বৃদ্ধা নারীর বসতঘর
Advertisements

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দীর্ঘ এক দশক ধরে বাবার জমিতে ছোট একটি টিনের ঘরে বসবাস করছিলেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়নের বড়চালা গ্রামের মাজেদা খাতুন (৬০)। কিন্তু সম্প্রতি নিজের নাতির বিয়ের অনুষ্ঠানে বাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে যান তিনি। সেখান থেকে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ফিরে এসে দেখেন, তার বসতঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে, এবং সমস্ত আসবাবপত্র লুটপাট করা হয়েছে।

মাজেদার চাচা মো. সিরাজউদ্দিন (৮৩) জানান, ঘর ভাঙার সময় তিনি বাধা দিতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। তার দাবি, এই জমি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি এবং সিএস ও আরএস নকশায় রেকর্ডভুক্ত। ১৯৪৪ সাল থেকে তারা নিয়মিত খাজনা দিয়ে জমি ভোগদখল করে আসছেন। এ নিয়ে আদালতে মামলা হলে দুইবার তাদের পক্ষে রায় আসে এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও তাদের পক্ষে লিখিত রায় দেন। তবুও প্রতিপক্ষ সালিশ শেষ হওয়ার আগেই ঘর ভেঙে ফেলে ও মালামাল লুটপাট করে। সিরাজউদ্দিন দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এ ঘটনায় মাজেদার ছোট ভাই মো. সমশের বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এ একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালত পিবিআই গাজীপুরকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর যথাযথ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিবাদী আ. মতিন (৪৬) দাবি করেছেন, জমি নিয়ে মামলা চলমান থাকায় তার লোকজন টিনের ঘরগুলো ভেঙে ফেলেছে। তবে তিনি তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।

মাজেদা খাতুন জানান, তিনি রাজধানীর গুলশানের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করার সময় বগুড়ার এক সহকর্মীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে একটি কন্যাসন্তান, তাছলিমা, রয়েছে, যাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বিয়ে দেন। মেয়ে সুখেই সংসার করছেন, কিন্তু তিনি নিজে এখন নিঃস্ব। নাতির বিয়েতে গেলে প্রতিপক্ষ তার বসতঘর ভেঙে দিয়ে সমস্ত আসবাবপত্র ও টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যায়। তিনি তার জীবনের সমস্ত সঞ্চয় হারিয়ে এখন সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছেন।

এই ঘটনা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

Advertisements