine,]- এদের কথা উদ্ধৃতিতে আনা হয়েছে। কিন্তু মজার কথা হল, কোথাও পরিষ্কার বলা নেই তারা এসব কথা কবে বলেছেন? নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে, না পরে? তা স্পষ্ট নয়।
আবার কোথাও যদি বলা থাকে তবে সেটা অবশ্যই গত নভেম্বরের নির্বাচিনের আগের যখন নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষের প্রপাগান্ডা হিসাবে অনেক কথা বলা হয়েছিল, সেসব কথা। আর সবচেয়ে বড় কথা, তারা কি বাইডেন জিতার পরে তার সম্ভাব্য নীতি সম্পর্কে কথা বলছেন? অবশ্যই তা নয় অথবা তারা সেটাও নিশ্চিত করেননি। এমনকি ঐ রিপোর্টের এক জায়গায় দাবি করা হয়েছে, বাইডেন নাকি এশিয়ায় চীনের ক্ষমতার ভারসাম্য হিসেবে কোয়াড জোট নিয়েও আগাবেনই [As relations between New Delhi and Beijing soured, India strengthened its commitment to a multilateral partnership with the United States, India, Japan and Australia — known as the Quadrilateral Security Dialogue, or Quad.] অথচ এসব কথা তো নভেম্বর নির্বাচনের আগে বলা কথা।
কাজেই বলা বাহুল্য এমন জবরদস্তি অনুমানের ভিত্তি নেই। কারণ বাইডেন চীনের বিরুদ্ধে অনেক রাষ্ট্রের সাথে নীতি বা পলিসিগত জোট বা ঐকমত্য করবেন হয়ত। কিন্তু কোয়াড তো সামরিক জোট আর তা এক আলাদা প্রতিষ্ঠান। কোনো দেশের অন্য দেশের সাথে পলিসিগত মিলের ভিত্তি খুঁজে পেয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়া আর সামরিক জোটে তৎপর ও যুক্ত হওয়া – এ দুটো কোনোভাবেই আমরা এক বলে চালিয়ে দিতে পারি না। অথচ এমন উদ্ভট দাবি এখানে করা হয়েছে চাতুরির সাথে। শেষে রেফারেন্স টানা হয়েছে ভারতের ট্রাম্প অনুসারী এক আমেরিকান থিংকট্যাঙ্কের প্রধান, ব্রহ্ম চেলানির। চেলানির দাবি একেবারে হুমকির মতন।
নিউইয়র্ক টাওইমসে দাবি করা হয়েছে চেলানি নাকি বলেছেন, বাইডেন যদি চীনের প্রতি নরম অবস্থানে কথা বলেন তবে তা ভারতকে ‘দ্বিতীয় চিন্তা’ করতে ঠেলে দিবে [“If he’s seen as pursuing a softer approach with China, it will make New Delhi have second thoughts about a soft alliance,” said Brahma Chellaney, a professor of strategic studies at the Center for Policy ]। তবে এটা বিরাট হুমকি দেয়ার মতো কথা। কিন্তু ভারত ‘দ্বিতীয় চিন্তা’ করে কোথায় যাবে? ভারতের কাছে আমেরিকার কাছে যাওয়া ছাড়া আর কে বিকল্প আছে? আসলে ভারতের জন্য একটাই আমেরিকান বিকল্প আছে; সেটা হল, এবার উল্টা আরো বেশি করে চীনের ঘনিষ্ঠ হয়ে কোলে উঠে যাওয়া! এ ছাড়া ভারতের জন্য আমেরিকার বিকল্প আর কই?
তবে আবার সবশেষ ঐ রিপোর্টে স্বীকার করে নিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমেরিকার কিছু অ্যাক্টিভিস্ট বরং দাবি করেছেন বাইডেন যেন ভারতের সরকারকে হুঁশিয়ার করে দেয় ভারতের হিউম্যান রাইটের ব্যাপারে সতর্ক না হলে সেই ভারত হবে আমেরিকার জন্য ভীষণ বিপদের” [Some activists in the United States want the Biden administration to go even further and warn Indian officials that discontent over some of its current policies could imperil how strong a partner India might be for the United States. …… “Human rights first is equally important,” said Simran Noor, the chairwoman of South Asian Americans Leading Together, an advocacy group in the United States. ]। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে এই রিপোর্ট শেষবিচারে ভারতের জন্য সান্ত্বনামূলক কিছু বাক্যও তুলে ধরতে পারেনি।
চীন-ইইউ CAI চুক্তি করে ফেলাঃ বাইডেন শপথ নিবার আগেই যা হারালেন
এদিকে গত ৩০ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন মিলে বিশাল তাতপর্যপুর্ণ এক ভার্চুয়াল ভিডিও শীর্ষ বৈঠক সম্পন্ন করেছে। এটা হল, চীনের সাথে ইইউর মূলত বিনিয়োগ ও বাণিজ্যবিষয়ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক চুক্তি। এর আনুষ্ঠানিক নাম ‘কম্প্রিহেনসিভ এগ্রিমেন্ট অন ইনভেস্টমেন্ট’ (সিএই) বা CAI ।
এতে সার কথাটা হলো, ট্রাম্প প্রশাসন তার চার বছরে যেভাবে ইইউকে দূরে ঠেলে দিয়েছে, তা বাইডেন এসে মেরামত করে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনবেন বলে যে নীতি ঘোষণা করেছিলেন, তা আর এখন কার্যকর হওয়ার সুযোগ থাকল না। এর আগেই চীন-ইইউর এই চুক্তি আমেরিকাকে চিরদিনের জন্য পাশে ও বহু পেছনে ফেলে এগিয়ে গেল।
এই ফাইনাল আলোচনায় ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন (উপরের ছবিতে ঘড়ির কাটার অর্ডারে) চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মিশেল [Charles Michel], ইইউর দুই প্রধান নেতা রাষ্ট্র জার্মান চ্যান্সেলর মার্কেল আর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো; আর এদের সাথে ছিলেন ইইউ কমিশন প্রেসিডেন্ট উর্সুলা [Ursula von der Leyen]। অর্থাৎ পক্ষ হিসাবে চীন ও ইইউ এই দুই পক্ষ। কিন্তু কেন বাইডেনের অনুরোধ ফেলে ইইউ নেতারা এই চুক্তিতে গেলেন এনিয়ে অপ্রকাশ্যে বিস্তর মনকষাকষি নেপথ্য আলাপ হয়েছে। যার প্রায় সবটাই আমরা পেতে পারি হংকং থেকে প্রকাশিত এশিয়ান টাইমস ওয়েব পত্রিকায়।
সেখানে গত ৩১ ডিসেম্বর সংখ্যায় রিপোর্টার ডিভিড হাট [DAVID HUTT] এর লেখা এক বিস্তারিত প্রায় দশ পৃষ্ঠার রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। যার শিরোনাম হল, ইইউ-চীনের ডিল বাইডেনের টিমকে হয়ত আরও অনেক অপশন দিতে পারত [EU-China deal may give Biden’s team more options]। অর্থাৎ আমেরিকার পক্ষ থেকে দেখা ও করা এই শিরোনাম। আমেরিকান চোখে তাঁরা আমেরিকা-ইইউ এর সম্পর্ককে ট্রান্স-আটলান্টিক [transatlantic relationship] সম্পর্ক বলতে ভালবাসে। ভৌগলিকভাবে তারা আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পাড়ের ভুমি বলে। সাউথ চায়না মর্ণিং পোস্ট পত্রিকা সেখানে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বাইডেনকে ট্রান্স-আটলান্টিসিস্ট বলে খোচা দিয়ে লিখেছে- President-elect Joe Biden is considered to be an Atlanticist। কিন্তু এশিয়ান টাইমসের ডেভিড হাট অত দূর থেকে কথা বলেন নাই। তিনি সরাসরি ইইউ কে প্রতারনাকারিই [gazumped, যার বাংলা হল, বাড়িবিক্রির বিক্রেতার সাথে দরদাম সব ঠিক হবার পর ফাইনাল পেমেন্টের আগে তিনি এবার বাড়ির বর্ধিত দাম হেঁকে গোঁ-ধরে বসা – একে যে প্রতারণার ঘটনা বলে মনে করা হয়] বলেছেন। কারণ , তিনি বলছেন নভেম্বর নির্বাচনের আগের মাসে অক্টোবর ২০২০ তে ট্রাম্পের উদ্যোগে ইইউ-আমেরিকা এই বৈঠক বসেছিল চীনের বিরুদ্ধে তারা কী কমন অবস্থান নিতে পারে সেই বিষয়ে। ডেভিড হাট ইইউ এর ফরেন পলিসি প্রধান যোসেপ বোরেলের [Josep Borrell] এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলছেন তিনি চীনবিরোধী ইইউ-আমেরিকা বৈঠকের প্রশংসাও করেছিলেন। কিন্তু তি এখন এমন উলটে গেলেন কেন? এটাকেই তিনি প্রতারণা বলছেন।
ডেভিড হাট আরও খবর দিচ্ছেন ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাথিউ [Matthew Pottinger] এর উদ্ধৃতি টেনে বলছেন “ইইউ এর এই আচরণে আমরা আমেরিকার উভয় দল এই ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত ও হতবাক”[Leaders in both US political parties and across the US government are perplexed and stunned that the EU is moving towards a new investment treaty right on the eve of a new US administration.”]।
এইবার পালটা ইইউ এর দিক থেকে জবাব বক্তব্যও তুলে ধরেছেন ইইউ এর ট্রেড কমিশনারকে উদ্ধৃত করে ডেভিড হাট লিখছেন, কমিশনার বলেছেন CAI চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আমরা এখন আমেরিকার সমান হলাম” [CAI deal as a “leveling up” with the US on trade terms relating to China]। কেন একথা? কারণ ইউরোপ অনেক আগে থেকেই ট্রাম্পের উপর ক্ষুব্ধ ছিল। কারণ তিনি চীনের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধ করে গেছেন। কিন্তু তা থেকে বের হতে ট্রাম্প যে সমঝোতা আলোচনা করেছিলেন সেখানে তিনি ইইউ-কে জানিয়ে তা করেন নাই। যদিও ঐ আলোচনা প্রথমপর্বই কেবল শেষ হয়েছিল এমনকি ঐ অংশ পর্যন্ত চুক্তিও সম্পন্ন করা হয়েছিল, তবে এর পরে আলোচনা আর আগায় নাই। সব ভেঙ্গে পড়েছিল। ইইউ এর ট্রেড কমিশনার সেই উপেক্ষারই রেফারেন্স তুলে বলছেন এইবার আমরা আমেরিকার সমান হলাম। এরকম ইইউ-আমেরিকার অনেক অভিযোগ-পাল্ট অভিযোগের কথা আছে ডেভিডের এই রিপোর্টে।
কিন্তু এসব কিছুকে পিছনে ফেলে সত্য এখন একটাই, ইইউ-চীন চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলেছে এবং দুপক্ষই এতে ভীষণ সন্তুষ্ট। এরই এক প্রকাশ হল, স্বাক্ষর শেষে ইইউ এর পক্ষ থেকে চীনের প্রশংসাসূচক একটা শব্দই বহু কথাই বলে দিয়েছে। তা হল, ইইউ এই চুক্তিকে চীনের দিক থেকে করা ‘অতুলনীয় এক প্রতিশ্রুতি’ [unprecedented commitment] বলে মনে করছে যা চীনে ইইউর বাণিজ্যকে নিশ্চয়তা ও আগাম বোঝা সম্ভব – এমন সব আস্থা দিবে [provide commercial certainty and predictability, with wide access for an array of European companies to the hitherto heavily restricted Chinese market.]। আসলে এই চুক্তি চীনের সম্পর্কে পশ্চিমাদেশে যেসব বদ্ধমুল ধারণা ছিল যেমন চীনে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো পণ্যে মূল্য বাণিজ্যিকভাবে নির্ধারিত হয় না, সরকারি হস্তক্ষেপে নির্ধারিত হয়। অথবা শিল্প অথবা কৃষি পণ্যে সখানেই কত ভর্তুকি দেয়া হয় তা গোপন রাখা হয় [regulate China’s state-owned enterprises and transparency on subsidies.] কিন্তু এই চুক্তির পরে ইইউ নেতারা খুশি যে এখন এসব তথ্য সবই তারা সহজেই জানতে পারবেন।
সবশেষে দাড়ালো কী?
এতদিন চীন গ্লোবাল অর্থনীতির নেতা হবে এটা জানা ছিল কিন্তু এর পথে বাধাগুলো কো করে সামলাবে বা অপসারণ করবে তা স্পষ্ট ছিল না। এই চুক্তি বলে দিচ্ছে চীন কী করে তা করতে যাচ্ছে। আর এটা সম্পন্ন করতে চীনের একটা সাধারণ ফর্মুলাও অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে। সেটা হল, সবাইকে আলাদা আলাদা ডিল কর বা সামলাও। ইইউ-চীন চুক্তিটা দেখিয়ে দিল ট্রাম্প এবং এমনকি বাইডেনও কতটা নাদান। ভুয়া জাতিবাদ আর ভুয়া আমেরিকা ফাস্ট সমুলে ত্যাগ করে আমেরিকার উচিত ছিল ইইউ-কে সাথে রেখে একটা পক্ষ হয়ে এরপর চীনের সাথে ডিল করতে বসা। অথচ ট্রাম্প চার বছর চলল ঠিক এর উলটা অবস্থান নিয়ে, ‘একলা চল’। আবার বাইডেন ক্ষমতায় আসবার আগে থেকেই এই দুর্বল জায়গাটা নিয়ে কাজ করা পরিকল্পনা নেয়া উচিত ছিল যে কী করে এই খামতি মোকাবিলা করবে।
এমনকি ডেমোক্রাট দল হিসাবেও ইইউ এর সাথে কথা আগিয়ে রাখা দরকার ছিল। এখন যা হল তাতে এটা প্রমাণিত যে বাইডেনের টিমের বাস্তবতা সম্পর্কে কোন ধারণাই নাই; দুর্বলতা বা সবলতার কোন দিক সম্পর্কেই নাই। ওদিকে এর আগে চীন RCEP এর বাণিজ্য চুক্তি করেছে। তাতে পুরা এশিয়ার যত মাতবর আছে – জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া অষ্ট্রলিয়া, নিউজিল্যান্ড আর সাউথ চায়না সি-এর আশাপকাশের কেউ বাকি নাই। অর্থাৎ এদেরকে ডিল করেছে আমেরিকা বা ইইউ এর বাইরে রেখে আলাদা করে।
এখন বাইডেন ক্ষমতার শপথ নিলে তাকেও চীন বঞ্চিত করবে না। কিন্তুঞ্জোট পাকাতে দিবে না। দরকষাকষির ক্ষমতাও ছেটে দেওয়া হয়ে গেছে। আমেরিকা যে গ্লোবাল নেতার মত ইইউ ও RCEP এর সদস্য দেশগুলোকেও নিজের সাথে রেখে এইবার চীনের সাথে বসবে বা ডিল করবে – সেই বাস্তবতাটাই চীন ভেঙ্গে দিয়ে আসছে ও ফাইনালি দিলও। অর্থাৎ চীনের গ্লোবাল অর্থনীতির নেতা হতে বাধা দিবার কোন জোট বা কোন রাষ্ট্রের অবস্থানের আর সুযোগ থাকল না। এখন সবার স্বার্থই চীনের সমৃদ্ধির মধ্যে, চীন দুর্বল হলে নয়। অতএব আমরা বলতে পারি এটাই পারফেক্ট পরিস্থিতি চীনের গ্লোবাল অর্থনৈতিক নেতা হবার পথের।
ভারত কোথায়?
কিছু একটা কথা বাদ পড়ে গেল। কী সেটা? ভারত কোথায়? সে কী পেল, তার অবস্থান কই? ভারতই আসলে সমুলে বাদ পড়ে গেল, একেবারে ওয়াইপ আউট, মুছে গেল। একমাত্র পথ খোলা থাকল, লজ্জার মাথা খেয়ে কম্প্রোমাইজ; মাফ চেয়ে চীনের অনুগ্রহ লাভের পথ পাওয়ার অপেক্ষা করতে হবে।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com