চীনার একদন বিজ্ঞানীদের গবেষণার দেখা গেছে যে, মানুষের বুকের দুধ করোনা ভাইরাসকে মারতে সাহায্য করতে পারে অথবা এর দ্বারা চিকিৎসাও করা যেতে পারে । বেইজিংয়ের একদল গবেষক সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা কোষগুলোতে মায়ের বুকের দুধের প্রভাব পরীক্ষা করেছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর হওয়ার অনেক আগে ২০১৭ সালে সংগ্রহ করা দুধের কার্যকারিতা পশুর কিডনি কোষ এবং মানবদেহের ফুসফুস ও অন্ত্রকোষে পরীক্ষা করা হয়। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’- এ গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গবেষকেরা জানান, তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, মায়ের বুকের দুধে অধিকাংশ জীবিত ভাইরাস মারা যায়।
আর গবেষণায় নেতৃত্ব দেন , বেইজিং ইউনিভার্সিটি অব কেমিক্যাল টেকনোলজির অধ্যাপক টং ইগাংয়ের । তাঁদের গবেষণা নিবন্ধ গত শুক্রবার ‘বায়োরেক্সিভ ডট ওআরজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। গবেষকেরা দাবি করেছেন, বুকের দুধ ভাইরাসের প্রবেশেও বাধা দিতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে কোভিড সংক্রমিত মায়েদেরও সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোর কথা বলা হয়। সাম্প্রতিক এ গবেষণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্তের পক্ষেই জোর সমর্থন দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে গত জুন মাসে কয়েকটি দেশে ৪৬ জন মায়ের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে তিনজন মায়ের বুকের দুধে ভাইরাসের জিন শনাক্ত করা হলেও সংক্রমণের কোনো প্রমাণ ছিল না। শুধু একজন শিশু করোনা পজিটিভ হয়। এ ক্ষেত্রে তার অন্য কোনোভাবে সংক্রমণের আশঙ্কা করা হয়েছিল।
গবেষক টং ও তাঁর সহকর্মীরা মায়ের বুকের দুধের সঙ্গে কিছু সুস্থ কোষের মিশ্রণ ঘটান। এরপর বুকের দুধ সংগ্রহ করে কোষগুলোকে ভাইরাস সংক্রমণের জন্য উন্মুক্ত করেন। তাঁরা দেখেন, ওই কোষগুলোতে ভাইরাস ঢুকতে পারেনি। এ ছাড়াও সংক্রমিত কোষে ভাইরাসের প্রতিলিপি উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারে।
গবেষকেরা বলছেন, মায়ের বুকের দুধে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর মধ্যে এইচআইভি ভাইরাস ও কিছু ব্যাকটেরিয়ার ওপর এর প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায়।
গবেষকেরা আগেই ধারণা করেছিলেন, করোনাভাইরাস মায়ের বুকের দুধের কিছু পরিচিত অ্যান্টিভাইরাল প্রোটিন যেমন ল্যাকটোফেরিনের প্রতি সংবেদনশীল। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখেন, এসব কোনো প্রোটিন আশানুরূপ সংবেদনশীলতা দেখায়নি।
অন্য প্রোটিনগুলো ভাইরাস সংক্রমণে বাধা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেশি কার্যকারিতা দেখিয়েছে ‘হোয়ে’নামের উপাদানটি। গরু ও ছাগলের হোয়ে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত জীবন্ত ভাইরাল স্ট্রেইনকে বাধা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধের হোয়ে প্রায় শতভাগ কার্যকর।
গবেষকেরা মায়ের বুকের দুধে কোনো ক্ষতিকর দিক খুঁজে পাননি। তাঁর বলছেন, মায়ের বুকের দুধ ভাইরাসকে মারার পাশাপাশি কোষের বৃদ্ধিতে কাজ করে।
অনেক মা এখন অন্য শিশুদের জন্য বুকের দুধ দান করেন। সংক্রমণ এড়াতে এই বুকের দুধ পাস্তুরিত করা হয়। গবেষকেরা বলছেন, ১০ মিনিট ধরে ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দুধ গরম করলে হোয়ে প্রোটিন নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এতে সুরক্ষার হার ২০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। তাই ভাইরাসপ্রতিরোধী ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মাথায় রাখার কথা বলেন তাঁরা।
সূত্রঃ সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট