ইতিমধ্যে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আটটি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জানুয়ারিতে।৮ ইউনিয়নে মোট ১৩০টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে ৪৮টি কেন্দ্র। শ্রীপুরে ৩,০০৪৩৪ জন ভোটার রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সমর্থকদের দাবি তাদেরকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ ঠিকমতো করতে দেওয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন বারবার সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ দাবি করলেও বাস্তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা জানিয়েছেন প্রার্থীরা।
মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন শামীম বলেন, নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আমার লোকজনকে মারধর করছে প্রতিনিয়ত, আমি ঠিকমতো নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারিনি, দা লাঠি নিয়ে হামলা করেছে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ও সমর্থকেরা।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী (মোটরসাইকেল প্রতিক) আমিনুল ইসলাম বলেন, নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আজাহার হোসেন তালুকদার কিছুদিন আগে একটি মঞ্চে আমার নাম উল্লেখ করে হুমকি দিয়েছে, এবং পরাজয় সুনিশ্চিত ভেবেই বলেছে, যদি সে ৪/৫শ ভোটে হেরে যায় তাহলে নাকি আমার জবাব দিতে হবে। শুধু তাই নয়, আমার মোটরসাইকেল প্রতিকের প্রচারণার মাইক ভেঙে ফেলেছে।
রাজাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (চশমা প্রতিক) ফরিদা জাহান স্বপ্না বলেন, ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির নেতৃত্বে আমার সমর্থকদের বাড়িতে মামলার হুমকি দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, নয়টি মাইক এবং তিনটি অফিস থাকার কথা থাকলেও নৌকা প্রতিকের প্রার্থী সে নিয়ম লঙ্ঘন করে তা দ্বিগুণ ব্যবহার করছে। আমার পোস্টার ছিড়ে ফেলছে। এ ছাড়াও তারা প্রচার দিয়ে বেড়াচ্ছে, নৌকা ১ ভোট পেলেও পাশ করবে, ডিক্লিয়ার আগেই হয়ে গেছে। এই যখন অবস্থা, আমরা নির্বাচন করবো কিভাবে ? প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, বাস্তবে কোনও প্রয়োগ নেই।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতিক) ফরিদ আহমেদ সরকার বলেন, নৌকা প্রতিকের লোকজন নিজেদের অফিস ভাংচুর করে আমাকেসহ আমার ৪০ জন কর্মীর নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমার প্রচারণার সময় এ পর্যন্ত মোট তিনবার হামলা করেছে নৌকার সমর্থকরা। ১৫টি মোটরসাইকেল, একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করেছে, প্রচারণা চালাতে দেয়নি। প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে বিচার চাইলেও বিচার না করে আমার উপর স্টিম রোলার চালিয়েছে তারা।
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতিক) ড. এ কে এম রিপন আনসারী বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে প্রতিনিয়ত। সব জায়গা থেকে আমার পোস্টার ছিড়ে ফেলেছে। এসব দেখবাল করার দায়িত্ব প্রশাসনের, তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এমন অনিয়ম হচ্ছে। এমনটা ঘটতে থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়বে।
বরমী ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতিক) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, নৌকা প্রতিকের লোকজন নিজেদের অফিস ভাংচুর করে আমাকেসহ আমার অনেক সমর্থকদের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করেছে। আমার অনেক সমর্থকদের উপর হামলা করেছে নৌকার কর্মীরা। ঠিকভাবে প্রচারণা চালাতে পারিনি। প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে মামলা করা হয়েছে। আমাদের নামে করা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতিক) খন্দকার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর আমার সমর্থকদের উপর হামলা চালায় নৌকার কর্মীরা। এতে অনেকেই আহত হয়। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতিক) মো. আবু সাঈদ আকন্দ বলেন, কয়োকদিন আগে আমাকে প্রচারণা চালাতে দিবেনা বলে হুমকি দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বাস্তবেই আমাকে কোনও প্রচারণা চালাতে দেওয়া হয়নি। আমার এবং আমার সমর্থকদের উপর নিয়মিত হামলা হচ্ছে, আমি খুবই আতংকে আছি।
এছাড়াও অনেক প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে আচরণ বিধি লঙ্ঘনসহ যেকোনও অনিয়ম অসংগতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও সমস্যা সমাধানে তেমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এসব বিষয়ে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীরা বলেন,’এসব অভিযোগের কথাগুলো মিথ্যা। নৌকার জনপ্রিয়তায় ইর্ষাণ্বিত হয়ে এমন উদ্ভট অভিযোগ তুলেছে বিএনপির প্রার্থীরা’।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে শ্রীপুর উপজেলার প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা আল নোমান জানান, এখন পর্যন্ত নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। বিছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া বড় কোন বিশৃঙ্খলার খবর জানা নেই। কেউ কোনও অভিযোগ করলে সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করতে সবরকমের ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বক্ষণ মাঠে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল টিম টহল জোরদারসহ বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে সক্রিয় থাকবে।
সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছেন,সকল কিছুর পর আমাদের একটাই চাওয়া, নিরাপদ ভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে, আগামী ৫ বছরের জন্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করে ভোটের পবিত্র আমানত রক্ষা করতে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত,শ্রীপুর উপজেলার ৮ ইউনিয়নে মোট ১৩০টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে ৪৮টি কেন্দ্র। শ্রীপুরে ৩,০০৪৩৪ জন ভোটার রয়েছে।
মাওনা ইউনিয়নে মোট কেন্দ্র ১৭টি, মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৪১৪ জন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৫টি।
গাজীপুর ইউনিয়নে মোট কেন্দ্র ১৬টি, ভোটার ৩৮৮৫৬ জন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৪টি।
বরমী ইউনিয়নে মোট কেন্দ্র ২১টি, ভোটার ৫১৩৮৯ জন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৯টি।
তেলিহাটি কেন্দ্র ১৮টি, ভোটার সংখ্যা ৪২,১০১ জন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৬ টি।
কাওরাইদ ইউনিয়নে মোট কেন্দ্র ১৮টি, ভোটার সংখ্যা ৪০৮৩৯ জন।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র সংখ্যা ৫টি।রাজাবাড়ি ইউনিয়নে মোট কেন্দ্র ১৭ টি, ভোটার প্রায় ৩৬৮০৮ জন।ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৭টি।
গোসিঙ্গা ইউনিয়নে মোট কেন্দ্র ১২টি, ভোটার ২৮২৪৬ জন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৪টি।
প্রহলাদপুর ইউনিয়নে মোট কেন্দ্র ১১টি, ভোটার ২২,৭৮১ জন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৮টি।
শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শতভাগ প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ। তবে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন এবং কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার দাবি প্রায় সকল প্রার্থী এবং ভোটারদের। নির্বাচনী সহিংসতায় ইতিমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী তেলিহাটি ও বরমী ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থীর নামে মামলা করা হয়েছে। এতে তাদের কর্মীদেরও আসামি করা হয়েছে।