‘রোড ম্যাপ’ – আসলে কাদের দাবী? বলে না যে, নাই চাইতেই পানি; এটা একেবারে সেই অবস্থা! ভারত নিজেই স্বীকার করে দিয়েছে যে ইউনুস সরকারের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে কেবল রোড ম্যাপ প্রকাশের দাবী আসলে ভারতের দাবী। এই অর্থে বিএনপি ও জামায়াতের দাবিটা হলচ্ছে ভারতের পক্ষে ঠুট মিলানো বা লিপ সার্ভিস! গতকালকে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক লেখায় এসব কিছু উঠে এসেছে!
এর লেখক শুভজ্যোতি ঘোষ! বহুবার আমার লেখায় তাঁকে পরিচিত করিয়েছি যে বিবিসি বাংলার লেখক কলকাতার এই শুভজ্যোতি কলকাতার আরএসএস এর নেতা তথাগত রায়ের আমল থেকে তাঁর হাতে একেবারে বায়াত নেয়া এক মুরিদান, কথিত সাংবাদিক এই শুভজ্যোতি ঘোষ। মানে, আগে বলেছি বিদেশি (ইউরোপীয় বা আমেরিকান) প্রচারিত কোন বাংলা মিডিয়া কখনই অর্থনৈতিকভাবে ভায়াবল মানে স্টাফদের বেতনও যোগাড়ের মত আয় করতে পারে না। তাই বিবিসি বা ডয়েচ ভেলে বা একালের ঠিকানা এসব মিডিয়াই হল ‘র’-এর বাচ্চা প্রসবের জায়গা। কারণ ‘র’-এর প্রপাগান্ডা করতে এরা নিজের পেজ বা ব্রডকাস্টিং টাইম ভাড়া দেওয়া এসব কাজ করেই কেবল দুইটা পয়সার মুখ দেখতে পারে – এসব বিদেশি কথিত মিডিয়া! তাই একে বিবিসি বাংলা এর উপর সাথে মুরিদ শুভজ্যোতি ঘোষ এদুইয়ের কম্বিনেশন মানেই হল এক ‘র’-এর কোন প্রপাগান্ডা বয়ান এখানে প্রসবিত হবে। হয়েছেও তাই!
গতকাল সকালে এই লেখাটা প্রকাশিত হয়েছিল।“হিন্দু, হাসিনা, হতাশা : যে সব কারণে দিল্লি ও ঢাকার সম্পর্ক কিছুতেই সহজ হচ্ছে না” – এই লম্বা শিরোনামে বিবিসি বাংলায় এক লেখা ছাপা হয়েছে।
যেন মোদি আর ‘র’-এর লোকেরা রাগ দেখিয়ে বলেছিল আর কোনদিন ভাত খাবে না। ভেবেছিল অনেকেই সাধাসাধি করবে! কিন্তু এখন কপাল খারাপ সাধাসাধি দূরে থাক কেউ ডাকেও না যে আসেন চারটা ভাত খান – এখন এমন ফাঁদে পড়ার দশা হয়েছে ভারতের। আর বিবিসি বাংলায় এই প্রপাগান্ডা লেখার শেষ দুই বাক্য হল এরকমঃ
তবে অন্তর্বর্তী সরকার সে দেশে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলে দিল্লির এই মনোভাবের পরিবর্তন হতে পারে, সেই ইঙ্গিতও কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে।
অর্থাৎ সারকথায় বলতে চাচ্ছে যে, “যতদিন না সেটা বাস্তবে ঘটছে, দিল্লি ও ঢাকার শীতল কূটনৈতিক সম্পর্কের বরফ গলবে সেই সম্ভাবনা সত্যিই আসলে খুব ক্ষীণ!”।
তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনই রোড ম্যাপ দাও বনাম ইউনুস সরকারের সংস্কার – এই প্রধান ইস্যুতে সোচ্চার হিসাবে বিএনপি ও জামায়াত এদুই দলকে আমরা সাদা চোখে দেখতে পেলেও আসলে রোড ম্যাপ ঘোষণা চাওয়ার প্রকৃত দাবিদার কী এর মানে ভারত????
তাহলে এদুই দল কী মোদির মুখপাত্র? এডভান্স পার্টি? অগ্রগামি ভারতীয় চাওয়া ইঙ্গিতে বলার দল? সেকারণেই শুভজ্যোতি লিখছেন – “……অন্তর্বর্তী সরকার সে দেশে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলে দিল্লির এই মনোভাবের পরিবর্তন হতে পারে” ?
মানে তখন আরেকবার ডাকিলে মোদি খাইতে আসিবে???
বুঝা যাচ্ছে বিবিসি বাংলার “এই লেখা” এদুই দলকে ভালই ভুগাবে!!!! কারণ, এই লেখা প্রকাশ করিয়ে ভারত তার মনবাসনা উদাম করেছে।
ইতোমধ্যেই এ দুইদল (বিএনপি ও জামায়াত) তারা “আওয়ামি লীগ নিষিদ্ধের” মধ্যে নাই; অথবা “নিষিদ্ধ জনগণ করবে“; অথবা আরেক দল জামায়াত – বারে বারে ফ্যাসিবাদ বলে ডাকতে না করেছেন, পছন্দ করেন না জানিয়েছেন; কারণ উনারা নাকি সবাইকে নিয়েই ‘সংসার’ করতে চান…। এসব বক্তব্যের সমালোচনায় মিডিয়া এমনিতেই উপচে উঠে আছে অবস্থায় যখন। তখনই বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এই কান্ড এসেছে!!!
শুভজ্যোতির এই লেখার শিরোনাম থেকেই আসি। শুভজ্যোতি খোলাখুলি – হিন্দু, হাসিনা ও হতাশা – শব্দ ব্যবহার করেছেন।
মানে – হিন্দু বলতে – এতদিন জোটবদ্ধ মোদি-হাসিনার যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে “হিন্দু নির্যাতন হচ্ছে” বলে যে এরা দাপায়ে বেরিয়েছিল তা তাদের কাঙ্খিত ফল দেয় নাই বা ফল আনে নাই এটাই বুঝাচ্ছে যেন। তাই মোদি-হাসিনার এই ‘জুটি’ এখন হতাশ????
ফলে নয়া লাইন হল বিবিসি বাংলা – একে পয়সা দিয়ে কিনে –কেন মোদির ভারত রাগ দেখিয়ে গুসসা ঘরে খিল-দরজা আটকিয়ে বসে আছে তা – এখন এরা নিজেরাই তা জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
এছাড়া এই প্রপান্ডা লেখায় অদ্ভুত সব তথ্য দেয়া হয়েছে।যেমন এক ডক্টরেট ডিগ্রীধারী ডঃ শুভ্রকমল দত্ত এর কথা বলা হয়েছে। পরিচয় বলা হয়েছে – বিজেপির ঘনিষ্ঠ পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ শুভ্রকমল দত্ত! মানে এক সাংঘাতিক ব্যাপার! ডক্টরেট ডিগ্রীধারী তাহলে নিশ্চয় তিনি জ্ঞানী, এর উপরে তিনি নাকি আবার “পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ” !
কিন্তু তিনি কী বলছেন,“সারা বিশ্বে নির্যাতিত হিন্দুদের সুরক্ষার ভার যে নরেন্দ্র মোদী সরকার নিজে থেকেই নিয়েছে বলে বারবার ঘোষণা করেছে – তাদের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে নীরব থাকা সম্ভব নয় বলেই বিজেপি নেতারা যুক্তি দিচ্ছেন।
এর মানে – বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষার ভার মোদি সাব নিজেই নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন – খোলাখুলিই এটা বলছেন।
তাহলে, এখন একইভাবে ভারতীয় মুসলমানদের সুরক্ষার ভার যদি ইউনুস সাহেব নিজে থেকেই নিতে চান সেটা কী এই জ্ঞানী সুভ্রকমল বা খোদ মোদি সাহেব স্বাগত জানাবেন? এই দত্ত সাব নাকি আবার কথিত “পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ”!!! তাহলে এই কী বিশেষজ্ঞের নমুনা??? এটা কী কোন দেশের পররাষ্ট্রনীতি হতে পারে যেমন, – মোদি স্বেচ্ছায় বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষার ভার নিজ হাতে উঠায় নিলেন?
আবার বাংলাদেশের কোন হিন্দু যদি এতে মোদির হাতে সুরক্ষা পেতে নিজেকে সঁপে দেন তাতে কী তিনি এরপরেও বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে থাকতে পারেন? নাকি এটাই নিজদেশের প্রতি আনুগত্যহীনতার প্রকাশ হয়ে হাজির হবে? দেখা হবে নাকি? বাংলাদেশের কোন হিন্দু নাগরিকের অধিকার বিনষ্ট হলে নিজ দেশের আদালত, সরকার, সমাজ, নিজ জনগণ ইত্যাদি সবার কাছে নালিশ নিয়ে যেতে পারেন; চাইকি বিদেশি অধিকারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠনের কাছে বা জাতিসংঘের আদালতেও যেতে পারেন; আন্দোলন করতে পারেন, গণঅভ্যুত্থান পর্যন্তও যেতে পারেন!!! এভাবে নিজদেশের সরকার, কনষ্টিটিউশন আইন ইত্যাদি সব বদলে ফেলতে পারেন। এটাই হতে পারে তাঁর দাবী আদায়ের একমাত্র ও সদর রাস্তা।
কিন্তু বিপরীতে সদর রাস্তা ফেলে বাংলাদেশের কোন হিন্দু নাগরিক যদি আরেক রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে নিজ সুরক্ষা চাইতে যান, তাকে আপন সুরক্ষাদাতা ক্ষমতা মনে করেন তবে এটাই প্রকৃত রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে! কারণ এটা সার্বভৌমত্ব ও আনুগত্যের প্রশ্ন যা আপনি লঙ্ঘন করেছেন।
কারণ, মোদি তো ইউনুস সাহেব (বা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব) এর উপরের কোন কর্তা নন হতে পারেন না যে, ধমকায়ে দিবেন!!! আপনি বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিক প্রকৃতই কোন নির্যাতিতা হলেও আরেক রাষ্ট্রের সরকারপ্রধানের আনুগত্য করতে পারেন না। অথচ আপনাকে এটা করাতেই উস্কানি দিয়ে চলেছে মোদি ও তাঁর চেলা এই সুভ্রকমল গংয়েরা!!!! একই কারণে, মোদি খায়েশ করলেও সারাবিশ্বের হিন্দুদের সুরক্ষার দায় নিতে বা রক্ষকর্তা হতে খায়েশ উঠায় নিতে পারেন না। ঠিক যেমন ভারতের মুসলমান সুরক্ষাদাতা হিসাবে ইউনুস সরকারকে মোদি এলাও করবেন না। “পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ” সুভ্রকমলও এলাও করবেন না যদি তিনি প্রকৃতই “পররাষ্ট্রনীতি” জিনিষটা কী এর নুন্যতম কিছু বুঝে থাকেন!
এরপরেও শুভ্রকমল দত্ত সাব থামেন নাই। শুভজ্যোতি বলছেন শুভ্রকমল দত্ত নাকি এমনও বলছেন, – “বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর এই নির্যাতন অব্যাহত থাকলে ভারতের উচিত হবে ড. ইউনূসের সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা – যেমনটা করা হয়েছে আফগানিস্তানে তালেবান শাসকদের সঙ্গেও!”।
কথা হল দেখাই তো যাচ্ছে ভারত আফগানিস্তানে শেষে যেয়ে কি করেছে! য়ার বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখতেছি বরং অর্থ ঘুষ দিয়ে শুভজ্যোতিকে কিনেছেন, বিবিসি বাংলার এই পাতা বা স্পেস-টা কিনেছেন। আর এই জ্ঞানি দত্ত সাবও এখানে এসে আবোল-তাবোল বকছেন! আর ওদিকে আফগানিস্তানে কী হয়েছে? ভারত কী করতে পেরেছে? শেষে ঐ তালেবান আমীর সরকারের কোলেই কী মোদি আবার ঝাঁপায় পরেন নাই??? কাজেই যে “রাগের কোন দাম” বা বাজারমুল্য নাই তা দেখাতে যান কেন?
আসলে ভুয়া রাগের দাম না পেয়ে মোদি ক্ষেপে গেছেন। তাই এখন তাদের রাগের পক্ষে সাফাই কী ছি তা জাহির করতে বিবিসিকে ভাড়া নিছেন! তাই শুভজ্যোতি লিখেছেন, “ফলে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা বা অত্যাচারের আসল মাত্রা যতটাই হোক, বিষয়টা ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্কে ছায়াপাত করছে খুব গভীরভাবে”।
পেটি ভারতীয় কুটনীতিকঃ
কিছু ভারতীয় কূটনীতিক হন মফস্বলী, অসভ্য এবং সর্বোপরি পেটিবুর্জোয়া বা পেটি মধ্যবিত্ত ঘর থেকে উঠে আসা ফলে মানসিক চিন্তায় নিম্ন পরিসরের। দুনিয়ার বড় দিকটা যারা কখনই দেখে নাই, দেখতে পাবেন না। এমন একজন হলেন পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী যিনি ১/১১ এর আমলে ঢাকায় ভারতীয় রাষ্ট্রদুত ছিলেন। এখন এক থিঙ্কট্যাংক ফাউন্ডেশনে [ORF] যুক্ত আছেন। বিবিসি বাংলার এ’লেখায় এমন কূটনীতিক আরেকজনের নাম আনা হয়েছে – নাম বলেছে – “শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ টিসিএ রাঘবন”।
তৃতীয় আরেকজনের কথা বলা হয়েছে কিন্তু তার নাম লুকিয়ে উহ্য রাখা হয়েছে। যিনি উপরে উল্লেখিত পিনাক ও রাঘবন এদুইজনের একজন বলে অনুমান! সবচেয়ে বাজে ও অসভ্য ও মিথ্যা কথাগুলো বলা হয়েছে তার নামের আড়ালে! আর অসভ্য ভাষায় কথা বলার অভ্যাস কলকাতার বাঙালি পিনাক রঞ্জনের যা তিনি অতীতে ঢাকায় থাকতেও অনেকবার স্বাক্ষর রেখেছেন। এমনকি তিনি আরেক সাবেক রাষ্ট্রদুত বিনা সিক্রি (যিনি হয়ত হিন্দুত্ববাদিতা অবস্থানের বিচারে পিনাকের চেয়েও বড় হিন্দুত্ববাদি ) কিন্তু পিনাক রঞ্জন অসভ্যতা দেখানোর প্রশ্নে এদের সবাইকে ছাড়িয়ে!
যেমন, বিবিসি বাংলায় লেখা হয়েছে এভাবে, “ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন, এমনই একজন সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা যেমন বিবিসিকে বলছিলেন – মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকার পূর্ণ মর্যাদায় ও সমানে-সমানে ডিল করবে ‘এটা আসলে আশা করা উচিতই নয়!’
এটা এক ঘোরতর বেয়াদবি-মূলক বাক্য ও উচ্চারণ নিঃসন্দেহে! কোন পেশাদার কূটনীতিক বেনামেও এমন বাক্য বলবেন না! কারণ ভদ্র ভাষা ও ঠান্ডা মাথায় কড়া কথা বলাটাই তো কূটনীতিক পেশাদারিত্বের কাজ!
অথচ এখানে দেখেন নাম ছুপানো সেই লোক অবলীলায় বলছেন, বাংলাদেশকে মোদি সরকার নাকি – “পূর্ণ মর্যাদায় ও সমানে-সমানে ডিল” করবে না। তাও আরো সেটা বলতেছেন বাংলাদেশের বা ইউনুস সাহেবের সেটা নাকি – “আশা করা উচিতই নয়”।
এই হল, হুশ হারানো উগ্র হিন্দুত্ববাদি ও অপেশাদারি ক্ষুদ্রমনের মানুষের কথা বলার স্টাইল! আসলে এটা নেহেরুর মধ্যেও ছিল সেই ধারাবাহিকতাই! শাসক বলতে তিনি কলোনি শাসকের অনুকরণে নিজেকে শাসক বুঝতেন – সেই বুঝেরই প্রতিধ্বনি! নেহেরু কখন বুছতেই পারেন নাই যে ১৯৪৫ সালে বিশ্বযুদ্ধ শেষের – পরের দুনিয়াটা মানে কি? তা হল সকলেই তখন থেকে এক কলোনিমুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র এরই দুনিয়া। তাই কূটনৈতিক অর্থে ডিলিংয়ে ছোট-বড় সব রাষ্ট্র সকলেই একে-অপরের ভিন্ন-রাষ্ট্রের সাথে ও চোখে সমান মর্যাদার ও সম্মানীয়! কারণ হল, এখানে আরেক ভিনরাষ্ট্র ক্ষুদ্র বা সামরিক দিক থেকে কিছুই না তা হলেও ঐ ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জনগণ তারা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তাই তখন থেকে এই রেওয়াজ; ছোট-বড় প্রত্যেক রাষ্ট্রই অপর রাষ্ট্রকে এই মান্যতা ও সম্মান না দিলে ১৯৪৫ সালের পরের দুনিয়ায় চলা অসম্ভব বা পাশাপাশি জাতিসংঘের আসরে দুই দেশের প্রতিনিধির পক্ষে বসা সম্ভব নয়! কিন্তু নেহেরুর মত একটা কলোনি-মনের মানুষ বলে তিনি এটা উপলব্দিই করতে পারেন নাই। কারণ, পুরানা অধস্তন বৃটিশ রাজপ্রতিনিধি চাকর বা ভাইসরয় হওয়া ছিল নেহেরুর মডেল! তাই স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে যতটা তিনি গর্ব করতে পারেন না, এরচেয়ে নিজেকে কল্পনায় ভাইসরয় ভাবতে বেশী সুখ স্বস্তি পেতেন!
সে যাক, অসভ্য লোকেরাও তো সমাজেই থাকে! এবার আসল জায়গায় আসি। কেন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় যাবার বা পাবার লোভে আত্মহননকারি বা নিজ অস্বস্তিত্ব বিলিঙ্কারি হয়ে উঠেছে তা আমরা দেখব।
শুভজ্যোতি এরপরের বাক্য লিখছেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রাক্তন রাষ্ট্রদূতের কথায়,
“ড. ইউনূসকে বলব, আপনার সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তি কী, সেটাই তো স্পষ্ট নয়! আর আদৌ যদি কোনও বৈধতা থেকে থাকে – সেটা নব্বই দিনের বেশি নয়, আর তাও শুধু নির্বাচন আয়োজনের জন্য!”
“সেই জায়গায় আমরা কী দেখছি, নব্বই দিন কেটে গেছে আর আপনারা দেশ সংস্কারে নেমেছেন! ইন্টারভিউ দিয়ে বলছেন, তিস্তা সহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন হতে হবে সমতা আর ন্যায্যতার ভিত্তিতে।”
“আরে বাবা, ভারত আপনাদের সঙ্গে তিস্তা নিয়ে কথা বলতে যাবে কোন দুঃখে?”
এই হল বিবিসি বাংলার লেখাটার আসল জায়গা; যে মোদির সরকার কেন ইউনুস সরকারের সাথে কথাই বলবে না, বাংলাদেশের কোন সরকার বলে প্রায় স্বীকারই করবে না; বরং উলটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাবভারসিভ [subversive] বা গোপন নাশকতামূলক কাজ বা গুপ্ত আক্রমণে ষড়যন্ত্রের পথে – কখনও হিন্দু নির্যাতন তো কখনও ইসকনের তান্ডব; অথবা কখনও ১৫ আগষ্টে ৩২ নম্বর বা ১০ নভেম্বরের জরো পয়েন্ট ইত্যাদিতে হাসিনাকে দিয়ে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের নোংরা [nasty] পথে আগাবে – ইউনুস সরকারকে নিয়মিত ডিস্টার্ব ও উস্কানি তৈরি করবে। কারণ, মোদির গোষ্ঠি দেখাতে চায় তারা ইউনুস সরকারকে মানে না। কিন্তু ঠিক কেন এমন কঠোর শাস্তি? কারণ, ঐ পরিচয় লুকানো লোক বলে দিচ্ছেন, ইউনুস সাহেব কেন – “……ইন্টারভিউ দিয়ে বলছেন, তিস্তা সহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন হতে হবে সমতা আর ন্যায্যতার ভিত্তিতে।”
মানে হল, আমাদের ইউনুস সাহেব এই যে দাদাদের মুখের উপরে এত বড় কথা – সমতা আর ন্যায্যতার ভিত্তিতে পানির হিস্যা দাবী করছেন – এটা মোদি সাব মেনে নিতে পারেন নাই! এজন্যই তিনি (ঐ গুপ্ত কূটনীতিক) বলছেন ইউনুস সরকার যেন মোদি সরকারের কাছে “পূর্ণ মর্যাদায় ও সমানে-সমানে ডিল” আশা না করেন! বাংলাদেশ রাষ্ট্র নিজ মর্যাদায় নিজ হিস্যা চাইতে পারবে না – এই হল মোদির সার কথা।
বরং যত তাড়াতাড়ি ইউনুস সরকারকে খেদিয়ে বিএনপি (সাথে বিরোধিদলের আসনে জামায়াত) কে সরকারে বসানো যায় এরই এক নির্বাচনি রোড ম্যাপ দেখতে এজন্য ভারত উদগ্রীব! আর এখানে রোড ম্যাপ রোড ম্যাপ বলে এই একটাই ভাষ্যে ভারত-বিএনপি-জামায়াত সবাই সবার একাকার এবং একই স্বার্থে।
তাই পরিস্কার করেই বলছেন, “আরে বাবা, ভারত আপনাদের সঙ্গে তিস্তা নিয়ে কথা বলতে যাবে কোন দুঃখে?”
কারণ তাদের হাতে আছে একই রোড ম্যাপ আকাঙ্খাকারি বিএনপি (সাথে হবু বিরোধিদল জামায়াত)।
ভারত তার এই হস্তক্ষেপ-আকাঙ্খি অবস্থানের পক্ষে সাফাইয়ে ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে বলছে – “বাংলাদেশের মানুষের ভোটে জিতে আপনারা ক্ষমতায় আসেননি, আপনাদের কোনও ম্যান্ডেটও নেই এটা নিয়ে কথা বলার,” চাঁছাছোলা ভাষায় জানিয়ে দেন তিনি।
প্রথমত, এমন কথার মানে হল, এখনকার দুনিয়াতে ভারত হল একমাত্র রাষ্ট্র যে ইউনুস সরকারের পিছনে গণরায় বা ম্যান্ডেট আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। না আমেরিকা না ইউরোপীয় ইউনিয়ন, না চীন বা এশিয়ান কোন দেশ এনিয়ে এমন বোকার প্রশ্ন করেছে। কথা হল, বাংলাদেশের বাইরের আরেক কোন রাষ্ট্র এমন প্রশ্ন করার কে, ভারত কী বাংলাদেশের নিজ জনগণের উর্ধে কেউ? তার উর্ধে উঠছেন? বোকারাই তো এমন বোকার প্রশ্ন করতে পারে।
এর মানে ওই কথিত রাষ্ট্রদুত ধরে নিয়েছেন তিনিই বাংলাদেশের সংবিধানের ব্যাখ্যাদাতা। আর ইউনুস সরকার হল যেন কেবল নব্বই দিনের এক তত্বাবধায়ক সরকার! সম্প্রতি ইউনুস সরকার সংবিধানে হাত দিতে পারবে না – বলে বিএনপির প্রায়ই এমন হাত দিবার বিরুদ্ধে আপত্তি ও হুশিয়ারি তুলে থাকে। সেটা কী তাহলে এজন্যই? এমনকি বর্তমান এটর্ণী জেনারেল যিনি বিএনপি চেয়ারম্যানের ‘বিশেষ’ তিনিও এখন ইউনুস সরকারেরই এটর্ণী জেনারেল হয়েও এক বক্তৃতা করে দাবী করেছেন – কেন ইউনুস সরকার কনষ্টিটিশনে হাত দিতে পারেন না।
অর্থাৎ এখানেও ভারত-বিএনপি-জামায়াত সকলেরই কনষ্টিটিশন-ভক্ত হয়ে উঠার অদ্ভুত মিল দেখতে পাই আমরা। কনষ্টিটিশন যেন এক খুব পবিত্র জিনিষ ফলে এতে হাত লাগানো যাবে না এমন এক ফতোয়া!
এদের সকলের প্রতি কম কথায় বলা যাবে এমন কিছু বলিঃ
আমাদের বিগত ১/১১ এর সরকার, এটা ছিল হাসিনা ও ভারতের (বিশেষ করে তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির কাছে) খুবই আপন ও পবিত্র সরকার এবং তাদের চোখে এক বৈধ সরকার।কিন্তু ১/১১ এর ক্ষমতাদখল কী আমাদের কনষ্টিটিশন অনুসারে বৈধ? আবার এটা কী নিজে কোন তত্বাবধায়ক সরকার মানে নব্বুই দিনের সরকার ছিল? [কোন ভাবেই না। এটা দুবছরের বেশী ক্ষমতায় ছিল।] যেমন টা এখনকার এই লেখার ‘পরিচয় লুকিয়া থাকা রাষ্ট্রদুত’ দাবী করছেন?তাহলে ১/১১ এর ফকুরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের সরকার কেন হাসিনা ও ভারতের কাছে পবিত্র ছিল? শুধু তাই না একতা মজার গল্প শুনেন!!!
এই মুখ লুকানো রাষ্ট্রদুত কিংবা প্রণয় ভার্মা বা মোদি সরকার – এরা ইউনুস সরকারকে প্রায় স্বীকারই করবেন না; বরং বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করবেন – এই হল তাদের অবস্থান। অথচ ভারত ১/১১ এর আমলে সে সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করেন নাই খবর নেন নাই। আর এমন ১/১১ এর ফকুরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের সরকার ছিল ভারতের কাছে সবচেয়ে আপন।
কত আপন?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব ১/১১ সরকারের আমলে একাধিক বার ঢাকায় এসেছেন – মানে এখনকার জয়শঙ্কর যেমন ইউনুস সরকারের সাথে ছুয়াছুয়িও এড়িয়ে চলতে চান সেকালে প্রণব ছিলেন এর একদম উলটা। মানে কনষ্টিটিউশনে বৈধতা খুঁজার দিক থেকে ১/১১ এর ফকুরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের সরকার বা এখনকার ইউনুস সরকারের অবস্থান এক হওয়া সত্বেও – প্রণব ঢাকায় এসেছিলেন। শুধু তাই নয় এসে কী করেছিলেন সেটাই বেশি ইন্টারেস্টিং!
হাসিনা তখন জেলে মানে সংসদ ভবন এলাকার একটা বাসাকে জেল ঘোষণা করে দেওয়া বাসায় বন্দি। অথচ প্রণব সাথে দুদেশের সরকারী কর্তা মানুষ নিয়ে হাসিনার সাথে দেখা করতেও গিয়েছেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কে ঐ টিমের সাথে ছিলেন এমন এক ব্যক্তির বর্ণনায় – সবাইকে পিছনে নিয়ে মন্ত্রী প্রণব হেঁটে যেতে যেতে সিড়ি পেরিয়ে যেখানে হাসিনা দাড়িয়েছিলেন ওয়েলকাম করার জন্য – ঠিক সেখানে পৌছানোর পরে ঘরে ঢুকেই প্রণব মুখের উপর সাথে সঙ্গী সকলকেই বাইরে রেখে দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়েছিলেন আর এভাবেই একান্তে ওয়ান-টু-ওয়ান হাসিনার কথা বলে নিবার ব্যবস্থাও করে নিয়েছিলেন।
এখন সেই পরিচয় লুকিয়ে কথা বলা কথিত রাষ্ট্রদুত যিনি ইউনুস সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করছেন – আপনাকে আঙুল তুলে জিজ্ঞাসা করি, ১/১১ সরকার কোন হিসাবে বৈধ ছিল, কিভাবে দুবছরের বেশী তারা ক্ষমতায় ছিল – এই প্রশ্ন সেসময় ভারত সরকারের ছিল না কেন?
বরং তুলনায় এখনকার ইউনুস সরকার আসার আগের বেলার রাস্তায় আন্দোলন, সেখানে গণউপস্থিতি, গণঅভ্যুত্থান প্রকাশ্য পাবলিক সমর্থন ইত্যাদি সবকিছু ছিল যার কোনটাই ১/১১ সরাকারের ক্ষেত্রে ছিল না। এককথায় ৫ আগষ্টের তুলনায় ১/১১ এর পক্ষে কোন পাবলিক সংশ্লিষ্টতাই ছিল না। গণ অর্থে পাবলিক রাস্তায় নেমে কোন কিছুকে বাধ্য করে নাই, সংশ্লিষ্টতাই ছিল না। কার্ফুর মধ্যে ঘরে বসে কান্ড দেখেছিল। অর্থাৎ তুলনায় ১/১১ সরকার ছিল আপনাদের নব্বুই দিনের সরকারের ফর্মুলার বুঝ অনুসারে আরো নিশ্চিতভাবেই অবৈধ। আর ১/১১ সরাকার অবৈধ বলে তার আয়োজিত কথিত নির্বাচনে হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানো এটাও ছিল অবৈধ – তাই নয় কী?
আসলে এসবের কিছুই মাপকাঠি না। মাপকাটি একটাই ভারতের স্বার্থ। নিজ স্বার্থে গেলে সবকিছু ভারতের চোখ বৈধ!!
তাহলে সারকথায়, ইউনুস সাহেবের মূল “অপরাধ” হল তিনি কেন “……ইন্টারভিউ দিয়ে বলছেন, তিস্তা সহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন হতে হবে সমতা আর ন্যায্যতার ভিত্তিতে”। এইটা তো হিন্দুত্ববাদের চোখে মহা ঔদ্ধত্য যা তাদের চোখে অমার্যণীয়!!! তাই তারা বাংলাদেশ সমমর্যাদার আরেক রাষ্ট্র বলে স্বীকার করবে না। তাই ভিসা, রেলওয়েসহ প্রায় সবকিছুই যোগাযোগে স্থবির!
তাই মোদি এখন আমাদের বিএনপি-জামায়াত কে সাথে নিয়ে ইউনুস সরকারের কাছে রোড ম্যাপের দাবী জানাচ্ছে। যাতে বিএনপিকে ক্ষমতায় এনে (জামায়াত বিরোধী দল) তাহলে এরপর আর সেই বাংলাদেশকে “সমতা আর ন্যায্যতার ভিত্তিতে” অধিকার দিতে হবে না। এতে শুরু হবে আরেক ১৬ বছরের দাসত্বের কালপর্ব।
উপরের এই সারকথাটায় যা যা লিখেছি এর সবকিছুই বিবিসি বাংলার শুভজ্যোতির লেখায় পরিস্কার করে দেয়া আছে – ফলে রেডি রেফারেন্স এটাই।
অবজারভার হিসাবে দূরে গ্যালারিতে বসেঃ
এখন অবজারভার হিসাবে গ্যালারিতে বসে দেখার মানে ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নয় এমন এক দর্শকের চোখ হয়ে কিছু কথা বলব।
প্রথমত, ভারত নিজেদের এসব ষড়যন্ত্র বা মনবাসনা বা অলীক কল্পনা যাই বলেন তা আর তারা নিজেরাই বুকে চেপে ধরে রাখতে পারছিল না। কারণ, ফলাফল আসছিল না। তাই বিবিসির পাতা কিনে তাতে ছেপে দিয়েছে। সেকথাও বিবিসিই লিখে দিয়েছে। বলছে, “এই উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকেই দিল্লিতে ক্ষমতার অন্দরমহলে বাংলাদেশকে ঘিরে জন্ম নেয় একটা ‘ফ্রাসট্রেশন’ বা হতাশা– যার প্রতিফলন এখন ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কেও দেখা যাচ্ছে”।
অর্থাৎ খোদ ভারতই নিজ এক অকেজো পদক্ষেপ নিয়ে তাতে কোন ফলাফল না আসাতে পরে নিজেই হতাশা ঢুবে গেছে। কারণ ফলাফল ঈস্পিত নয়।
এছাড়া আরেকটা মজার দিক ছিলঃ
তাদের আশা ছিল যে বাংলাদেশের অর্থনীতি খারাপ ছেড়াবেড়া করে থুয়ে গেছে হাসিনা আর তাই নিশ্চয় এটা শ্রীলঙ্কার মত খারাপ অবস্থায়! কিন্তু শ্রীলঙ্কা কেন? কারণ, শ্রীলঙ্কায় যেমন মোদি সরকার প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের বস্তগত সাহায্য (নগদ অর্থ নয় খাদ্য দ্রব্য ও সিলিন্ডার গ্যাস ইত্যাদি) পাঠিয়ে নিজ প্রভাবের হাত ঢুকানোর সুযোগ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কায়; তাই আশা করেছিল ইউনুসের সরকারও নিশ্চয় মোদিকে আব্বা ডেকে সাহায্যের হাত পাতবে!
কিন্তু ভাগাড়ের শকুনের সাঁপে বা বদদোয়ায় মহল্লায় গরু মরে না; এমন বদদোয়ার এফেক্ট নাই হয়না! তাই এর বদলে ওদিকে ইউনুস সরকার বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পেয়েছে বলে ভারতের খুবই গোসসা হয়েছে।
যেমন এপ্রসঙ্গে শুভজ্যোতি লিখেছে – “……বাংলাদেশ হাত পাতলেও সেটা পেতেছে পশ্চিমা দেশগুলো কিংবা বিশ্ব ব্যাঙ্ক-আইএমএফের কাছে– আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা ‘ডিফায়ান্ট’ বা পরোয়া-করি-না ভঙ্গি দেখানোর চেষ্টা করে চলেছে। এতে (ভারতের সাথে) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অস্বস্তি বেড়েছে নিঃসন্দেহে”।
আবার আরো লিখেছে – “তার আগের দেড় দশক ধরে শেখ হাসিনার জমানায় ভারত বাংলাদেশে যে পরিমাণ অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ‘লগ্নি’ করেছে, তার ভবিষ্যৎ এখন কী হবে সেটাও দিল্লিকে উদ্বিগ্ন করে তোলে”।
তাহলে এখন আগামিতে বাংলাদেশে কী হতে পারে?
এক.
সোজা ভাষায় বললে, ব্যক্তি ইউনুস ও তার সরকার “……ইন্টারভিউ দিয়ে বলছেন, তিস্তা সহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন হতে হবে সমতা আর ন্যায্যতার ভিত্তিতে” – এটা পরীক্ষিত ভাবে তিনি দেখাতে পেরেছেন। তার তা বলেই নিঃসন্দেহে এই লেখার বাজারে আলোচিত হতে থাকলে ক্রমশ এখন থেকে ইউনুস হয়ে উঠতে পারেন এখনকার হিরো!
শুভজ্যোতির এই লেখাটাই বরং এখন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ, আম-পাবলিকের কাছে সাক্ষ্য-দলিল হিসাবে হাজির হবে হয়ত – সেটা এই বলে যে তিনিই প্রথম ভারতের মুখের উপর বাংলাদেশের সমমর্যাদায় আপন স্বার্থগুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন। তিনি প্রণয় ভার্মাকে ডেকে নিয়ে এসব কথাগুলো বলেছিলেন। কাজেই তিনি হতে পারেন আমাদের অগ্রদুত ও এই খারাপ সময়ের ভারতীয় আধিপত্যবাদ-বিরোধিতার মডেল। তাতে তাঁর সরকারের অনেক অসফলতা তা যাই থাক সবকিছুই এখন এর পিছনে পড়ে থাকবে।
ব্যক্তি ইউনুস ও তার সরকার এভাবে যতই হিরো হয়ে উঠতে পারেন যদি ততই বিএনপি ও জামায়াত এদুই দল তাদের নিজ কর্মি সমর্থকদের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে তাদের নি সমথকদের সমর্থন হারানর অবস্থার দিকে পরিস্থিতি চলে যাবে।
আর ততই ইউনুসের সংস্কার তথাকথিত রোড ম্যাপ চাওয়া এই দাবির বিপরীতে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে ও জেনুইনলি রাজনৈতিকভাবে পাবলিকের গণস্বার্থের প্রধান লাইন হিসাবে উঠে আস্বেতে পারে।
দুই.
এর আবার সোজা অর্থ হল, বিএনপি ও জামায়াত ন্যুনতম গণস্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারি দল হিসাবে নিজের আসন-অবস্থান ঢিলা করে ফেলবে। আর এটা যতই ঢিলা হতে থাকবে বা একেবার আসনচ্যুত না হলেও ঢিলা বা দুর্বল দল হওয়া মানেই কিন্তু সমাজে নয়া রাজনৈতিক দলের চাহিদা তৈরি হওয়া। আর এখানে ততই প্রতিযোগিতায় বিএনপি ও জামায়াত নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা পিছনে পড়তে থাকবে এমন এক নয়া সমাজ হাজির হতে থাকবে। যার মূল বৈশিষ্ট হবে এন্টি ইন্ডিয়ান হেজিমনি – এই ভিত্তিতে এক বা একাধিক নয়া দলের উত্থান। সবচেয়ে বড় কথা বিএনপি ও জামায়াত সেক্ষেত্রে – সেগুলো সব কিংস পার্টি – বলে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেও পাত্তা পাবে না । কারণ, যখন বিএনপি ও জামায়াত বাদে এন্টি ইন্ডিয়ান হেজিমনির নয়া দল খুঁজতে মানুষ বের হওয়া হবে সেটাই হবে আগামিদিনের দিনের প্রধান চাহিদা – ডমিনেটিং অর্ডার অব দা ডে! তাই সেক্ষেত্রে তখন বিএনপি ও জামায়াত কতজন মানুষের কাছে কিংস পার্টি বানানোর অভিযোগ তুলবে? তুললেও সুবিধা করতে পারবে???
তাই খুব সম্ভবত সবচেয়ে স্বাভাবিক এক সামাজিক প্রক্রিয়া হিসাবে এই পালাবদল ঘটে যাবে। মূলকারণ, ইতোমধ্যেই বিএনপি ও জামায়াত আওয়ামি লীগ ও ভারতপ্রীতির দল হিসাবে প্রশ্ন বিদ্ধ। ‘ফ্যাসিজম বলা যাবে না’ ; “লীগ নিষিদ্ধ্বের কথা বলা যাবে না” বা “বলতে পারবে না” -ইত্যাদি ভাষ্যগুলো ইতোমধ্যেই আম-মানুষ ভালচোখে দেখে নাই। ভারতের চাটুকারিতা হিসাবে দেখেছে। বাকিটা রূপালি পর্দায় দেখব…… সেই পর্যন্ত!