ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা
Advertisements

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা যখন ঘনীভূত, ঠিক তখনই ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলের তেলআবিব উপকণ্ঠের দখলকৃত জাফা অঞ্চলে একটি ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে। হামলায় ‘জুলফিকার’ নামক ইরানি প্রযুক্তিনির্ভর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয় বলে দাবি করেছে ইয়েমেনি কর্তৃপক্ষ।

এক ঘোষণায় ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানান, এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের বেনগুরিয়ন বিমানবন্দর সংলগ্ন একটি সামরিক ঘাঁটি। খবর বার্তা সংস্থা মেহর নিউজ এর।

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে ‘সমন্বিত অভিযান’
এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনের উপকূলীয় শহর হুদায়দার বেশ কয়েকটি বন্দর লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। এতে অন্তত ৭৪ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ইয়াহিয়া সারি জানান, এই হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়াতেই ইয়েমেন একটি “সমন্বিত সামরিক অভিযান” পরিচালনা করেছে।

তিনি আরও দাবি করেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানবাহী রণতরী—USS Truman এবং USS Vinson-কে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছি।” পাশাপাশি ইয়েমেনি প্রতিরক্ষা বিভাগ জানায়, সানা প্রদেশে একটি মার্কিন এমকিউ-৯ (MQ-9) গোয়েন্দা ড্রোন তারা গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

ইসরায়েল-ইরান-যুক্তরাষ্ট্র: উত্তেজনার নতুন ত্রিভুজ
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানি প্রযুক্তিনির্ভর জুলফিকার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা কেবল একটি সামরিক বার্তাই নয়, বরং কূটনৈতিকভাবেও ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

তেলআবিবের নিরাপত্তাবেষ্টিত বিমানবন্দর এলাকায় হামলা প্রতীকী দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এটি ইসরায়েলের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে সরাসরি আঘাত হানে। যদিও এখন পর্যন্ত ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

আঞ্চলিক নিরাপত্তায় নতুন ভারসাম্যের ইঙ্গিত
ইয়েমেনি বাহিনীর মতে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন যত বাড়বে, তাদের প্রতিক্রিয়াও তত তীব্র হবে। মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে সামরিক হস্তক্ষেপ বাড়ায়, তবে আমরা আমাদের প্রতিরোধ আরও জোরদার করব।”

এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন এক সামরিক ও কূটনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে ইরান-ইসরায়েল বিরোধ, ইয়েমেনি প্রতিরোধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সম্পৃক্ততা অঞ্চলজুড়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

সংঘাত, না প্রতিরোধের নতুন অধ্যায়?
ইয়েমেনি হামলাকে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে দেখছেন অনেকে। জুলফিকার মিসাইল শুধু ধ্বংসের প্রতীক নয়, এটি এক প্রকার হুঁশিয়ারি—যেখানে বলা হচ্ছে, যখন কূটনীতির ভাষা ব্যর্থ হয়, তখন আকাশপথে প্রতিরোধের জবাব আসে।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এই হামলা শুধু উত্তেজনার আগুন নয়, বরং অনিশ্চয়তার ঘন মেঘও জমিয়ে তুলেছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে এই অঞ্চলে যুদ্ধ ও শান্তির কূটনৈতিক লড়াই আরও তীব্র হতে পারে।

সূত্র: মেহর নিউজ এজেন্সি

Advertisements