বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বর্তমানে বিলুপ্ত বিডিআরের (বাংলাদেশ রাইফেলস) সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহের ১৩ বছর পুর্তি হলো আজ।২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন এ আধাসামরিক বাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্য দাবি আদায়ের নামে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল পিলখানায় সদর দপ্তরে।
অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের পাশাপাশি তৎকালীন মহাপরিচালকসহ ৫৭ জন বিভিন্ন পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিদ্রোহীরা নারী ও শিশুসহ ১৭ জন বেসামরিক নাগরিককেও নির্মমভাবে হত্যা করে।
মর্মান্তিক ওই ঘটনায় শহীদ ব্যক্তিদের স্মরণে আজ শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদদের রুহের মাগফেরাতের উদ্দেশে পিলখানাস্থ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরসহ সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় খতমে কুরআন, বিজিবির সব মসজিদ এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। একইসঙ্গে দিবসটি পালন উপলক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সব স্থাপনায় বিজিবির পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং বিজিবি’র সব সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করেন।
পিলখানায় এই বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর বিডিআর থেকে এ আধা সামরিক বাহিনীর নতুন নামকরণ করা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও আসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া কোনও মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। নিম্ন আদালত থেকে হত্যা মামলার রায় উচ্চ আদালত হয়ে এখন আপিল বিভাগে আটকে আছে।
এদিকে আজ সকালে বনানী সামরিক কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদদের কবর জিয়ারত শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের ফল। এর মূল কারণ ছিল সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়া।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে এত বছর পরও প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। এর পেছনে কারা ছিল, কেন এই ঘটনা ঘটেছিল? এসময় এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় আমাদের এত কর্মকর্তা চলে যাননি। কিন্তু এখানে ৫৬ কর্মকর্তা চলে গেলেন। বিডিআরের শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানকে পরবর্তী কালে ভেঙে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিডিআরের হাজার হাজার কর্মকর্তার বিচার করা হয়েছে। কিন্তু এর পেছনে কারা এর কোনো তদন্ত এখনো হয়নি।।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মামলার পিলখানা হত্যা মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার যেমন হয়েছে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রায়ও যথাযথভাবে কার্যকর করা হবে। এজন্য ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
আজ সকালে বনানীস্থ সামরিক কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের নিকট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত এই ঘটনার পর দুটো ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়। এরমধ্যে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে ৮৫০ জন আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ২৭৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
হত্যা মামলার রায় ঘোষণার আগেই মারা যান চার আসামি। নিম্ন আদালতের রায়ের বিপরীতে আসামিরা উচ্চ আদালতে গেলে শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর ৫৫২ জনকে বিচারের আওতায় এনে বাকি ২৮৩ জনকে খালাস দেন আদালত। উচ্চ আদালতে শুনানি চলাকালে আরও ১১ জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট ৮৩৫ জনের বিরুদ্ধে শুনানি করা হয়। নিম্ন আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ জনকে খালাস দেন হাইকোর্ট। এরপর আসামিদের অনেকেই আপিল বিভাগে আপিল করেন, যার শুনানি শুরু হয়নি।
এ ছাড়া বিস্ফোরক সংক্রান্ত অপর মামলাটির শুনানি এখনও নিম্ন আদালতে চলমান রয়েছে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, উচ্চ আদালতের রায়ের বিপরীতে ২০২১ সালে অর্থাৎ গত বছর আপিল ফাইল হয়েছে। এই ফাইল প্রস্তুত হলে শুনানি শুরু হবে।