রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আমেরিকা ও তার কয়েকটি মিত্র দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি নির্দেশ নামায় সই করেছেন। এতে ওই দেশগুলোর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত নির্দেশ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে, রুশ প্রেসিডেন্টের দাপ্তরিক বাসভবন ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন আমেরিকা ও তার কিছু মিত্র দেশের বিরুদ্ধে বিশেষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রকৃতপক্ষে, ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের অজুহাতে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়ার পর এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় মস্কোও তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানালো। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাশ্চাত্যের দেশগুলো সুযোগমতো রাশিয়ার বিরুদ্ধে এমন সব ক্ষেত্রে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যা কিনা নজিরবিহীন। এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, ব্যাংকিং, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া, রাশিয়ার অনেক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এমনকি ইউরোপের আকাশে রাশিয়ার বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি দেশটির খেলাধুলাকেও নিষেধাজ্ঞা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বলা যায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে আর কিছু বাকি নেই। এ অবস্থায় ধারনা করা হচ্ছে ক্রেমলিন অনেক আগে থেকেই পাশ্চাত্যের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। দৈনিক লস অ্যাঞ্জেলস টাইমে প্রকাশিত এক নিবন্ধে খ্যাতনামা মার্কিন বিশেষজ্ঞ স্যাম ডিন এবং ডেভিড পিয়ারসন লিখেছেন, ‘আমেরিকা ও তার মিত্ররা সামরিক মোকাবেলার পরিবর্তে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পথ বেছে নিয়েছে যাতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ইউক্রেনে হামলা চালানো থেকে বিরত রাখা যায়। কিন্তু মার্কিন নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও যেহেতু মস্কোর প্রতি চীনের সমর্থন রয়েছে সে কারণে পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা এখন পর্যন্ত কোনো ফল দেয়নি এবং রাশিয়াকে নত করা যায়নি’।
যাইহোক, ধারনা করা হচ্ছে পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় এখন রাশিয়াও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে। গত বছর গ্যাস ও তেল উত্তোলনে রাশিয়ার অবস্থান ছিল বিশ্বে দ্বিতীয়। এ ক্ষেত্রে ইউরোপ ও আমেরিকার ওপর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়া তাদেরকে চাপে ফেলার চেষ্টা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপের দেশগুলোর ৪০ শতাংশ গ্যাস এবং চার ভাগের এক ভাগ তেলের চাহিদা রাশিয়া পূরণ করে থাকে। ২০১৪ সালে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হলেও ইউরোপে রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি কখনো বন্ধ হয়নি। বর্তমানে পাশ্চাত্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলেও ইউরোপের জ্বালানির প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে রাশিয়ার জ্বালানি খাতকে নিষেধাজ্ঞা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেনি। এ ছাড়া, আমেরিকার পর রাশিয়া হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উত্তোলনকারী দেশ। রাশিয়ার বেশিরভাগ তেল এশিয়ার অনেক দেশে এবং আমেরিকা ও কানাডায় রপ্তানি হয়। এ অবস্থায় বর্তমান শীত মৌসুমে রাশিয়া প্রতিপক্ষকে পাল্টা চাপে ফেলতে ইউরোপের বিরুদ্ধে জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।