শ্রীপুরে ফরহাদ মাস্টারের ‘ক্ষমতার দাপটে’ তটস্থ শিক্ষকরা
Advertisements

গাজীপুরের শ্রীপুরে চার বছর ধরে প্রেষণে থাকা এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন কাজে তার ‘অন্যায় হস্তক্ষেপে’ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় শিক্ষকদের মাঝে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম লুৎফর রহমান ফরহাদ। তিনি বর্তমানে শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রেষণে কর্মরত। এ স্কুলের পাশের গ্রামে তার বাড়ি। এর আগে ফরহাদ মাস্টার জেলার কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।

অভিযোগ রয়েছে, সংযুক্তি শিক্ষক হিসেবে নিজ এলাকায় এসেই ফরহাদ নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজেকে শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দাবি করে নানা ‘অপকর্ম’ শুরু করেন। শ্রীপুর উপজেলার প্রায় প্রতিটি স্কুলের কমিটিতে কর্তৃত্ব খাটিয়ে নিজের পকেট ভারি করছেন।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শিক্ষকদের হয়রানি, বিদ্যালয়ে না আসা, এলেও স্বাক্ষর করে চলে যাওয়া, কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং স্থানীয় ছাতির বাজারে একটি কিন্ডারগার্টেন ও ওয়ালটনের শোরুম চালানোর অভিযোগে শাস্তিমূলকভাবে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া উপজেলার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফরহাদ মাস্টারকে বদলি করা হয়।

সেখান থেকে ২০১৯ সালের আগস্টে শ্রীপুরের মুলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রেষণে আসেন। এর পর থেকে তার অপকর্মের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

বিভিন্ন সময় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তোলা ছবি ব্যবহার করে শ্রীপুরের সাধারণ শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কায়দায় টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পান না।

ফরহাদ মাস্টার শ্রীপুরের সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসানকে হয়রানি করে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরহাদ মাস্টার প্রভাব খাটিয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী কোহিনূর আকতারকে টেপিরবাড়ি সরকারি বিদ্যালয়ের সভাপতি বানিয়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষোভে ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভায় কেউ আসেন না।

ফরহাদ মাস্টারের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্ষুব্ধ শিক্ষক ও উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। টেংরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, ফরহাদ মাস্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সবসময় হয়রানি করেন। সময়ে-অসময়ে স্থানীয় এমপি ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য শিক্ষকদের চাপ সৃষ্টি করেন। কেউ তার কথা না শুনলে মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করিয়ে হয়রানি করেন। আমরা শ্রীপুরের শিক্ষক সমাজ তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এ বিষয়ে আমরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগও দিয়েছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, ফরহাদ মাস্টার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। তিনি সবসময় শিক্ষকদের ভয় দেখিয়ে তটস্থ রাখেন।

অভিযোগের বিষয়ে লুৎফর রহমান ফরহাদ বলেন, কোনো অভিযোগই সঠিক নয়, আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ বলেন, আমরা ফরহাদ মাস্টারের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কাছ থেকে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। অচিরেই আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসাইন বলেন, ফরহাদ মাস্টারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisements