বাংলাদেশের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সহিংসতা, দুর্নীতি এবং নিপীড়নের শিকার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের মধ্যে একটি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করার পর তারা দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। গোটা ঘটনাটিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি গণহত্যা হিসাবে নিন্দা করেছে। উদ্ভূত শরণার্থী সঙ্কট আজ সবচেয়ে জটিল একটি সমস্যা। এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাই শরণার্থী শিবিরে তারা আশ্রয় নিয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। তবে সেখানেও তাদের অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে, APBn আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের রোহিঙ্গা জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি লক্ষ্য করেছে শরণার্থী শিবিরগুলোতে পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। পুলিশের দুর্ব্যবহার অপরাধীদের সাথে যোগসাজশ – বাস্তুচ্যুতদের জীবন দুর্দশায় পরিণত করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া গবেষক শায়না বাউচনার বলেছেন, কক্সবাজার ক্যাম্পে পুলিশের নির্যাতনের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন, এদিকে এই পুলিশ বাহিনীর হাতেই রয়েছে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব।
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ দ্বারা পরিচালিত সাক্ষাত্কারে পুলিশের দুর্নীতির রিপোর্ট করা হয়েছে যার মধ্যে মিথ্যা মাদকের অভিযোগ এবং সহিংসতা-সম্পর্কিত অপরাধ রয়েছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে শত শত লোক নিখোঁজ হয়েছে বা পুলিশের হাতে নিহত হয়েছে মাদক বিরোধী লড়াইয়ে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে -মৃতরা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তি, এমনটাই জানাচ্ছে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন যে এই বন্দুকযুদ্ধগুলি আসলে কখন ঘটেইনি, বরং এই ধরণের গল্প বলে পুলিশ তাদের ভয় দেখায়। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মধ্যে যখনই কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়, পুলিশ তাদের পরিবারের কাছে এক হাজার ডলারের বেশি ঘুষ দাবি করে। তাদের প্রিয়জনকে মুক্ত করার জন্য তাদের কিছু মূল্যবান জিনিস বিক্রি করতে বাধ্য করে।
সাক্ষাত্কারীরা আরও রিপোর্ট করেছেন যে, যখন ABPn অফিসাররা শরণার্থীদের বাড়িতে গিয়ে যে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিলো তাকে সনাক্ত করতে পারে না, তার পরিবর্তে তারা সেই ব্যক্তির পরিবারের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে চলে যায়। এরকম একটি ছিলো বছর আঠারোর কামাল আহমেদের মামলা।
কামালের পরিবার জানাচ্ছে যে, তার বাবাকে খুঁজে না পেয়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল কামালকে কারণ কামাল তখন পুলিশের হাতে ঘুষ দিতে পারেনি। কামালের হতভাগ্য বোন বলছিলেন -”আমার মা গতকাল তার সাথে দেখা করতে কারাগারে গিয়েছিলেন এবং দেখেছেন পুলিশের মারধরের জেরে ভাইয়ের মুখ ফুলে গেছে… তাকে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। ”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পুলিশি অত্যাচার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কর্মকর্তারা শরণার্থীদের জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় হাজার হাজার দোকান ধ্বংস করেছে এবং দেশের অভ্যন্তরে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা সীমিত করেছে। অ্যাডভোকেসি গ্রুপ বলছে যে রোহিঙ্গারা যতদিন তাদের শাসনে থাকবে ততদিন তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া গবেষক শায়না বাউচনার – বাংলাদেশ সরকারকে এপিবিএন-এর হাতে রাষ্ট্রহীন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর চাঁদাবাজি এবং অন্যায়ভাবে আটক রাখার অভিযোগগুলি অবিলম্বে তদন্ত করার এবং এর পেছনে জড়িত সকলকে জবাবদিহি করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র : .occrp.org