দেশে আগুনে দগ্ধ হয়ে গত ১৫ বছরে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৩১৭ জনের। পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন অনেকে। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৩৭৪ জন।
আগুনে মৃত্যু নিয়ে যুগান্তরের একটা প্রদিবেদনে উঠে এসে যে, অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা তথা আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে এত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে যুগোপযোগী করার পাশাপাশি মানুষের সচেতনতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক।
২০০৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া গেছে হতাহতের এ হিসাব। এরমধ্যে ২০২০ সালে অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৫৪ জন। আহত হয়েছেন ৩৮৬ জন। তার আগের বছর ২০১৯ সালে নিহত হয়েছেন ১৮৫ জন এবং আহত হয়েছেন ৫৭১ জন।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর দেশের ইতিহাসে কারখানায় সবচেয়ে মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের ওই অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ জন পোশাক শ্রমিক নিহত ও ২০০ জনের অধিক আহত হন। সরাসরি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান ১০১ জন শ্রমিক ও আগুন থেকে রেহাই পেতে উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয় আরও ১০ জনের।
অগ্নিদুর্ঘটনা ও মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল যুগান্তরকে বলেন, অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণের ব্যবস্থা থাকলেও তা যথোপযুক্ত নয়। আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে বড় অগ্নিকাণ্ডগুলো অল্প সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ফায়ার সার্ভিসের কারিগরি দক্ষতা বাড়াতে হবে। এ সংস্থাকে আরও গতিশীল করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন করতে হবে। তাহলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও বাড়বে।
তিনি বলেন, বাসা-বাড়ির অগ্নিকাণ্ডের জন্য বেশি দায়ী অসচেতনতা। অনেক ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও প্রশিক্ষণের অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আর কল-কারখানাগুলোতে বিল্ডিং কোড না মানার ফলে অগ্নিকাণ্ড বাড়ছে। এসব দিক খেয়াল রাখলেই অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা কমে আসবে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪৮৫ জন অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহত এবং ৩ হাজার ৮৬৮ জন আহত হয়েছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ১২৮ জন নিহত ও ৫ হাজার ৮১৭ জন আহত হয়েছেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩৬৫ জন নিহত এবং ১ হাজার ৭৩২ জন আহত হয়েছেন। এসবের বাইরে এ সময়ে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে প্রাণ হারান আরও ২০৪ জন এবং আহত হন ১ হাজার ৭০৬ জন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে বেশি জরুরি জনসচেতনতা। সাধারণ মানুষ যত বেশি সচেতন হবেন, দুর্ঘটনাও তত কমবে। ফায়ার সার্ভিসকেও যুগোপযোগী হতে হবে। সেদিকে খেয়াল রেখে সব ধরনের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমাদের জনশক্তি বাড়ানো হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু শহরকেন্দ্রিক সেবা নয়, অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রমকে পুরো দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। সেজন্য প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ৩ মাসে বহুতল ভবনে ‘ফায়ার ড্রিল’ (অগ্নিনির্বাপণ ও সচেতনতা মহড়া) হওয়ার কথা। তা নিয়মিত হচ্ছে না। ছোট অগ্নিকাণ্ড হলেও তা বড় হয়ে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।