সম্ভাবনা সৃষ্টি করে দিয়ে যায় লিটন দাস আর রনি তালুকদারের উদ্বোধনী জুটি, তবে ভিত্তিটা গড়ে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। আর বাকি পথটা সামলে সফল সমাপনী টানেন সাকিব আল হাসান। সুবাদে ২ ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জিতে যায়। যদিও ইংল্যান্ডকে মাত্র ১৫৬ রানে আটকে দিয়ে পথটা দেখিয়েছিল বোলাররাই।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। প্রায় ৮ বছর পর জাতীয় দলে ফিরে স্বাচ্ছন্দেই খেলছিলেন রনি তালুকদার। তবে ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। চতুর্থ ওভারে আর্চারের শিকার হন ১৪ বলে ২১ রান করে। ৩৩ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর আরো ১০ রান যোগ করতেই আরেক ওপেনার লিটন দাসকেও হারায় বাংলাদেশ। ১০ বলে ১২ রান করে আর্চারের শিকার হন তিনি।
এরপরই জমে উঠে সিলেটের সেই বিখ্যাত জুটি, নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গ দেন তৌহিদ হৃদয়। দুজনে মিলে দারুণ খেলতে থাকেন, এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দলকে। পাওয়ার প্লেতে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে এনে দেন ৫৪ রান। সেই জুটি থামে দলকে তিন অংকের ঘরে পৌঁছে দিয়ে।
দলীয় ১০৮ রানের মাথায় ১৭ বলে ২৪ রান করে আউট হন তৌহিদ, সেই সাথে ভাঙে শান্তের সাথে তার ৩৯ বলে ৬৫ রানের জুটি। এরই মাঝে টানা ছয় বলে ছয় চার হাঁকায় বাংলাদেশ, আগের ওভারের শেষ দুই বলে তৌহিদ হৃদয়ের জোড়া চারের পর পরের ওভারে মার্ক উডকে চার বলে চারটা বাউন্ডারি মারেন শান্ত।
এইদিকে অর্ধশতক ছুঁয়ে ফেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, ৮ চারের মারে মাত্র ২৭ বলে পঞ্চাশ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। যা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি। যদিও এরপর ইনিংসটা আর টেনে নিতে পারেননি, ৩০ বলে ৫১ করেই আউট হন তিনি। দুজনে মিলে দলকে জয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়ে গেলেও জোড়া উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
শেষ ৪৬ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৪৫ রান, হাতে ৬ উইকেট; মাঠে সাকিব আল হাসান। অধিনায়কের মতো তাই বাকি পথটা একাই সামলে দেন সাকিব, আফিফকে সাথে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন তিনি। ২ ওভার বাকি থাকতেই ৬ উইকেটের অনবদ্য জয় এনে দেন বাংলাদেশকে।
এর আগে নির্ধারিত ওভার শেষে ৬ উইকেটে ১৫৬ রান তুলে থামে থ্রি লায়ন্সদের ইনিংস। যদিও টস হেরে ব্যাট করতে নেমে এইদিন উড়ন্ত শুরু পেয়ে যায় ইংল্যান্ড, উদ্বোধনী জুটিতে ভর করে পাওয়ার প্লেতেই আসে পঞ্চাশোর্ধ্ব রান। দুই প্রান্ত থেকেই দারুণ ব্যাট করতে থাকেন জশ বাটলার ও ফিলিপ সল্ট। জুটি ভাঙার সুযোগ যে আসেনি তা নয়, তবে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
অপ্রত্যাশিতভাবে এইদিন সবচেয়ে সহজ ক্যাচটাই মিস করেন সাকিব আল হাসান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে নাসুমের বলে জস বাটলারের ক্যাচ মিস করেন সাকিব। যেই ক্যাচ মিসের বেশ কড়া মূল্য দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। অর্ধশতক তুলে নেন ইংলিশ অধিনায়ক, শেষ পর্যন্ত ৪২ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
বাংলাদেশ এইদিন প্রথম উইকেটের দেখা পায় দশম ওভারের শেষ বলে, দলীয় ৮০ রানের মাথায় ফিলিপ সল্টকে উইকেট কিপার লিটন দাসের ক্যাচ বানান নাসুম আহমেদ; ৩৫ বলে ৩৮ করেন তিনি। পরের উইকেটের জন্য অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি, এক ওভার পরেই সাকিবের শিকার হন ডেভিড মালান। ৭ বলে ৪ রান করে আউট হন মালান।
এরপর বেন ডাকেটকে নিয়ে ফের জুটি জমিয়ে তুলেন বাটলার, মাত্র ২৬ বলে যোগ করেন ৪৭ রান। তবে পরপর দুই বলে ফিরেন দু’জনে, সেই সাথে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। ১৬তম ওভারের শেষ বলে ২০ রান করা ডাকেটের স্ট্যাম্প ভাঙেন মোস্তাফিজ, আর ১৭তম ওভারের প্রথম বলেই বিধ্বংসী হয়ে উঠা বাটলারকে ফেরান হাসান মাহমুদ। সেই ওভারে মাত্র ১ রান দেন এই পেসার।
এরপর কমে আসে ইংল্যান্ডের রানের গতি, ১৮ তম ওভারে মইন আলি ও স্যান কারান মিলে যোগ করেন ৭ রান। আর ১৯তম ওভারে কারানকে যখন হাসান মাহমুদ নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান, এর আগ পর্যন্ত দুজনে মিলে যোগ করেন ১৭ বলে মোটে ১১ রান। পরের ওভারেই ক্রিস ওকসের স্ট্যাম্প ভাঙেন তাসকিন। শেষ পর্যন্ত সেই ১৫২ রানেই থামে ইংলিশরা।
বাংলাদেশের হয়ে ২৬ রানে ২ উইকেট নেন হাসান মাহমুদ, একটি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ, সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান। তবে আলাদা করে নজর কাড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত, মাঠজুড়ে দারুণ ফিল্ডিং করেন তিনি। তিনটা দুর্দান্ত ক্যাচও নেন শান্ত।
এই ম্যাচ জিতে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। সেই সাথে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নেমে জয়ের হাসি হাসলো টাইগাররা। মনে রাখার মতো কথা হলো, বাংলাদেশ জিতেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে।