গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রী’র পরকিয়ার জেরে স্বামী মাসুদ নিহতের প্রায় আটমাস পর হত্যা মামলার আসামি রেহেনা ও জুয়েলকে আদালতের নির্দেশে গত বুধবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
স্ত্রী’র পরকিয়ার স্বচক্ষে দেখে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার এসআই আনোয়ার।
আত্মহনন কারী মাসুদ (৩৭) উপজেলার টেপিরবাড়ী গ্রামের আব্দুল মান্নানের সন্তান। মাসুদ পেশায় মুদি দোকানি ছিলেন।
মাসুদের করুণ মৃত্যুর পর তার ‘মা’ আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামিরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার রাজৈ গ্রামের হানিফের সন্তান ও নিহত মাসুদের স্ত্রী রেহেনা আক্তার (৩৩)। অপরজন উপজেলার টেপিরবাড়ি গ্রামের আব্দুস ছামাদ মাতবরের সন্তান জুয়েল (৩৫)। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী কন্ট্রাক্টর।
প্রসঙ্গত: গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ [শনিবার দিবাগত রাত] সাড়ে তিনটায় মাসুদ ঘুম থেকে উঠে তার স্ত্রী রেহেনা বেগমকে ঘরে না পেয়ে বাইরে গিয়ে বাড়ির পাশে আসামি জুয়েলের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে। সাথেসাথেই মাসুদ জুয়েলকে ধরে ফেলে। পরে এলোপাতাড়ি ধস্তাধস্তি করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায় জুয়েল। আপত্তিকর অবস্থায় দেখার পর বাঁধা দেওয়ায় রেহেনা তার স্বামী মাসুদকে তিনবার তালাক দেয়।
তখন উচ্চস্বরে এক তালাক! দুই তালাক! তিন তালাক বলে চিল্লাতে থাকে রেহেনা। তখন স্ত্রী রেহেনা (আপত্তিকর অবস্থায় থাকাবস্থায়) মাসুদকে তালাকের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “তুই মর! তুই মরস না কেন? তুই তাড়াতাড়ি মর! তুই মরলেই আমি জুয়েলকে বিয়ে করতে পারবো”।
তালাকের কথা শোনার সাথে সাথে নিস্তব্ধ হয়ে যায় মাসুদ। এরপর মাসুদ আর কোনও কথা বলেনি। পরদিন সকালে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে তার অপকর্মের কথা জুয়েলকে জিজ্ঞাসা করলে জুয়েল বলে, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরও সে (মাসুদ) বেঁচে আছে কেন? তার জন্য আমি রেহেনাকে বিয়ে করতে পারছি না’।এরপরই মাসুদ সকাল আটটায় বাড়ি থেকে বের হয়ে আর জীবিত ফেরেনি, ফিরেছে মাসুদের লাশ! সেদিন শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছিল রেলওয়ে পুলিশ। মাসুদের মৃত্যুর এমন করুণ বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখগুলো ঝাপসা হয়ে যায় তার মা ও বোনের। আসামিরা গ্রেফতার হলেও কান্না যেন থামাতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। তারা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
স্মরণীয়:পনেরো বছর আগে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার রাজৈ গ্রামের আব্দুল হানিফের সন্তান আসামি রেহেনা বেগমের সাথে পারিবারিক ভাবে তাদের বিয়ে হয়। তাদের দুইজন সন্তান রয়েছে। একজনের বয়স (১৩) এবং অন্যজনের (৭)। ১৩ বছর বয়সী সন্তান স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে কথা বলেছে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে। সে তার মায়ের পরকিয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট স্বাক্ষ্য দিয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, আসামিরা পলাতক থেকে হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জামিনে ছিল। স্থায়ী জামিন চেয়ে কোর্টে সারেন্ডার করার পর তাদেরকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার চার্জশিট করা হয়ে গেছে। রেহেনাকে জুয়েলের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখার পর রেহেনা তার স্বামী মাসুদকে আত্মহত্যার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।