জুলাই গণঅভ্যুত্থানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান মীর মুগ্ধ হত্যার ঘটনায় তার পরিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছে। বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে এসে অভিযোগ করেন শহীদ মুগ্ধের যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ এবং বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত।
অভিযোগ দাখিলের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, মুগ্ধের গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে প্রথম দিকে বিভ্রান্তি ছিল— গুলি পুলিশের পক্ষ থেকে এসেছে নাকি বাইরের কেউ চালিয়েছে, অথবা স্নাইপার ব্যবহার করা হয়েছে কি না। তবে পরিবারের হাতে থাকা তথ্য-প্রমাণ স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, পুলিশের গুলিতেই মুগ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তাদের সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজেও এটি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত জানান, গত ছয় মাসে হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ সংগ্রহের কাজ তাদের নিজেদেরই করতে হয়েছে। কারণ, প্রথম দিকে প্রশাসন কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভি ক্যামেরার রেকর্ড— সবকিছুই তারা নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করেছেন।
দীপ্ত আরও বলেন, মুগ্ধের হত্যাকাণ্ডের ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এটি প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল, পরিবারের নয়। এখন সরকারের প্রতি তাদের একমাত্র দাবি— ফরেনসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা এবং তাদের বিচারের আওতায় আনা।
তিনি বলেন, “আমরা ট্রাইব্যুনালে পুরো ঘটনার অভিযোগ দাখিল করেছি এবং প্রসিকিউটর এতে সম্মতি জানিয়েছেন। তবে আমরা প্রাথমিক অভিযোগে কারও নাম দিইনি। তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করা হবে। অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি কে দিয়েছে, তার ভিত্তিতেই একে একে নামগুলো উঠে আসবে।”
প্রশ্নের জবাবে দীপ্ত বলেন, “হত্যাকাণ্ডের দায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বর্তায়, তবে তথ্য-প্রমাণ ছাড়া সরাসরি সে পর্যন্ত পৌঁছানো কঠিন। বিচার প্রক্রিয়ায় প্রমাণই মুখ্য বিষয়। অপ্রমাণিত অভিযোগ করলে বিচারপ্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে, যা আমরা চাই না। আমাদের একমাত্র চাওয়া— ন্যায়বিচার।”
১৮ জুলাই মুগ্ধের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে দীপ্ত জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাত্র ১০ কদম দূরেই হাসপাতাল ছিল, যেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু সেখানেও তাদের পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়। ডাক্তাররা দ্রুত লাশ নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন, কারণ পুলিশ এসে লাশ আটকে দিতে পারে। এরপর তারা দ্রুত ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে লাশ বাড়িতে নিয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, “মুগ্ধের লাশ দাফনের ক্ষেত্রেও আমাদের নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। দাফনের জন্য পুলিশের অনুমতি (এনওসি) প্রয়োজন হয়। কিন্তু থানায় গেলে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাদের এখন কোনো কাগজে পর্যন্ত স্বাক্ষর করার অনুমতি নেই।”
মুগ্ধের পরিবার আশা করছে, সরকার ও ট্রাইব্যুনাল যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনবে এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।