স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর
Advertisements

আজ সেই অতি কাঙ্ক্ষিত ২৬শে মার্চ, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী। এই দিনটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক দুঃখ-কষ্ট-বেদনা, রয়েছে অনেক উচ্ছ্বাস, আবেগ, অনুভূতি আর আনন্দবেদনার মিশ্রণ। অনেক ত্যাগ, অনেক সংগ্রাম, অনেক রক্তের বিনিময়ে এসেছে এ স্বাধীনতা।
আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদদেরকে। গভীর শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতাসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ সব নেতার স্মৃতির প্রতি। নৃশংসতার শিকার নারী ও শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের প্রতি জানাই সংহতি ও সহমর্মিতা।

হাঁটিহাঁটি পা পা করে স্বাধীনতা অর্জনের ৫০টি বছর পার হতে চলেছে। আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। রূপকল্প ২০২১-এর এ বছরটি একটু ব্যতিক্রমী এ কারণে যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। ২০২১-এর বাংলাদেশ আজ অন্য রকম এক বাংলাদেশ। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিশ্ব নেতাদের কারো কারো মতে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ‘তেজি ষাঁড়’, কারো মতে, ‘উন্নয়নের রোল মডেল, কারো মতে, অফুরন্ত সম্ভাবনার এক বাংলাদেশ। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীতে আমরা অন্যরকম এক বাংলাদেশকে দেখছি।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির ফলে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে বলে আপাতদৃষ্টিতে অনেকেই মনে করছেন। করোনা মোকাবিলা সক্ষমতায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ও বিশ্বে ২০তম। এ অভূতপূর্ব অগ্রগতি আমাদের ধরে রাখতে হবে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকগুলো আমাদের তা মনে করিয়ে দিচ্ছে। উন্নয়নের এ ধারা সম্ভব হয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে অভাবিত উন্নয়ন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের ফলে।

দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের এই দিনে রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের সূচনা ঘটেছিল, লাখো প্রাণের বিনিময়ে নয় মাস পর তার অবসান ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গোটা জাতি। কিন্তু সেই হানাদারদের সহযোগিতা করেছিল এ দেশেরই কিছু মানুষ। রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী ।পাকিস্তানি বাহিনীকে গণহত্যায় শুধু যে সহযোগিতাই শুধু করেছিল তা নয়; তারা নিজেরাও অস্ত্র ধরেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে; নিরীহ মানুষের ওপরও তারা চালিয়েছিল নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন।

একদিকে আইনি লড়াই, অন্যদিকে সহিংসতা চালিয়ে বিচারকাজ বন্ধের অপচেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।আশার কথা, দেশের সাধারণ মানুষ তাদের এই সহিংস তৎপরতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ যে চেতনার মশাল প্রজ্বালিত করেছিল, তা যেমন ছড়িয়ে পড়ছিল সারা দেশে। আজ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনও সেই চেতনারই অংশ বলে মনে করি।

মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল জাতীয় ঐক্য, ন্যায় ও গণতন্ত্র; মুক্তিসংগ্রামের মর্মকথা ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সব ধরনের অন্যায়-অবিচার, বৈষম্য থেকে মানুষের মুক্তি। যে লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা সেই লক্ষ্য ও আদর্শ কতটা অর্জিত হয়েছে,কতটা হয়নি, আজ স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তীতে সেই আত্মজিজ্ঞাসাও জরুরি। একাত্তরের চেতনায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাক—এটাই এবারের স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যাশা।

লেখকঃ শামসাদুল আলম নাঈম, শিক্ষার্থী

Advertisements