সংগ্রামী ফিলিস্তিনি কবি মৌরিদ বারঘাউতি জর্ডানের রাজধানী আম্মানে ৭৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। আম্মানে তিনি নির্বাসনে ছিলেন।
মৌরিদের ছেলে আরব কবি তামিম বারঘাউতি গত রবিবার [ ১৪ ফেব্রুয়ারি]গভীর রাতে তাঁর ফেসবুকে পিতার মারা যাওয়ার কথা নিশ্চিত করে লিখেছেন, “আল্লাহ আমার মা-বাবার প্রতি দয়া করুন। আল-জাজিরা।
ফিলিস্তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রী আতেফ আবু সাইফ বারঘাউতি মারা যাওয়াতে মাগফিরাত কামনা করে বলেছেন, ফিলিস্তিনি এবং আরব বিশ্ব “জাতীয় সংগ্রাম এবং সৃজনশীলতার প্রতীক এক ব্যক্তিকে হারিয়েছে”।
৮ জুলাই, ১৯৪৪ তারিখে বারঘাউতি ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের শহর রামাল্লার উপকণ্ঠে দেইর ঘাসানাহ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের ৪ বছর পরেই ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
১৯৬৭ যুদ্ধের ঠিক কিছু দিক আগে অর্থাৎ ১৯৬৩ সালে, বারঘাউতি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে ডিগ্রী অর্জনের জন্য মিশরের রাজধানীতে চলে আসেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন।এবং পরের ৩০ বছর তাঁর জন্মভূমি রামাল্লাহ ফিরে আসতে পারেননি ।
বারঘাউতি জীবনের অনেক বছর অতিবাহিত করেছেন তাঁর মাতৃভূমি এবং ইজরায়েলি দখলদারিত্ব নিয়ে লিখে। মিশরে ফিরে আসার আগে তিনি লেবানন, জর্ডান এবং ইরাক সহ বিভিন্ন দেশে বাস করেছেন।
মিশরে থাকাকালীন সময়,মিশরীয় ঔপন্যাসিক রাদওয়া আশুরের সাথে পরিচয় হয়,এবং পরে তাঁকে বিয়ে করেন। ২০১৪ সালে তিনি তাঁর স্ত্রীকে হারান। আশুর বারঘাউটির আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস “আমি রামাল্লাহকে দেখেছি” তরজমা করেন।
১৯৯০-এর দশকে অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর রামাল্লায় ফিরে আসা, নির্বাসন জীবন এবং বাস্তুচ্যুত হওয়ার স্মৃতিচারণকে পুঁজি করেই তিনি তার উপন্যাস লিখেছিলেন।
প্রয়াত এডওয়ার্ড সাইদ উপন্যাসকে “ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুতদের অন্যতম সেরা অস্তিত্বের বিবরণ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২০০৯ সালে মৌরিদ আরেকটি উপন্যাস প্রকাশ করেন, যা ব্যাপকভাবে তাঁর প্রথম উপন্যাসের বাকি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যার শিরোনাম: আমি সেখানে জন্মগ্রহণ করেছি, আমি এখানে জন্মগ্রহণ করেছি। উপন্যাসটি তাঁর একমাত্র ছেলে তামিমের সাথে রামাল্লায় ফিরে আসার পর লেখা হয়। যা ২০১২ সালে ইংরেজিতে তরজমা করা হয়।
উপন্যাস ছাড়াও বারঘাউতি ১২টি কবিতা সংকলন প্রকাশ করেন।
তিনি অক্সফোর্ড, ম্যানচেস্টার, অসলো এবং মাদ্রিদের বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বব্যাপী অনেক স্থানেই ফিলিস্তিনি এবং আরব কবিতা নিয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন ।
বারঘাউতি অসলো চুক্তি এবং চুক্তির ফলাফলের তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং সম্প্রতি ইজরায়েলের সাথে মার্কিন দালালিতে আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তির নিন্দা জানিয়েছিলেন ।
যদিও তিনি ফিলিস্তিনি লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সদস্য ছিলেন কিন্তু বারঘাউতি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না ।
বারঘাউতি’র মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোন ঘোষণা পাওয়া যায়নি।