গাজায় যুদ্ধবিরতি
Advertisements

গাজায় প্রায় ১৫ মাস ধরে চলমান ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধে দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমেরিকা, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত এই চুক্তি শুক্রবার ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে। রোববার (১৮ জানুয়ারি) থেকে এই চুক্তি কার্যকর হচ্ছে, যার আওতায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময় শুরু হবে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানিয়েছেন, রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮:৩০টায় গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। চুক্তির প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের (৪২ দিনের) জন্য যুদ্ধবিরতি বজায় থাকবে। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও সরকারি নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পরও ইসরাইলি হামলা থামেনি। গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, বুধবার রাত থেকে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩৩ জন শিশু ও ৩৩ জন নারী রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে গাজা শহরে ৯২ জন, খান ইউনিসে ১৯ জন, মধ্য গাজায় ১০ জন এবং দক্ষিণের রাফাহ শহরে ২ জন ছিলেন। ইউনিসেফের তথ্যমতে, গত ১৫ মাসে গাজায় প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন শিশু নিহত হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হিউম্যান রাইটস-এর প্রধান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরাইল গাজার রেমাল পাড়ার একটি বাড়িতে বিমান হামলা চালায়। এতে আশ্রয় নেওয়া এক ফিলিস্তিনি মানবাধিকারকর্মী, তার স্ত্রী ও চার সন্তানসহ প্রাণ হারান।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪৬,৮৭৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১০,৬৪২ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে, হামাসের ওই হামলায় ইসরাইলে অন্তত ১,১৩৯ জন নিহত হয় এবং ২০০ জনেরও বেশি ইসরাইলি বন্দি হয়।

ইসরাইলের বিচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে ৭৩৭ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ইসরাইল সরকার এই বন্দিদের মুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। এর বিনিময়ে হামাস ৩৩ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNRWA) জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে মানবিক সংকট লাঘবে ৪,০০০ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। বিভিন্ন মানবিক সংস্থাও ত্রাণ বিতরণের জন্য প্রস্তুত। গাজার স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হলে সড়ক থেকে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হবে। তবে ফিলিস্তিনি পুলিশ সতর্ক করেছে, বিশেষ করে রাফাহ শহরের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় অবিস্ফোরিত বোমা থাকতে পারে, তাই বাসিন্দাদের তাদের বাড়ির কাছে যেতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের প্রতিরোধকে অভিনন্দন জানিয়ে হিযবুল্লাহ প্রধান নাইম কাসেম বলেছেন, এই চুক্তি ফিলিস্তিনের দৃঢ় প্রতিরোধের প্রমাণ। তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের মে মাসে প্রস্তাবিত চুক্তির সঙ্গে এটি অপরিবর্তিত ছিল, যেখানে ইসরাইল তার লক্ষ্য পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু হামাস তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সক্ষম হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, লেবাননের গোষ্ঠীগুলোর প্রতিরোধ গাজার বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

Advertisements