প্রতি বছরই দ্য ইকোনমিস্ট তাদের বর্ষসেরা দেশ নির্বাচন করে, এবং ২০২৪ সালের সেরা দেশ হিসেবে এবার বাংলাদেশকে ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
দ্য ইকোনমিস্ট জানায়, সেরা দেশ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে শুধু ধনী, সুখী বা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে নয়, বরং আগের ১২ মাসে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করা দেশকে এই সম্মান দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের সেরা দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নির্বাচিত করা হয়েছে, যা গত এক বছরে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও অগ্রগতির সাক্ষী হয়েছে।
এই বছরের সেরা দেশ নির্বাচনের চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাঁচটি দেশ— বাংলাদেশ, সিরিয়া, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পোল্যান্ড। এর মধ্যে বাংলাদেশের নাম চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশ এক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে এবং পরিবর্তনের পথে অগ্রসর হয়েছে। এই পরিবর্তনটি আসে ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে, যার ফলস্বরূপ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে শাসন করা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
বাংলাদেশের পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, শাসনব্যবস্থায় যে ব্যাপক দুর্নীতি ও দমন-পীড়ন ছিল, তা থেকে দেশ বেরিয়ে এসেছে। বিশেষত, শাসক শেখ হাসিনার শাসনামলে ব্যাপক দুর্নীতি এবং বিরোধীদের ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে একটি অস্থায়ী সরকার ক্ষমতায় এসেছে, যা দেশটির ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এই সরকার শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করেছে।
তবে, বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ২০২৫ সালে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া পুনরায় সুষ্ঠু করতে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে নিরপেক্ষ আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও বিরোধী দলগুলোর জন্য সংগঠিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করাও অন্যতম।
এ বছরের সেরা দেশ নির্বাচনে রানারআপ হয়েছে সিরিয়া, যেখানে সম্প্রতি বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পোল্যান্ডও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থান পেয়েছে, তবে বাংলাদেশ এই বছরের সেরা দেশ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
গত বছরের (২০২৩) সেরা দেশ ছিল গ্রিস, যারা দীর্ঘ আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠেছে এবং একটি সংযত মধ্যপন্থী সরকার পুনর্নির্বাচিত করেছিল।
বাংলাদেশের এই পরিবর্তন ও উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়ায় ২০২৪ সালে বিশ্বের সেরা দেশ হিসেবে নির্বাচিত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।