ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বহুলালোচিত রাম মন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে। আজ (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এর সূচনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় কয়েকশো বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ প্রকাশ্য দিবালোকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ‘করসেবক’ নামধারী উগ্রহিন্দুত্ববাদী জনতা। তাদের দাবি- ওই স্থানটি ভগবান রামের জনস্থান। ওই ইস্যুতে দীর্ঘকাল ধরে আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে আদালতের রায় হিন্দুদের পক্ষে যায়। সেখানেই তৈরি হয়েছে বিশাল রাম মন্দির।
ওই ইস্যুতে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। বিবিসি বলেছে- হিন্দুদের ভগবান রামের বিশাল মন্দিরের উদ্বোধনে অংশ নিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ছাড়াও চলচ্চিত্র তারকা ও শিল্পপতিসহ কয়েক হাজার অতিথি প্রাণ প্রতিষ্ঠায় শামিল হন। বিরোধীরা এই কর্মসূচির বিরোধিতা করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে মন্দিরের মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। বিবিসি আরও বলেছে, কিছু মুসলমান তাদের বলেছেন, প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান তাদের জন্য বেদনাদায়ক স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।
আল জাজিরা বলেছে, ভারতীয় গণমাধ্যমে সেই মসজিদের কোনো উল্লেখ নেই, যেটি ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের একদল জনতা ভেঙে দিয়েছিল।
নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, সোমবার রাম মন্দির উদ্বোধন করে ভারতে হিন্দুদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে দেশের ২০ কোটি মুসলমানের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টাইমস বলেছে, ভারতের হিন্দু ডানপন্থীরা দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠার জন্য রাম মন্দির আন্দোলন শুরু করেছিল। ২৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে ৭০ একর জমির উপর নির্মিত রাম মন্দিরটিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর তৃতীয় ইনিংস হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সিএনএন বলেছে, সোমবার ভারতে লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িতে টেলিভিশনে রাম মন্দিরের উদ্বোধন দেখেছেন। এই মন্দির থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী প্রচারে চাঙ্গা হবে। রাম মন্দির হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি নতুন ভারতের স্বপ্ন যা সত্যি হয়েছে। সিএনএন বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার বক্তব্যে বাবরি মসজিদ বা মুসলমানদের কথা উল্লেখ করেননি। তিনি শুধু বলেছেন এটি একটি নতুন সময়ের শুরু।
ডন-এ বলা হয়েছে, শতাব্দী প্রাচীন একটি মসজিদ যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে। যেটি ১৯৯২ সালে মোদীর দলের প্ররোচনায় জনগণ ভেঙে দিয়েছিল।
অন্যদিকে, আজ রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের শেষে রামমন্দির চত্বরেই বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু কণ্ঠ আমার অবরুদ্ধ। বহু শতাব্দীর অপেক্ষার পর প্রভু রাম আমাদের মধ্যে এসেছেন। এখন থেকে আর তাঁবুতে নয়, মন্দিরে থাকবেন রাম।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারির সূর্য নতুন আভা নিয়ে উঠেছে। এই দিনটি ক্যালেন্ডারে নিছক একটা তারিখ নয়, এক কালচক্রের সূচনা হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেন, এক সময়ে বলা হত, রামমন্দির হলে দেশে আগুন জ্বলবে। কিন্তু আজ এই মন্দিরের নির্মাণ আগুন নয়, জ্যোতির জন্ম দিয়েছে। বিবাদ নয়, রাম সমাধান। রাম বর্তমান নয়, রাম অনন্তকালের বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।