
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত চারদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ভাষা আন্দোলন কেবল মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য নয়, এটি ছিল স্বাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলন। তাই বাঙালির কাছে একুশ মানে মাথা নত না করার দৃঢ় প্রত্যয়।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বেদনার স্মরণে অশ্রু বিসর্জনের দিন নয়, এটি এক অবিনাশী প্রেরণা—সকল অন্যায়, অবিচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বীজমন্ত্র। মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।”
তিনি আরও বলেন, “মাতৃভাষা শুধু ভাষা নয়, এটি মানুষের ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বাহক। মাতৃভাষার সঙ্গে মানুষের আত্মার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। পৃথিবীর যেকোনো ভাষা মানুষ শিখতে পারে, তবে মাতৃভাষার স্থান তার হৃদয়ে চিরস্থায়ী।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “নিজ ভাষার প্রচারক হওয়া যথেষ্ট নয়, জাতির যদি পৃথিবীর ভাণ্ডারে দেওয়ার মতো কিছু না থাকে, তবে সে ভাষার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। ভাষার প্রাধান্য বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সাহিত্য উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে ভাষার গুরুত্বও বৃদ্ধি পায়।”
তিনি উল্লেখ করেন, “স্পুটনিক যখন মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়, তখন সারা বিশ্ব রুশ ভাষা শেখার দিকে ঝুঁকে পড়ে। চীন প্রযুক্তিতে অগ্রসর হওয়ার পর চীনা ভাষার চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যে দেশ পৃথিবীর নেতৃত্ব দেবে, সে দেশের ভাষার গুরুত্বও বাড়বে। তাই আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে স্থান দিতে হলে প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যেতে হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, ইউনেস্কোর বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রতিনিধি সুসান ভিজ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
মাতৃভাষার সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ভাষা সংরক্ষণের আবেগ থাকলেও, এর সঙ্গে বড় স্বার্থ জড়িত। কোনো অজানা মাতৃভাষাও একদিন পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। তাই আমাদের উচিত ভাষার উন্নয়নে গবেষণা ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় অংশ নেওয়া, যাতে বাংলা ভাষা বিশ্ব দরবারে গুরুত্ব পায়।”