ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইহুদ বারাক হামাস আন্দোলনের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থতার জন্য নেতানিয়াহুর চরমপন্থি মন্ত্রিসভাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছন এবং সেইসঙ্গে সতর্ক করেছেন যে নেতানিয়াহু ইসরাইলকে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
পার্সটুডে এবং আল জাজিরা নেটওয়ার্কের উদ্ধৃতি অনুসারে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা এবং বন্দী বিনিময়ের জন্য হামাস আন্দোলনের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইহুদিবাদী কর্তৃপক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য অনেক বেড়ে গেছে। নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থি সরকার কঠোরভাবে যে কোনও চুক্তির বিরোধীতা করছে এবং অন্যদিকে নেতানিয়াহুর বিরোধীরা বন্দি বিনিময়ের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তার সর্বশেষ অবস্থানে ইহুদ বারাক হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তির পৌছাতে তার অক্ষমতা এবং চুক্তির পথে বাধা সৃষ্টি করতে নেতানিয়াহুর চরমপন্থি মন্ত্রিসভার নানা প্রচেষ্টার সমালোচনা করে বলেছেন, ‘নেতানিয়াহু ইসরাইলকে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন যে নেতানিয়াহু গাজায় আমাদের বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছেন।
বারাক আরো বলেন, দক্ষিণ গাজার ফিলাডেলফিয়া করিডোর নিয়ন্ত্রণে নেতানিয়াহুর জেদ ইসরাইলের জন্য কোন রাজনৈতিক সুবিধা নেই।”
এদিকে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর আগে একটি বিবৃতি জারি করে বলেছিল. “তেল আবিব গাজা এবং মিশরের সীমান্তে ফিলাডেলফিয়া করিডোর নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কারণ এটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পুনরায় অস্ত্র যোগানে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে।” এই করিডোরটি মিশর এবং গাজার সীমান্তের উভয় পাশে বৃহৎ অসামরিক অঞ্চলের অংশ।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১৩ ইহুদিবাদী শাসক এবং নেতানিয়াহুর আলোচনাকারী দলের মধ্যে শক্তিশালী মতপার্থক্যের দিকেও ইঙ্গিত করে জোর দিয়ে বলেছে, ‘আলোচনাকারী দল বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করেছে যে আলোচনায় ব্যর্থ হলে পুনরায় সেখানে ফিরে আসা বেশ কঠিন হবে।’
ইয়েন নেটওয়ার্ক যোগ করেছে: ‘নেতানিয়াহু ইহুদিবাদী আলোচনাকারী দলকে বলেছেন যে আলোচনার ব্যর্থতা বা সাফল্যের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই।’
চ্যানেল ১৩ আরো বলেছে, “ইহুদিবাদী আলোচনাকারী দল নেতানিয়াহুকে বলেছে যে তিনি যদি ফিলাডেলফিয়া এবং নেটসারিমের অক্ষে ইহুদিবাদী শাসকের সামরিক বাহিনীর অব্যাহত উপস্থিতির উপর জোর দেয়া হয় তাহলে আলোচনা ব্যর্থ হবে।
চ্যানেলটি আরও রিপোর্ট করেছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন নেতানিয়াহুকে বোঝানোর জন্য অধিকৃত ফিলিস্তিনে সফরে গেছেন। সেখানে তিনি নেতানিয়াহুকে বার্তা দিয়েছেন যে এই রাউন্ডের আলোচনার ব্যর্থতার পরিণতি কী হবে।
এদিকে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন (হামাস) ঘোষণা করেছে যে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য বাইডেন প্রশাসন যে প্রস্তাব দিয়েছে তা তারা মানবে না। কারণ মার্কিন প্রস্তাব সম্পূর্ণরূপে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর শর্তের সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ এবং ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর জন্য উপকারী।”
হামাস বলেছে যে এই প্রস্তাব যুদ্ধ অবসানের ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। প্রতিরোধ আন্দোলটি আরো বলেছে, সাম্প্রতিক আলোচনার বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীদের বক্তব্য শোনার পর আমরা আবার নিশ্চিত হয়েছি যে নেতানিয়াহু এখনও এই চুক্তির অর্জনে বাধা দিচ্ছেন।
যাইহোক ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন জোর দিয়ে বলেছে ‘নতুন পরিকল্পনা নেতানিয়াহুর শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিশেষ করে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজার ওপর থেকে সেনা প্রত্যাহারসহ সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের তার বিরোধিতা। তাছাড়া ইসরাইল নেটসারিম এলাকা, রাফাহ ক্রসিং এবং ফিলাডেলফিয়া অক্ষ দখল অব্যাহত রেখেছে।
গত ১৫ ও ১৬ আগস্ট কাতারের রাজধানী দোহায় আমেরিকা মিশর এবং কাতারের অংশগ্রহণে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়।
হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে তেহরানে হত্যার পর যুদ্ধবিরতি বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ইহুদিবাদী ইসরাইলের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শক্ত জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব দেশগুলো আশা করছে যে যুদ্ধবিরতি ইরানকে প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত রাখবে।
ইসরাইলি কর্মকর্তারা মনে করেন যে নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক জীবন বাঁচাতে যুদ্ধ শেষ করতে চান না এবং কায়রোতে ইরানের স্বার্থ সংরক্ষণ অফিসের প্রধানও বলেছেন যে নেতানিয়াহু ভারসাম্যপূর্ণ শর্তে যুদ্ধবিরতি মেনে নিলে তাকে বিদায় নিতে হবে।