সোমবার সকাল থেকেই নিখোঁজ চার বছর বয়সী শিশু সিফাত আহমেদ। তার মায়ের ভাষ্য, একই বাড়িতে ভাড়া থাকা অপর ১২বছর বয়সী আরেক শিশু দুপুরে তাকে নিয়ে খেলতে যাওয়ার পর থেকে সিফাতের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। এ ঘটনায় সিফাতের বাবা আবু বকর সিদ্দিক সন্তান নিখোঁজের বিষয়ে শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন।
সাধারণ ডায়রির প্রেক্ষিতে শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক অংকুর কুমার ভট্টাচার্য ১২ বছর বয়সী ওই শিশুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে জানায়, সিফাতকে দিয়ে তার মায়ের মোবাইল ফোনটি আনিয়ে নেয় সে। পরে মোবাইলের কথা বলে দিতে পারে এ আশঙ্কায় বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে নির্জন স্থানে নিয়ে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে সিফাতকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সোমবার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামের দরগারচালা এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। হত্যায় অভিযুক্ত শিশুর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ সোমবার রাত দশটার দিকে মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহত শিশুর নাম সিফাত আহমেদ। সে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার উত্তর ঝুনাগাছ চাপানী গ্রামের আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে। আবু বকর সিদ্দিক শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিমখন্ড (মাওনা চৌরাস্তা, বর্ণমালা মোড়) গ্রামের হাজি আবদুস সালামের বাড়িতে ভাড়া থেকে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেডে নামের একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন।
হত্যায় অভিযুক্ত শিশুর পরিবারও একই বাড়ির ভাড়াটিয়া। তার বাবা স্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘মফনেট’র টেকনিশিয়ান পদে চাকরি করেন।
সিফাতের বাবা আবু বকর সিদ্দিক জানান, সোমবার দুপুরে সিফাত একই বাড়ির পাশের কক্ষের ওই শিশুর সঙ্গে খেলার জন্য বাইরে যায়। পরে তাকে (সিফাত) আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বিকেলে ওই ছেলের (হত্যায় অভিযুক্ত) কাছে জানতে চাইলে সে জানিয়েছিল, শিশুটিকে বাসার গেটে পৌঁছে দিয়েছিল।
পরে ব্যাপক খোঁজাখুঁজির পরও হদিস না পেয়ে বিকেলে এলাকায় মাইকিং করা হয়। সন্ধ্যায় সন্তান নিখোঁজের ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (নম্বর ৭১৬) করেন তিনি।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান খান জানান, পুলিশ শিশুটিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অসংলগ্ন আচরণ করে সে। একপর্যায়ে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে সীমানা প্রাচীর ঘেরা একটি নির্জন স্থান থেকে সিফাতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক অংকুর কুমার ভট্টাচার্য জানান, শিশুটির মাথা থেঁতলানো ছিল। পেটে উপর্যুপরি ধারালো বস্তুর আঘাতে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় অভিযুক্ত শিশুটি পুলিশকে জানিয়েছে, খেলার কথা বলে সিফাতকে সে সবার অগোচরে তার মায়ের মোবাইল ফোনসেটটি নিয়ে আসতে বলে। পরে মোবাইল ফোনটি সে ঘরের পাশে লুকিয়ে ফেলে। লুকানোর ঘটনা বলে দিতে পারে এ আশঙ্কায় পাশের দরগারচালা এলাকায় সীমানা প্রাচীর ঘেরা নির্জন স্থানে নিয়ে ইট দিয়ে মাথায় ও কোনো বস্তু দিয়ে শিশুটির পেটে উপর্যুপরি আঘাত করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দেয় শিশুটির।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, হত্যাকাণ্ডে ওই শিশুর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডটি স্রেফ একটি মোবাইল ফোনসেটের জন্যই কি-না সেটাও তদন্ত করে দেখা হবে।
মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।