ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস অবশেষে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এই চুক্তি সম্পন্ন হয় বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস আল-জাজিরা আরবিকে জানিয়েছে যে, তাদের প্রতিনিধিদল মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। তবে ইসরাইল এখনও এই প্রস্তাবের প্রতি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরাইল এবং হামাস ছয় সপ্তাহের জন্য একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরাইল ধীরে ধীরে গাজা থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে এবং আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেবে। বিনিময়ে, হামাসের হাতে আটক ইসরাইলি পণবন্দীদেরও মুক্তি দেওয়া হবে।
ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, হামাস কাতারে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি এবং ‘জিম্মি’ প্রত্যাবর্তনের প্রস্তাবে মৌখিক অনুমোদন দিয়েছে। তবে চূড়ান্ত লিখিত অনুমোদনের জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।
চুক্তির শর্ত নিয়ে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে
এখনো পর্যন্ত দু’পক্ষের মধ্যে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি বিষয়ে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে বলে আলোচকরা জানিয়েছেন। তবে এগুলোর বিস্তারিত নিয়ে এখন ‘দরকষাকষি’ চলছে।
জানা যাচ্ছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য গাজা ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলি সৈন্য সরিয়ে নেয়ার যে শর্ত ছিল হামাসের, সেটি তারা প্রত্যাহার করেছে।
জানা গেছে, উভয়পক্ষ একমত হয়েছে যে প্রথম দিন হামাস তিনজন পণবন্দীকে মুক্তি দেবে। অন্য দিকে জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে শুরু করবে ইসরাইল।
সাত দিন পরে হামাস আরো চারজন পণবন্দীকে মুক্তি দেবে।
অন্যদিকে গাজার দক্ষিণ এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষজনকে উত্তরের এলাকায় ফেরার সুযোগ দেবে ইসরাইল। তবে তাদের উপকূলীয় সড়ক ধরে পায়ে হেঁটে ফিরতে হবে।
সালাহ-আল-দিন সড়ক দিয়ে গাড়ি, পশুচালিত যানবাহন ও ট্রাক চলাচল করতে দেয়া হবে। তবে কাতার ও মিসরের কারিগরি নিরাপত্তা বাহিনী পরিচালিত একটি এক্সরে মেশিনের মধ্য দিয়ে এগুলোকে যেতে হবে।
চুক্তিতে বলা হয়েছে, প্রথম দফায় ৪২ দিনের জন্য ফিলাডেলফি করিডোরে ইসরাইলি সৈন্যরা অবস্থান করে উত্তর আর দক্ষিণ সীমান্তের মধ্যে ৮০০ মিটার লম্বা একটি বাফার জোন নিয়ন্ত্রণ করবে।
একইসাথে ইসরাইল এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে কারাগার থেকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯০ জন রয়েছে, যারা ১৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে কারাভোগ করেছেন। বিনিময়ে হামাস ৩৪ জন পণবন্দীকে মুক্তি দেবে।
চুক্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় নিয়ে আলোচনা করতে যুদ্ধবিরতির ১৬তম দিনে আবার বৈঠকে বসবেন আলোচকরা।
উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ২০ জানুয়ারির মধ্যে (তার শপথ গ্রহণের দিন) যুদ্ধবিরতি না হলে দোজখ নেমে আসবে।
রোববার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পরদিন সোমবার কাতারের আতিন শেইখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সাথে তিনি কথা বলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় হামাস। সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় আর ২৫১ জনকে পণবন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইল আক্রমণ শুরু করে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৬০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২৩ লাখ গাজাবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা