শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়া থেকেও আমেরিকার আউটের সম্ভাবনা। আর সেক্ষেত্রে বাইডেন যা করতে পারেন, তা হল এই পরাজয় বা আউট হওয়া এটাকে তিনি স্মরণীয় করে রাখতে এক তাঁর বিখ্যাত মন্ত্রী ডোনাল্ড ল্যু মহাশয়ের নামে ল্যু আউট নাম রাখতে পারেন! কারণ, এই মহাশয় ছিলেন ইন্দো-প্যাসেফিক এক্সপার্ট, মানে তার দাবি আর কী! তিনি এশিয়াকে চীন-মুক্ত করে ছাড়বেনই! কিন্তু ফলাফল?
হাসিনাকে তিনি বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসেফিক লিখতে বাধ্য করেছিলেন। কিন্তু হাসিনার লিখিত এর জবাব কী ছিল? ল্যু তো সেদিনই পরাজিত! অথচ আত্ম-উপলব্দিও নাই। আপনি বলতে পারেন এটা চীন লিখে দিয়েছে! কিন্তু তাতে কী? ঘায়েল তো ল্যু-ই হয়েছেন। বাংলাদেশে জাপানি রাষ্ট্রদুতকে দিয়ে বলাতে বাধ্য হয়েছেন যে হাসিনার এই ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি নাকি তাদের নিজেদের মতই!!!
আর আজ? এন্ড অব ব্যাটেল মানে বলছে চাচ্ছি ব্যাটেল বা লড়াই শেষ হতে চলেছে! কিছুই পারলেন না! তবে অনেক আনুষ্ঠানিকতা বাকি!
কিন্তু কোনটাকে ব্যাটেল বলছি? হাসিনার নির্বাচন বিজয়? নাকি বাংলাদেশের উপর বাইডেনের আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ?
এর জবাব বুঝতে হবে আরো বড় কিছুতে, বড় পরিসরে!চীন-আমেরিকার দ্বন্দ্ব বা পালাবদলের লড়াইয়ে আমেরিকা শুধু বাংলাদেশ নয়, আমেরিকা এশিয়া থেকেই আউট হয়ে যাবার অবস্থায় চলে যাচ্ছে!
তাহলে এবার পুরা রেজাল্টটাও এখানেই বলে দেই। আপাতত হাসিনার বাংলাদেশ চীনের কোলে উঠে যাচ্ছে। আর এটা এমন যা আগে দেখা যায় নাই এমন কোলে উঠে পড়া এটা। যেটা খারাপ বা ভাল বিষয়টা তা নিয়ে না। মানে তা নিয়ে একথাগুলো নয়। গত ২০২১ সালে এপ্রিলে (টিকা কোথা থেকে পাবে এই হাহাকার দিনগুলোতে) বাংলাদেশের টিকা চাহিদার ৯০ভাগ যে চুক্তি বলে আমরা ফাইনালি চীনা টিকা পেলাম – সেসময় চীনা প্রতিরক্ষা এসেছিল। সেটা বুঝার চেষ্টা করেন। এটা সেসময়ের ডেইলিস্টারের রিপোর্ট। এনিয়ে লিখেছিল, “The visit is taking place when Bangladesh and China are in discussion over Covid-19 vaccine cooperation.” মানে হল, চীনা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর না চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আগমন ও আলোচনাটা ছিল, কোভিড ঠেকাতে চীনা-টিকা বাংলাদেশের পাওয়া নিয়ে কিন্তু সেখানে চীনা টিমের প্রধান ছিলেন চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী! মজা না!!!
আমরা অবশ্য শেষে নিশ্চিত টিকা পেয়েছিলেম। একেবারে যাকে বলে যত লাগে সব। আর তা একেবারে বিনাপয়সায়। খালি কত লাগবে এর একখানা স্লিপ দিয়ে আমাদের সি-১৩০ বিমানটা পাঠিয়ে দিয়েছে আর চীন তা ভরেও ভরে টিকা দিয়েছিল। আর সব বিনা পয়সায়! আর টিকা পেয়ে আমাদের জীবন অর্থনীতি সেযাত্রায় বেচে গিয়েছিল!
হা এবারও এটা সেরকম কিংবা আরো বড় পরিসরে! আপনি চীনকে পছন্দ করেন আর নাই করেন সম্ভবত তেমন কিছু আবার ঘটবে। বাংলাদেশ-চীনের নয়া সম্পর্ক হতে যাচ্ছে সবার উপরে, প্রায়োরিটিতে এক নম্বরে। এমনকি তাতে পশ্চিম বাগরা দিলে সে বাধা গুড়িয়ে যাবে শুধু না তা হাসিনা-চীনকে আমাদের কল্পনার চেয়েও বেশী ঘনিষ্ট করবে! আর আমেরিকা বা ভারত? এরা মাটিতে গড়াগড়ি যাবে। আর হাসিনা এই প্রথম ভারতের উপর খবরদারি-ডিকটেট করার অবস্থায় যাবে। তিনি সেটা কম করে ব্যবহার করতে চাইলেও তা ডিকটেটের বাপ হয়ে দাঁড়াবে। ব্যাপারটা অবজেকটিভ – হাসিনার ব্যক্তি ইচ্চা-অনিচ্চার বাইরে, তাই।
বাইডেনের সব পরিকল্পনাই ব্যার্থঃ
বাইডেন ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারী প্রেসিডেন্টের শপথ নিছিলেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা চার-বছর-সীমার। সে হিসাবে তার ক্ষমতার তিন বছর শেষ হবে আরো দুসপ্তাহ পরে। কিন্তু ইতোমধ্যে পরের নির্বাচনের ঘন্টা বেজে উঠেছে। তা হবে নভেম্বর ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু ট্রাম্পের পরে আসা ডেমোক্রাট প্রেসিডেন্ট বাইডেন তিনি; ফলে তার সব কারিসমা – ঘ্যাগের ওষুধ আমার কাছে – বলে বাইডেন যা এনেছিলেন এমন সবগুলো উদ্যোগ-পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই দুঃখিত, সব মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করেছে। বছরের বাকি দিনগুলোতে তা আরো করুণ অবস্থায় যাবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ক্ষমতা এটা ঠিকই আছে কিন্তু সরকার চালাতে অর্থ-মঞ্জুর এর সিদ্ধান্ত রিপাবলিকান সংসদের। ফলে মঞ্জুরি নাই বললেই চলে। তাও আবার এই রিপাবলিকান বলতে বুঝতে হবে এটা সরাসরি ট্রাম্প-নিয়ন্ত্রিত রিপাবলিকান। তবে কথা সেটা না। মানবাধিকার-গণতন্ত্রকে বা স্যাংশন-আরোপকে নিজ পররাষ্ট্রনীতির মুখ্য ফোকাস করা কিংবা ইউক্রেন যুদ্ধ লাগানো কিংবা ইন্দো প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি ইত্যাদি এমন প্রতিটা বাইডেন প্রগ্রাম আজ পরাজিত বা অকেজো হয়েছে বা হওয়ার পথে তা বলা যায়।
ইইউ বা ইউরোপকে বাইডেন লোভ দেখিয়েছিল দুনিয়ায় (গত প্রায় পাঁচশ বছর) সাদাদের (white caucasian ককেশীয়) শাসন অটুট রাখতে একসাথে কাজ করবে। মানে হল, গ্লোবালি চীনাদের উত্থানে সাদা শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষমতা খতম হতে দেয়া যাবে না। তিনি টিকিয়ে রাখতে পারবেন – এই সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদ ধরে রাখা বা টিকিয়ে রাখার শেষে চেষ্টার ভিত্তিতেই পশ্চিমাদের ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু ও এর পক্ষে সাদা জনমত তৈরি হতে উস্কানি দিয়েছিল। ভেবেছিল চীন তাহলে এই যুদ্ধে স্বভাবতই পোলারাইজেশনে রাশিয়ার পক্ষ নিবে। কিন্তু তা হয় নাই। উলটা ইউক্রেনের সরকারি কর্তা-সেনাদের বেতন যোগাতেই বাইডেন ফতুর! ফ্রান্সের ম্যাক্রো বা জর্মান শুলৎস [chancellor scholz] ইত্যাদি এরা নিজ পরের বারের নির্বাচনে জিততে পারবেন কিনা শঙ্কিত। কারণ এই নেতারা বাইডেনের চামচা হয়ে এমন ইউক্রেন নীতির পক্ষ তারা অনুসরণ করেছেন যার চাপ এখন তাদের নিজ নিজ দেশের আম-জনতা ভোটারে জীবন মানে পড়েছে। এক ইতালিতেই সরকার বদলের দশা-প্রতিক্রিয়া দেখেন, বলা হচ্ছে এবার নাকি অতিডানপন্থিরা জিতেছে। মানে তাদের রাজনৈতিক ভাইয়েরা জিতে নাই তাই। অথচ এতে কী যেখানে ‘ডান-বামেরই’ তাল ঠিক নাই? ইতালিতে নয়া সরকার তারা ইউক্রেনের যুদ্ধে অর্থদান ভেটো দিয়ে আটকে দিয়েছে। এখন সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদের স্বপ্ন দেখা ম্যাক্রো-শুলৎস এরাই ইউক্রেনের পক্ষে মূল যুদ্ধবাজ নেতা অথচ ইতালিকে বলা হচ্ছে অতি-ডান!!!
সব মিলিয়ে সারাংশ, বাইডেনের দোরগোড়ায় আবার নির্বাচন। অথচ তিনি এক অর্থ মঞ্জুরের পাওয়ার ক্ষমতাহীন প্রেসিডেন্ট! যে ক্ষমতার আবার অনেকটাই ট্রাম্পের হাতে।
মূল কথাটা হল, আমরা কেউ পছন্দ করি না করি – চীন গ্লোবাল (অন্তত অর্থনৈতিক নেতা) নেতা হওয়ার পথে দাপটের সাথে উঠে আসছে। চীনের গ্লোবাল প্রভাব – মানে গ্লোবাল অর্থনীতি যা শেষে রাজনীতিকেও প্রভাবিত করে ফেলতে পারে সেটা এগিয়ে আসছে। অন্য রাষ্ট্র, মহাদেশকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাও তাই চীনের ছেয়ে যাচ্ছে। এটা ঠেকানো যায় না। ঠিক যেমন আমেরিকার এমন উত্থানের বেলায় সেকালের নেতা বৃটিশেরাও আমেরিকার উত্থান ঠেকাতে পারে নাই। যার পিছনের মূল কারণ একালের অর্থনীতিতে (সারপ্লাস একুমুলেশন) বাড়তি সম্পদ সবার চেয়ে বেশী সঞ্চিত হচ্ছে চীনে। আর ঠিক এঘটনাটা উল্টা ঘটতেছে আমেরিকার বেলায় মানে সঞ্চিতি কমছে। আর এটাই আমাদের সবার-ই পছন্দ-অপছন্দের ইচ্ছা নিরপেক্ষ ঘটনাবলী। অথচ আমরা তা মানতে নারাজ! আর উলটা একথাগুলো দেখতে পেলে বক্তা নিশ্চয় মানে আমি চীন-পন্থি এমন প্রপাগান্ডা করে নিজের অজ্ঞতার ছাপ ফেলছি। আমি চীনপছন্দের লোক বা দালাল – এসব মনে করাও আরেক ভুল। বালিতে মুখগুজে থাকার মত। ওবামা আমল থেকেই পরে ট্রাম্প আর বাইডেন সকলেই মিছাই চেষ্টা করে গেছেন যে চীনা উত্থানের বাস্তবতা তারা উলটে দিতে পারবেন। এরই সর্বশেষ প্রযোজনা-উদ্যোগ ছিল বাইডেনের মানবাধিকার-গণতন্ত্রকে বা স্যাংশন আরোপের নীতি চালু করা। যেটার কোন কিছুতেই এখন কোন সাফল্যের দিক নাই। এক কেবল আমরা জানলাম হয়ত কে কে আর কী পরিমাণ অর্থ আমেরিকায় সরিয়েছে – অতটুকুই!
কিন্তু এরপরে কীঃ
এটা মোটামুটি পরিস্কার যে হাসিনার নিজেকে এখন বিজয়ী ও নয়া প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা-শপথ টাই বাকি!আর এরপর চীনের কাছে নগদ ডলার পেতে, হাত পাততে যেতে হবে তাঁকে। যেটার আরেক নাম বাজেট সহায়তা চাওয়া; এর নামে চীনা অনুমোদনে কোন ব্যাংক থেকে অর্থ আনা। আর যারা চীনবিরোধী তারা মনে রাখেন এই অর্থ চাওয়াতে কে আপনি – চীন পছন্দ না অপছন্দের তা কিছুই এতে কিছু আসে যায় না। যেমন কল্পনা করে নিতে পারেন। যদি হাসিনা সরকার পরাজিত হত তাতে সাময়িক বা স্থায়ী যে সরকারই পরবর্তিতে আসত সেটা আমেরিকা সমর্থিত হত তা বলাই বাহুল্য! কিন্তু তা সত্বেও সেই আমেরিকা সমর্থিত সরকারটাও (most likely) চীনের কাছেই যেত একইভাবে হাত পাতত, ডলার চাইত।
একটা সমতুল্য উদাহরণ দেই,বাইডেনের বিরাট করিত কর্তা নায়ক ডোনাল্ড ল্যু! যিনি বাইডেনের নির্বাচনি প্রচারণা শুরুরও আগে বাইডেন কী কী নীতি-পলিসি-বৈশিষ্টের ভিত্তিতে ভোট চাইতে যাবেন সেসব কমিটির মেম্বার ডোনাল্ড ল্যু। তিনি ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি স্পেশালিস্ট মূল নেতা হয়ে উঠবেন। তিনি বাইডেনের নয়া ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজির এমন সাফল্য দেখাবেন যে দুনিয়া চেয়ে দেখবে। এই স্বপ্ন দেখানোর নেতা হয়ে উঠেছিলেন তখন থেকে। তাই তিনি প্রভাবশালী উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী! কিন্তু ফলাফল?????
অল্প কথায় বললে, তিনি পাকিস্তানে ইমরান খানকে উপড়ে ফেলে দিলেন। আর সাথে দুই চোর সাজাপ্রাপ্ত চোর আর এদের সব দায়-কালিমা নিজে আর আমেরিকার গায়ে মাখায় ল্যু ছোটভাই শাহবাজকে ক্ষমতায় বসালেন। উদ্দেশ্য পাকিস্তানে চীনা প্রভাব কমাবেন। কারণ তিনি ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি স্পেশালিস্ট। আর এটাই তো মূল কাজ যে এশিয়া থেকে প্রতিটা দেশে চীনা সম্পর্ক, নির্ভরশীলতা কমানো পারলে নাই করে দিয়ে চীনকে একঘরে করা!
কিন্তু এরপর কী হয়েছিল? শাহবাজ সরকার চলবে কীভাবে, অর্থনীতিতে সাপোর্ট কে করবে, নগদ ডলার?? দেখা গেল শাহবাজ নিজে চীন সফরে গিয়ে সেই চীনেরই অনুগ্রহে ডলার পেতে নিজেই চীনে গেছেন হাত পেতেছেন! তাহলে এটাই তো ডোনাল্ড ল্যু-এর সাফল্য ? তাই-ই না??
তাহলে এখন এর জবাব কে দিবে? এটা কী ল্যু-বাইডেনের সাফল্য?
আর আমরা যারা এসব মনিটর করি? আমরা কী এসব জানতাম না? অবশ্যই জানতাম। তাহলে?
তাহলে, বাইডেনের আকাইম্মা চাপাবাজিতে হলেও অন্তত গুম-খুন-অপহরণের রাষ্ট্র হয়ে যাওয়া বাংলাদেশে অন্তত কিছু পরিবর্তন – গ্লোবালি বাংলাদেশের মানবাধিকার-গণতন্ত্র এর দুরবস্থা গত পনেরো বছরে এই প্রথম কিছু নজর কেড়েছে যার কিছু সুফল আশা করা মনে হয় না আমাদের অপরাধ! আসলে এটা এমনই এক বাইডেন তিনি আমাদের আমেরিকার অপরাধের কাফফারা চুকাতেও অক্ষম প্রমাণিত হল! বাইডেনের আমেরিকা মানবাধিকার-গণতন্ত্র প্রশ্নে – অক্ষম উত্থানরহিত এক নায়ক এটাই এশিয়ার সবদেশের কাছেই প্রতিষ্ঠিত হল!
তাই, এর কনসিকোয়েন্স হবে এশিয়ার আর কোন দেশ বা ওর পাবলিক নিজ সংকটে আমেরিকার উপর নির্ভর করবে না। যোগ্য মনে করবে না। আমেরিকা তাদের কেউ না হয়ে গেল! ফুলষ্টপ!
এটাকে আপনি বাইডেন না সারা আমেরিকারও এক কূটনৈতিক পরাজয় বলেই দেখতে দেখাতে পারেন। আমি বলব এখানে মূল জিনিষটা কূটনৈতিক পরাজয় কিনা এর চেয়েও প্রভাবিত করা – ইনফ্লুয়েন্স করার ক্ষমতা হারানো। আমেরিকা ইনফ্লুয়েন্স করতে অক্ষম হয়ে গেছে এটাই প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে যা আবার কেউ না চাইলেও। আর এটাকেই বলছি গ্লোবাল নেতার নেতৃত্ব হারানো লক্ষণ! উলটা করে, ঠিক যেমন মধ্যপ্রাচ্যে দেখেন এবারের হামাস যোদ্ধাদের কারবারে! চীন মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় গ্লোবাল নেতা হয়ে বসে গেছে যার সবচেয়ে বড় সাফল্য নিজ এই নয়া পক্ষের সকলকে সে একসাথে রাখতে সক্ষমতা দেখিয়েছে। আর এটাও পরিস্কার ফলাফল এখন হামাসের দিকেই আসবে! এতে হামাস এখন আর দিশাহীন থাকল না যে আপনি চাইলেই তাকে জঙ্গি বলে পার পাবেন। হামাস এখন প্যালেস্তাইনের প্রধান প্রতিরোধ যোদ্ধা এবং শসস্ত্র স্বাধীনতাকামি সংগঠন! নইলে তার পক্ষে পশ্চিমা দেশেই মিছিল হয় কেন!
কিন্তু সাবধান! এর পিছনের এই কূটনৈতিক সাফল্য কার? অবশ্যই চীনের! তবু এটাকে ব্লক যুগের মত চীনা ব্লক বলে ডাকবেন না।
এটা আরসেই ব্লক যুগ নয় হবেও না! কাজের আপনি চীনা-ব্লকের চীনাপন্থি নাকি আপনি আমেরিকাপন্থি – এসব পন্থি আর বানায়েন না প্লিজ! বরং পরিবর্তনটা বুঝার চেষ্টা করেন সবার আগে! এছাড়া যা ঘটভছে এর ভিতরে বহু অমীমাংসিত দিক আছে প্রশ্ন আছে, যদি-কিন্তু অনেক আছে। সেসব ফয়সালা হতে সময় লাগবে! সময় দেন, স্টাডি করেন। সবার আগে বুঝাবুঝি ঠিক্টহাম পাক্কা করেন!
তাহলে এটা পরিস্কার যে হাসিনার বাংলাদেশ অচিরেই চীনের কোলে ও প্রবল বেগে উঠতে যাচ্ছে! আর আমেরিকাকে রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে দেখব! এরকমই কিছু একটা সিনারিও হবে!!!
তাহলে বাংলাদেশে ভারতের কী হবেঃ
এককথায় বললে, ভিক্ষাও পাবে না। সবখানেই অপ্রয়োজনীয় খামোখা হয়ে যাবে। অনেকের কাছে যেমন ধরেন যারা এতদিন “খায়া লই-না আগে একটু” বলতে চান অথবা ধরেন যেমন কেউ প্রকাশ্যে দাবি করতেছে “আমি ভারতের ক্যান্ডিডেট” – দালালির এই লাইনটা সবার আগে টের পেয়ে যাবে যে আগে যা করছে করছে, এখন ভারতীয় লাইন বিপদজনক লাইন! আওয়ামি লীগই করলাম কিন্তু এসব পুরানা লাইনে কথা কইলাম – তা হবে না! গায়ে একেবারে ছাপ্পা বা থাপ্পা পড়ে যাবে চিরদিনের মত!
আসলে আসন্ন এই পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ হবে ভারত! বেইল নাই এক ফকির হয়ে যাচ্ছে! এতদিন হাসিনার বিজয়ের জন্য তারা দোয়া দুরুদ মানত রাখা এমনকি অন্যদিকে লিখে অন্তত সুবীর ভৌমিক গংয়েরা এত ঝগড়াঝাটিও করল এখন সেই হাসিনার বিজয় তাদের জন্য কাল হবে? শুধু তাই না আগামিতে, এমনকি অবাধে বাংলাদেশে চলাচল তথ্য সংগ্রহ, ব্যবসা সংগ্রহ, জেনারেল বা সচিব সহ কাউকেই প্রভাবিত করে ফেলতে পারত তারা এসবের কী হবে? অনুমান করে নেন!
এককথায় বললে, বাংলাদেশ একেবারেই প্রধাণত চীনা-প্রভাবিত সরকার হয়ে যাওয়া বলতে যা বুঝাবে বাংলাদেশ তাই হয়ে যাবে। ফলে চীন-হাসিনার সম্পর্কের জন্য যা কিছু নেতি সেসব তপ্তপরতা অপততপরতা বলে বিবেচিত হবে, স্বাভাবিক!
কেন আজ এমন লেখা লিখতে বসলামঃ
গত দুদিন ধরে একটা লেখা বাজারে ঘুরছিল। ইংরেজিতে লেখা, ওয়াল স্টিট জর্ণাল পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল গত ৩ জানুয়ারি। লিঙ্ক এখানে [Bangladesh Shows the Limits of Biden’s ‘Democracy Promotion’] । এমনিতেই এটা উচ্চমার্গীয় পত্রিকা মানে যারা গ্লোবাল পুঁজিবাজার মার্কেট এর সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের। এর উপর এটা পেড (পড়তে পয়সা লাগে) পত্রিকা। তাই এটার খবর হয় নাই। কিন্তু আমাদের মানব জমিন এর একটা বাংলাভার্সান আজ সকালে অনুবাদ করে ছেড়েছে। “গণতন্ত্র প্রচারে বাইডেনের সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে দিলো বাংলাদেশ” – এখানে।
বুঝতেই পারছেন এটা বাইডেনবিরোধী বা ধোলাই দেয়া লেখা। সবচেয়ে বড়কথা এর যে লেখক তার নাম সদানন্দ ধুমে মানে ভারতীয় অরিজিন প্রবাসী। হা তাই। এর চেয়েও বড় কথা তিনি এক আমেরিকান থিঙ্কট্যাংকের আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট [AEI] এর ফেলো। ঠিক যেম অনেকেই চিনেন আলী রিয়াজ-কে তিনিও এমন আরেক থিঙ্কট্যাঙ্ক আটল্যান্টিক কাউন্সিলের ফেলো। কিন্তু AEI-কে মনে করা হয় এটা রিপাবলিকান ধারার। AEI নিজেরা নিজেদেরকে কনজারভেটিভ বা এমন কিছু বলে থাকে।
যা্র ঝোঁকে সদানন্দ ধুমসে এজন্য বাইডেনকে কুপিয়েছে বলা যায়। আগেই বলেছিলেম বলে সদানন্দের বাণী এরকমঃ বাইডেনের ডেমোক্রেসি ছড়ানোর নীতি যে ফেল করবে সেটা তো জানি-ই!
যদিও আমাদের জন্য এটা বাইডেনের ডেমোক্রেসি ছড়ানোর নীতি কী না সে প্রশ্ন আছে। তবু আমি মনে করি বাংলাদেশের মানুষ মনে করে বাংলাদেশকে গুম-খুনের রাষ্ট্র বানানো আর জঙ্গিবাদের নামে সরকারবিরোধী সকলকে নির্মুল করা; যাকে আমেরিকাসহ পশ্চিম চোখবুঝে সমর্থন করে গেছে, দেখেও না দেখার ভান করে গেছে, এস্ববই আমরা জানি। কিন্তু একটা আশা রেখেছিলাম সেই আমেরিকাই এখন কিছু করতে চাইছে এতে যদি নুন্যতম কিছু আইনের শাসন রাষ্ট্র বাংলাদেশ হয় দেখাই যাক না! আর এটার উপর কিছু হলেও আস্থা রেখেছিল এজন্য যে পথটা তুলনায় সহিংস নয়; সিভিল মুভমেন্টের মধ্যেই থাকবে। তুলনায় সশস্ত্রতা বলা সহজ করা কঠিন। আর একটা সশস্ত্রার পরে কী হয় সেটা আমরা ১৯৭২ সাস্লের পরে দেখেছি। হয়ত সেজন্যই অল্প আস্থা রেখেছিলাম। কিন্তু হায়!!!
তবে সদানন্দের লেখাটা ২০২৪ সালে আমেরিকার আভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা নির্বাচনের ইস্যুতে লেখা। তা সত্বেও লেখাটা আমাকে প্রভাবিত করেছে কারণ, তিনি প্রকাশ্যেই বলছেন বাইডেন পরাজিত ব্যার্থ হচ্ছেন।এই ধারণাটা আমার নিজেরো আর তা গত কয়েক বছর আমার অনেক লেখাতেই স্পষ্ট। গত তিনবছর বার বার বলেছি বাইডেনও চীনের উত্থান আগমন ঠেকানো দূরে থাকে ধীরগতি করতেও ব্যার্থ হবেন। তবু তিনি এক উজান বাইতে এসেছিলেন। তাই আগের কথাগলো আর জোরে বলি নাই; সাময়িক স্থগিত বা ঢিলা দিয়ে রেখেছিলাম। বলেছিলাম ট্রাম্প আর বাইডেন একই সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদের দুইটা রূপ। বাইডেনের লাইনটা হল এক্সতারনাল মানে ইউরোপকে সাথে নিয়ে সাদা শাসন শ্রেষ্ঠত্ব যেন চীন ভাঙতে না পারে এর উদ্যোগ। আর ট্রাম্পেরটা হল, গ্লোবাল সিস্টেমের দায়দায়িত্ব আমেরিকা আর নিবে না। ন্যাশনালিস্ট হবে। কালো-বাদামি চামড়া বের করে দিবে দেশ থেকে। কেবল সাদা ককেশীয়দের দেশ হবে। চোনা পন্যের উপর ৬৬% পর্যন্ত আমদানিশুল্ক বসিয়ে গেছিলেন তিনি। যা বাইডেন বাতিন করেন নাই। গ্লোবাল দায়ীত্ব ছাড়তে ট্রাম্প ন্যাটো ত্যাগ করতে চান। বিপরীতে বাইডেন ন্যাটো দিয়ে ইউক্রেন লাড়তে গিয়ে এখন ছ্যাড়াবেড়া!
ফলাফল পরিণতি হল, কোনটাতেই চীনের উত্থান ঠেকানো যায় নাই। আবার হয়ত ট্রাম্প না হলেও কোন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হবেন। আর সেটাই শেষ, সেই আমেরিকার আর আমাদের মত দেশে চাইলেই হস্তক্ষেপ করতে পারে সরকার বদলাতে পারেন সে সক্ষমতা আর থাকবে না।
এককথায় বড় গ্লোবাল চেঞ্জ আসন্ন!
আর ভারত? ভেবেছিল সে খুবই চালাক! চীন-আমেরিকার দ্বন্দ্বে সুযোগে সে দুদিক থেকে শবিধা নিয়ে নিজেই এক পরাশক্তি হয়ে যাবে। কিন্তু তার ক্ষেত্রেও ফলাফল নিম্নচাপ! জান বাচে না অবস্থা! বাংলাদেশকে কলোনি স্টাইলে ওর উপর প্রভাব রেখে আরো অনেক বচ্ছর খেয়ে চলতে পারার স্বপন এখন দুঃস্বপ্ন!
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com