গাজীপুরের কাপাসিয়ায় স্কুল ও মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্যে, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সভাপতির বিরুদ্ধে। উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রাওনাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যানিকেতন ও রাওনাট হাছানিয়া আলিম মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সভাপতি নজরুল ইসলাম পাঠানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠেছে।
শিক্ষা সচিব, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের ১৭টি অভিযোগের বিপরীতে একাধিক লিখিত অভিযোগ করেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অভিভাবক ও গভর্নিং বডির সদস্যরা।
অভিযোগগুলো করেন রাওনাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যানিকেতনের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, বিদ্যানিকেতনের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনির হোসেন মোল্লা, স্থানীয় ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সুমন, রাওনাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শাহজাহান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নজরুল ইসলাম পাঠান উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের নয়ানগর মহিলা মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রাওনাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যানিকেতন ও রাওনাট হাছানিয়া আলিম মাদ্রাসা এ দুই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই একাধিকবার নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম করে আসছেন।
মাদ্রাসায় শূন্য পদে আয়া, অফিস সহকারী ও কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে তিনজনকে ১৩ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও কাম কম্পিউটার অপারেটর এ দুইজনকে আট লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ইতোপূর্বে মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ ১৫ লাখ টাকা ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগে পাঁচ লাখ টাকা বাণিজ্য হয়েছে। সভাপতির অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য না হয়েও মেয়ের জামাতা দিয়ে নিয়োগ উত্তর পত্র মূল্যায়ন, অফিস সহকারী জাকিয়ার নিয়োগ বোর্ডে আপন ভাশুর নিয়োগ বোর্ড সদস্য, তিনটি নিয়োগের বিপরীতে ১৩ লাখ টাকা ঘুস নেওয়ার কারণে গভর্নিং বডির সাতজন সদস্যের অনাস্থা ও দুইজন সদস্যের পদত্যাগ, ভুয়া রেজুলেশন করে টাকা আত্মসাৎ, রেজুলেশন ছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে ব্যয় না দেখানো, আবেদন বাছাই কমিটির সদস্যদের আবেদনপত্রসহ রাতের আঁধারে প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অফিস সহকারীর বাসায় বসে অতিদক্ষ ও যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে পছন্দের প্রার্থী বাছাই করা হয়। ২০ লাখ টাকা চুক্তির বিনিময়ে অধ্যক্ষ পদে পছন্দের প্রার্থীকে বাণিজ্যিকভাবে নিয়োগের প্রত্যাশায় যোগ্য প্রার্থীদের আবেদন গোপন বা বিবেচনায় না নিয়ে সহযোগী প্রার্থীদের একটি তালিকা মাদ্রাসা অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।
আজিজুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন ও হালিমার সন্তানেরা প্রতিষ্ঠানে না পড়লেও কাল্পনিক অভিভাবক হয়ে গভর্নিং বডির সদস্য হয়েছেন। দাতা সদস্য মোমেন শেখ চার বছরের চেয়ে বেশি সময় প্রবাসে থেকেও দাতা সদস্য প্রার্থিতা থেকে শুরু করে রেজুলেশন সম্পাদনসহ নানা কাজে জাল স্বাক্ষর করে চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে রাওনাট হাছানিয়া আলিম মাদ্রাসা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান বলেন, নিয়োগের সম্পূর্ণ দায়িত্বটা সভাপতির ছিল এবং আমি শুধু স্বাক্ষর করেছি। সভাপতি নিয়োগ প্রার্থীদের কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে রাওনাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যানিকেতনের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, স্কুল ও মাদ্রাসা দুটি প্রতিষ্ঠানেই নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। আমাকে ১০ হাজার টাকার একটি খাম পাঠিয়েছিল; কিন্তু আমি গ্রহণ করিনি।
রাওনাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যানিকেতনের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনির হোসেন মোল্লা বলেন, আয়া পদে রেখা রানীর নিয়োগে সাড়ে তিন লাখ ও নিরাপত্তা কর্মী আব্বাস মোল্লার কাছে থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সুমন বলেন, স্কুল ও মাদ্রাসা এ দুটি বিদ্যাপীঠে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। আজিজুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন ও হালিমার সন্তানেরা মাদ্রাসায় না পড়লেও তারা কাল্পনিক অভিভাবক সদস্য হয়েছেন।
এ বিষয়ে রাওনাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না, সভাপতি বলতে পারবেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে সভাপতি নজরুল ইসলাম পাঠানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। এ কথা বলে মোটরসাইকেলে চলে যান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবদুস সালাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে নিয়োগ বাণিজ্যে অর্থনৈতিক লেনদেনের সত্যতা পাওয়া গেছে। ১৭টি অভিযোগের ভিত্তিতে সভাপতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।