ইমতিয়াজ আহমেদ এবং তাঁর স্ত্রী নিলা আহমেদের বিয়ের বেশ কয়েক বছর চেষ্টার পরও বাচ্চা হয়নি। অনেক চেষ্টা করেও তাঁরা সন্তানের মুখ দেখতে পারেননি। সেই সময়ে বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা করানোর পরও কোনো ফল আসেনি। বিদেশে চিকিৎসার ব্যর্থতা তাঁদের হতাশ করলেও তাঁরা হাল ছাড়েননি। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা একটি সন্তানের মুখ দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁদের জীবনের সেই কঠিন যাত্রার গল্প শুধু কষ্ট আর চ্যালেঞ্জের নয়, এটি অধ্যবসায় এবং নিরলস চেষ্টার মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণের একটি উদাহরণ।
২০০২ সালের শেষের দিকে তাঁরা ঢাকার “হারভেস্ট ইনফার্টিলিটি কেয়ারে” চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এখানে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং সর্বাধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁদের জীবনে আসে কাঙ্ক্ষিত সুখবর। তাঁদের প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করে ১৪ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটে, এবং তাঁদের পরিবার পূর্ণতা পায়।
এই সন্তানের জন্ম তাঁদের জীবনে শুধু একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা নয়, এটি ছিল তাঁদের ধৈর্য এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। সম্প্রতি তাঁদের সন্তান ২১ তম জন্মদিন উদযাপন করেছে। এটি শুধু তাঁদের পরিবারের জন্য নয়, তাঁদের পরিচিতদের জন্যও ছিল এক আনন্দঘন মুহূর্ত।
ইমতিয়াজ এবং নিলা আহমেদ তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলেন, “আমরা কখনো আশা হারাইনি। হারভেস্ট ইনফার্টিলিটি কেয়ারের চিকিৎসক এবং স্টাফদের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ। তাঁদের সাহায্যেই আমাদের এই আনন্দঘন জীবন সম্ভব হয়েছে।”
তাঁদের এই গল্প শুধু একটি পরিবারের নয়, এটি প্রতিটি দম্পতির জন্য একটি অনুপ্রেরণা যারা মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের স্বপ্ন নিয়ে সংগ্রাম করছেন। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক অসাধ্য সাধন সম্ভব। ইমতিয়াজ এবং নিলার গল্প সেই সম্ভাবনারই উদাহরণ।
বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে আধুনিক এবং বিশ্বমানের ফার্টিলিটি সেন্টার। হারভেস্ট ইনফার্টিলিটি কেয়ারসহ আরো অনেক উন্নত সেন্টার এখন দেশের মাটিতেই দম্পতিদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং দক্ষ চিকিৎসকদের প্রচেষ্টার ফলে এখন আর ভারতের মতো বিদেশি দেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশের এই ফার্টিলিটি সেন্টারগুলো শুধু চিকিৎসার জন্য নয়, এটি মানসিক সমর্থন এবং আশার কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করছে। প্রতিটি দম্পতিকে এখানে তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য সর্বোচ্চ যত্ন এবং ভালোবাসা প্রদান করা হয়। উন্নত প্রযুক্তি, সাশ্রয়ী খরচ, এবং সহজলভ্য সেবা দেশীয় দম্পতিদের জন্য এই সেন্টারগুলোকে আদর্শ গন্তব্যে পরিণত করেছে।
ইমতিয়াজ এবং নিলার মতো অসংখ্য দম্পতি প্রমাণ করেছেন যে আশা এবং অধ্যবসায় কখনো বৃথা যায় না। তাঁদের এই অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা অন্যদেরকেও নতুন করে স্বপ্ন দেখতে এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে। সন্তান জন্মের এই গল্প একটি পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমাজের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।