স্যাবোটাজ লীগের ষড়যন্ত্র
Advertisements

দেশে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ‘স্যাবোটাজ লীগ’ নামে পরিচিত একটি ষড়যন্ত্রী গোষ্ঠী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থির করে তুলতে তারা বিভিন্ন আন্দোলনে প্রবেশ করে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার কৌশল নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারবিরোধী অবস্থানকে পুঁজি করে এই চক্র বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আন্দোলনের নামে মাঠে নামিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী আন্দোলনগুলোকে টার্গেট করে নিজেদের লোকজন অনুপ্রবেশ করিয়ে আন্দোলনের গতি ও উদ্দেশ্য বিকৃত করছে তারা।

সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের আবাসন দাবিকে ঘিরে চলা আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ ও পরবর্তীতে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আন্দোলনকারীরা আলোচনা এড়িয়ে আচমকা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে, যা পরিকল্পিত উসকানি বলে বিবেচিত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই তারা ছদ্মবেশে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতায় জড়িয়েছে। এটা তাদের রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ।”

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ভুল থাকতে পারে, কিন্তু এই সরকার ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথও বিপন্ন হবে। তাই আন্দোলনের নামে যেন কেউ পরিস্থিতি ঘোলাটে করে বড় ধরনের সহিংসতায় না যায়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

এদিকে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ড, গাজীপুরে এনসিপি নেতার ওপর হামলা, গাইবান্ধায় ছাত্রনেতাদের ছুরিকাঘাত—এইসব ঘটনায় একে একে উঠে আসছে স্যাবোটাজ লীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ।

এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলন উসকে দিতে তৎপর একটি চক্র নিয়মিত মিথ্যা তথ্য, উসকানিমূলক ভিডিও ও কর্মসূচি ছড়াচ্ছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী নেতাদের নেতৃত্বেই এই অপারেশন পরিচালিত হচ্ছে। দলটির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেও হরতাল, মশাল মিছিল ও লিফলেট বিতরণের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।

গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, “একদিকে আন্দোলনে বিভাজন, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সীমান্ত উত্তেজনা, এসব ইস্যুকে ব্যবহার করে পরাজিত গোষ্ঠীটি ফের ক্ষমতা ফিরে পেতে ষড়যন্ত্র করছে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে একে ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা চলছে। সেইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিয়োগ পাওয়া সাবেক সরকারের অনুসারীদের মাধ্যমেও উসকানি দেওয়া হচ্ছে।

সব মিলিয়ে দেশে একটি পরিকল্পিত অস্থিরতা তৈরির ষড়যন্ত্র চলছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, “যেখানে আন্দোলন, সেখানেই ষড়যন্ত্রের ছায়া”, তাই প্রয়োজন রাজনৈতিক সচেতনতা, আন্দোলনে ফিল্টারিং, এবং প্রশাসনের কঠোর নজরদারি।

Advertisements