জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারদের রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আজ সোমবার সকাল ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২১টি শহীদ পরিবার ও সাতজন আহত ব্যক্তির মধ্যে আর্থিক চেক হস্তান্তরের মাধ্যমে এই উদ্যোগের সূচনা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
বৈঠকে তিন শহীদ পরিবার ও তিনজন আহত যোদ্ধা বক্তব্য রাখেন। তারা হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্রীয় সম্মান, আর্থিক সহযোগিতা ও পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। তাদের বক্তব্য দিতে গিয়ে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার সাহস পেয়েছি, তাদের অবদান কোনোভাবে পরিমাপ করা সম্ভব নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জীবন্ত ইতিহাস। জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবের স্মারক। এই স্বীকৃতি জাতির পক্ষ থেকে আমাদের কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।’
তিনি আহত ও শহীদ পরিবারের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ থেকে আপনারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন। এটি কেবল প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নয়, সমাজকেও আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে।’
সরকারি সহায়তা ও পরিকল্পনা
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদরা ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন। শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে।
শহীদ পরিবারদের জন্য সহায়তা:
প্রতিটি শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২০ লাখ টাকা প্রদান করা হবে।
প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করা হবে।
শহীদ পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
আহতদের জন্য সহায়তা:
গুরুতর আহতদের জন্য দুটি ক্যাটাগরিতে সহায়তা প্রদান করা হবে।
ক্যাটাগরি এ: গুরুতর আহতদের এককালীন ৫ লাখ টাকা প্রদান করা হবে, যার মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২ লাখ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হবে।
গুরুতর আহত প্রত্যেকে মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন।
সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা ও মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশক্রমে দেশ-বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।
পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান সহায়তা প্রদান করা হবে।
ক্যাটাগরি বি: কম গুরুতর আহতদের এককালীন ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হবে, যার মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ লাখ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২ লাখ টাকা দেয়া হবে।
মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করা হবে।
কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান করা হবে।
সরকারি গেজেট ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সরকার ইতোমধ্যে ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে এবং আহতদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই এটি প্রকাশ করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানি, আপনাদের প্রত্যাশা অনেক আগেই পূরণ হওয়া উচিত ছিল। তবে সরকার আন্তরিকভাবে আপনাদের ন্যায্য সম্মাননা ও সহায়তা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে।’
এই কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকার জুলাই শহীদ ও যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতার নিদর্শন রাখল।
