বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৯৬ সালের মতো সংবিধানের আলোকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি। শিগগির যুগপৎ আন্দোলন শুরু করা হবে। তখন সব রূপরেখা প্রকাশ করা হবে। গতকাল সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও এনপিপির সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সংলাপ শেষে তিনি এ কথা বলেন। সংলাপে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনের ধরন, নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় সরকার, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ের বিষয়ে আজকের সংলাপে ঐকমত্য হয়েছে। সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। দাবিগুলো চূড়ান্ত করে শিগগির যুগপৎ আন্দোলন শুরু করা হবে। তখন সব রূপরেখা প্রকাশ করবো। ফখরুল বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় যে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছি সেই সংলাপে আজ লেবার পার্টির সঙ্গে বসেছিলাম।
আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল জাতীয় ঐক্যের জন্য আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের দাবিনামা চূড়ান্ত করা। আমরা যে খসড়া দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি সেগুলোর বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। তিনি বলেন, আলোচনায় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, রাজনৈতিক নেতাদের মামলাগুলো প্রত্যাহার, ফ্যাসিস্ট অনির্বাচিত ভোটারবিহীন সরকারের পদত্যাগ।
একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক অথবা অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও সংসদ বিলুপ্ত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের পরিচালনায় নতুন নির্বাচন। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য নতুন একটা সংসদ এবং নতুন সরকার গঠিত হবে। আরও অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, জ্বালানি তেলের মূল্য এসব বিষয়ও আছে। আমরা একমত হয়েছি এই দাবিগুলো নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। এ সময় লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন বাংলাদেশ লেবার পার্টি বিএনপি’র নেতৃত্বে ২০০৬ সাল থেকে আন্দোলন সংগ্রামে আছে। আজ জাতির এই দুঃসময়ে আমরা বেশ কয়েকটি পয়েন্টে একমত হয়েছি। আমরা সবার আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। খালেদা জিয়ার মুক্তি মানেই জনগণের মুক্তি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারলে সবকিছু সম্ভব হবে। আর একটা বিষয়ে একমত হয়েছি। আমরা দেখেছি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আমরা ২০১৪, ২০১৮ সালে দেখেছি। এই সরকার ২০২৩ সালের শেষের দিকে যে নির্বাচন সেটাও আবার নিজেদের করে নেয়ার চেষ্টা করছে। সেজন্য দেশে যে নির্বাচন হবে সেটা অবশ্যই একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যকে আমরা বেশি গুরুত্ব দেই। নিত্যপণ্যের মূল্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতকরা ১০০ ভাগ বেড়ে গেছে। জনগণের অনেক কষ্ট হচ্ছে। সেজন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে আমাদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি। এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। গুম-খুন-অপহরণসহ সর্বস্তরে সরকার নাভিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। লাখ লাখ মামলায় লাখ লাখ আসামি, হাজার হাজার মানুষ গুম-অপহরণের শিকার। আয়নাঘরের প্রশ্ন এসেছে। আয়নাঘরে মানবাধিকার বন্দি। যেসব জায়গায় মানুষ বন্দি আছে তাদের উদ্ধারের জন্য আমরা উদ্ধার অভিযানে নামতে চাই। সেটা এই সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমে নতুন সরকার আনতে পারলে করতে পারবো। সংলাপে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও তার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন মহাসচিব ফারুক রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইউসুফ আলী, আমিনুল ইসলাম রাজু, আলাউদ্দিন আলী, জহিরুল হক, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। দুপুরে পৃথক আরেকটি সংলাপ শেষে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির বিষয়ে বিএনপি’র সঙ্গে একমত হয়েছি। এই সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাবো না। বিএনপির সঙ্গে সরকার পতনের আন্দোলনে সব সময় থাকবো। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবো। সরকারের পতনের পরেই ঘরে ফিরে যাবো। এর আগে দ্বিতীয় দফায় চলতি মাসে কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও এলডিপির সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি। আর প্রথম দফায় ২৩টি দলের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি।
সূত্রঃ মানবজমিন