রাজনীতি শুধু একটি জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, আবেগ, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন অনুষঙ্গকেই ক্ষমতার প্রয়োজনে ব্যবহার করে না; যৌনতার মতো অতি ব্যক্তিগত বিষয়কেও কাজে লাগায়। ক্ষমতার প্রয়োজনে যৌনতার ব্যবহার বা যৌনতাকে কাজে লাগনো অতি প্রাচীন একটি পদ্ধতি। আধুনিক এবং ইন্টারনেট দুনিয়ার সংস্কৃতির মধ্যে সব কিছুকেই কোন না কোনভাবে যৌনতার আমেজ দেয়ার একটা প্রবণতা আছে এবং এটার বিপুল চাহিদার ফলে রাজনীতি হয়ে উঠেছে এক ধরণের ‘পলিটিক্যাল পর্নোগ্রাফি’। ফরাসি দার্শনিক এলান বাদিউ’র সাম্প্রতিক একটি বই ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে বাজারে এসেছে। ‘দ্যা পর্নগ্রাফিক এজ’ নামে ২০২০ সালে প্রকাশিত বইটিতে তিনি এ জমানার চরিত্র বিশ্লেষণ করেছেন। সেটা নিয়ে একটা কিস্তিতে আলাপ করবো।
পর্নগ্রাফিক কালের একটা প্রবণতার কথা শুধু এখন বলি। শুরুতেই তিনি আলোচনা করেছেন, আমাদের বর্তমানকে ভুলিয়ে দেয়ার যে প্রবণতা চারদিকে জারি রয়েছে তা নিয়ে। পর্নগ্রাফিক কালের এটা একটা ভালো নিদর্শন। আমরা অতীত ও ভবিষ্যত নিয়ে মেতে থাকি। আমাদের জীবন থেকে বর্তমানই নাই হয়ে যায়। এমন সব প্রসঙ্গ ও ইভেন্ট তৈরি করা হয় আমাদের যাপিত বর্তমান হয়ে ওঠে বিমূর্ত। আমরা বুঝতে পারি না কেমন সময়ের মধ্যে আমরা আছি। আর এ কাজে যৌনতার চেয়ে ভালো উপাদান আর হয় না। জনগণ বিপুল আমোদের সাথে এইসব বিনোদন গ্রহণ করে এবং উত্তেজক খবর হিসেবে মিডিয়ার কাছে এর চাহিদা তুঙ্গে। রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডে যৌনতার ব্যবহার নিয়ে অনেক ধরণের গবেষণা ও বইপত্রও রচিত হয়েছে, হচ্ছে। আগামী কয়েকটা কিস্তিতে আমরা তাত্ত্বিক, সামাজিক ও নাগরিক পরিসরে যৌনতার বিষয়টি নিয়ে খুব সরল করে কিছু কথা বলতে চেষ্টা করবো।
পর্নগ্রাফিক কালের এটা একটা ভালো নিদর্শন। আমরা অতীত ও ভবিষ্যত নিয়ে মেতে থাকি। আমাদের জীবন থেকে বর্তমানই নাই হয়ে যায়
ক.
শরীর মূলত ক্ষমতার একটি অন্যতম প্রধান ভরকেন্দ্র। আমরা ফুকোর বদৌলতে বায়োপলিটিকস এর কথা জানি। শরীর ও সমাজের সম্পর্ক এবং এর সাথে ক্ষমতার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গেলে যৌনতার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিহাস হদিস করতে হবে। পরের কিস্তিতে ফুকোর নতুন (The Confessions of the Flesh: the fourth and final volume of Michel Foucault’s History of Sexuality, was published in French in February 2018 as Les Aveux de la chair. The English translation by Robert Hurley came out early this year, 2021) বইটা নিয়ে আলোচনা থাকবে তাই এখানে এটা আর বড় করছি না। এখানে শুধু উল্লেখ থাকছে যে শরীর সরাসরি ক্ষমতা ও রাজনীতির অন্যতম ভরকেন্দ্র। শরীরের অনেক রকম ব্যবহার আছে কিন্তু এর সবচেয়ে চরমতম ব্যবহার হলো রাজনৈতিক ব্যবহার। এভাবে শরীরের রাজনৈতিক ব্যবহারে শুধু যৌনতা না খোদ রক্ত-মাংসের শরীরও একটি অস্ত্র। আপনারা উদাহরণ হিসেবে সহজেই ভাবতে পারেন, আত্মঘাতি আক্রমণের কথা। এর বাইরে শরীরকে কেন্দ্র করে সমাজে যে ধরণের ডিসকোর্স/বয়ান ( বা যার বাংলা করেছি- শাসনতান্ত্রিক হুকুমত) থাকে তার ফরমেশনে বা গঠনে যৌনতার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।
ক্ষমতা যৌনতার এই সম্মোহনী শক্তিকেও কাজে লাগায় নানান ভাবে। এই জন্যই বলা হয়, ‘Power has no gender’। কিন্তু এ কথাটা আসলে ক্ষমতার যৌনতার ওপর কতটা দখল আছে তা ভালো মতোন প্রকাশ করতে পারে না। বরং বলা ভালো, ‘Power has both gender’। যতরকম জেন্ডার রোল সবই ধারণ করতে পারে ক্ষমতা। এবং প্রয়োজনে ক্ষমতা জেন্ডারের নয়া ধারণাও তৈরি করতে পারে। জেন্ডারের বাংলা কোনভাবেই লিঙ্গ হতে পারে না। জেন্ডার এমন কিছু যা লিঙ্গ নির্ধারণে ব্যবহার হয়। বাজে অনুবাদে খোদ জেন্ডারকেই লিঙ্গ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। যাহোক, জেন্ডার যেটাই হোক না কেন- ক্ষমতা সেটাকে ব্যবহার করতে পারে। এই জন্য প্রয়োজনে ব্যক্তির আইডেনটিটিও চেঞ্জ করে ফেলা হয়। একজন ট্রান্সজেন্ডার বিরোধী মতের কাউকে ফাঁসানোর জন্য নিজেকে ‘নারী’ দাবী করে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দিয়ে তাকে আইনীভাবে জব্দ করতেও আমরা দেখেছি। ফলে যৌনতার নিরিখে ব্যক্তির যে ধরণের পরিচয় সমাজে নির্মাণ হয় ক্ষমতা তাকে গ্রাস করতে পারে। প্রয়োজন মতো তাকে ব্যবহার করতে পারে। আবার যখন দরকার হয় মোরাল গেইম খেলার তার খেলতে পারে। নৈতিকভাবে কাউকে ঘায়েল করার দরকার হলেও ক্ষমতা অস্ত্র হিসেবে যৌনতাকে বেশ শক্তভাবে ব্যবহার করতে পারে।
সবচেয়ে চরমতম ব্যবহার হলো রাজনৈতিক ব্যবহার। এভাবে শরীরের রাজনৈতিক ব্যবহারে শুধু যৌনতা না খোদ রক্ত-মাংসের শরীরও একটি অস্ত্র
খ.
মিডিয়াতে আমরা বিভিন্ন অস্ত্রধারী সংগঠনের অতর্কিত আক্রমনের খবর পাই। এই ধরণের হামলাকে এসাসিনেশন বলে খবর করা হয়। ঠিক তেমনি রাজনীতিতে চরিত্রহত্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা। আর এই ‘ক্যারেকটার এসাসিনেশন’ কাজে কোন গোলাবারুদ, বন্ধুক ব্যবহার করতে হয় না। সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র হলো যৌনতা। ভিন্নমত, দলকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা এবং তাদের আইনী কাঠামো ব্যবহার করে হোক বা দলীয় বাহিনী দিয়ে হোক দমন করা, হত্যা করা কোনভাবেই কোন স্বৈরাচারী শাসকের অবস্থানকে শক্তিশালী করে না। সব নৈতিকতা ধ্বংস করার পরে যৌনতাকে নৈতিক উপাদান হিসেবে এই ধরণের ক্ষমতা ব্যবহার করতে তার সব রকম শক্তিকে কাজে লাগায়। এতে জনপরিসরে তাকে যেমন জনপ্রিয়তার সংকটে পড়তে হয় না, তেমনি জনগণ প্রকৃত সমস্যা ও ক্ষমতা এবং রাজনীতি ও তার অধিকারের প্রশ্নের চেয়ে সিনেমাটিক উত্তেজনায় মেতে থেকে বিনোদিত হতেই পছন্দ করে। নিষিদ্ধ কথা-বার্তা, শরমের বিষয়, লাজ-লজ্জার বিষয়গুলো পাবলিক গসিপে পরিণত হতে থাকার মধ্যদিয়ে সমাজের পুরানা দিনের নৈতিকতার চাদর ধীরে ধীরে উদাম হতে থাকার এই উত্তেজক মুহূর্তকে জনগণ একটা বিশাল পরির্বতন বা নয়া পরিস্থিতি হিসেবে দেখে থাকে। একটা থ্রিল অনুভব করে। অন্যদের সাথে সাথে নতুন প্রজন্মও স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি এ বেশরমীপনার উন্মাদনাকে বিস্তৃত করতে সক্রিয় হয়ে থাকে। ফলে নিজেদের কার্যকরী ভূমিকার দিকে মনোযোগ ফেরানোর বদলে বিপুল জনগণ এই উত্তেজক উপাদানের গ্রাহক হয়ে ওঠে।
যাই হোক এ দিকগুলো আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করি, যদিও চিন্তা-ভাবনা করে এর রাজনৈতিক, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো খতিয়ে দেখি না। তাহলে দেখা যাচ্ছে হত্যা, গণহত্যা, ইত্যাদির মাধ্যমে দমন বা অত্যচারের চেয়ে আরও কার্যকর হলো, ‘ক্যারেকটার এসাসিনেশন’। যে কোন ফ্যাসিবাদী শাসন ও এর সমর্থকরা শুধু যে রাজনৈতিকভাবেই বিকারগ্রস্ত তা নয়, এরা যৌনতার দিক থেকেও বিকারগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত, অসুস্থ। ফলে পৃথিবীর প্রতিটি ফ্যাসিবাদী শাসনে যৌনতার একটা রসালো ব্যবহার থাকে। একটা ওপেন ন্যুডিটি তার দরকার হয়। যেহেতু সব নীতি ও সত্যকে ধ্বংস করে একমাত্র নিজের নীতি ও সত্যকে কায়েম করে ফলে অনায়াসে এই ধরণের ক্ষমতা বলতে পারে, সানি লিওনই দুনিয়ার সবচেয়ে সতী নারী। আর যে নারী কোনদিন ঘরের বাইরে আসে নাই বা পরপুরুষের সাথে দেখা দেয় নাই তাকে যদি বলে এইটা বাজারি, ইজ্জত বিক্রি করে চলে তাতেও সমস্যা নাই। সে এটা বলতে পারে। ফলে যারা সব কিছুকে অতি সরল, হয় সে ভাল নয় সে খারাপ- এই বাইনারি পজিশন থেকে দেখে তারা কম বেশি এগুলো বিশ্বাস করে। দেখবেন এই ধরনের সরকারগুলো প্রতিষ্ঠিত নট-নটিদের(অভিনেতা-অভিনেত্রী) নিয়ে নিজের প্রচার কাজ চালায়।
গ.
তথাকথিত সেলিব্রেটিদের(ছেলে-মেয়ে উভয়) প্রতি সাধারণ জনতার যে অবসেশন বা কামনামিশ্রিত আগ্রহ আছে তা মোটাদাগে যৌনতাপ্রসূত। কিন্তু এ যৌনতার চোরাটানকে বিনোদনবাণিজ্যের জগতে ‘গ্ল্যামার’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। পাবলিককে তখন বোঝানো হয় উনি তারকা বা সেলিব্রেটি কারণ তার আছে গ্ল্যামার। আসলে গ্ল্যামার বলতে কি বোঝায়? কেউ স্পষ্ট বলতে পারবে না। এবং কেন মনে করা হয় এই এই কারণে একজনের গ্ল্যামার আছে, আর এই কারণে অন্যজনের নাই-এ বিচারে ন্যায্যতার কোন জাস্টিফিকেশন নাই। এটা একটা আলগা গর্বের মতোই বানানো জিনিস। যেই লুঙ্গি পরিধান করাকে একসময় বিবেচনা করা হতো একটা খ্যাত/অসংস্কৃত/অনাধুনিক বিষয় সেটাকেও বিনোদনবাণিজ্যের প্রয়োজনে প্রন্ড গ্ল্যামার হিসেবে হাজির হতে দেখা যায়। এমন বহু বিষয় আছে। ফলে এই গ্ল্যামার ব্যাপরটা একটা বিমূর্ত ও রহস্যময় বিষয় করে রাখা হয়েছে। এটা বিনোদন বাণিজ্যের অদৃশ্য হাত বা অজুহাত। একবার চিন্তা করেন তো, যৌনতাহীন গ্ল্যামার কি বিক্রি হবে? নাকি তাকে তারকা হিসেবে পাবলিক মেনে নেবে? ফলে এখানে গ্ল্যামার হলো, তারকার প্রকাশ্য বা গোপন যৌনতার ওপর এমন এক পর্দা যা একটু বাতাসেই পতপত করে উড়তে থাকে, ঢিলেঢালা হতে থাকে। যতই হাওয়া লাগে আলুথালু হতে থাকে ততই জনগণ চমকিত হয়ে যায়- এই বুঝি গ্ল্যামারের পর্দা সরে গিয়ে ‘আসল’ কিছু বেরিয়ে আসবে, যতই গ্ল্যামার- এর পর্দা হেলে দোলে ততই পাবলিক শিহরিত হয়। আর গ্ল্যামারওলা/ওলীর আসল নজর থাকে যতটা দেখতে পারে দেখুক কিন্তু এই গ্ল্যামারের পর্দা পুরোপুরি সরে না গেলেই হয়। বা বাণিজ্যের হাত মাথার ওপর থাকলেই হয়।
যৌনতার চোরাটানকে বিনোদনবাণিজ্যের জগতে ‘গ্ল্যামার’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। পাবলিককে তখন বোঝানো হয় উনি তারকা বা সেলিব্রেটি কারণ তার আছে গ্ল্যামার
ফলে গ্ল্যামার এখানে একটা যৌনপর্দা বা ঢাকনা ছাড়া আর কিছু না। এই গ্ল্যামারকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে জানে ক্ষমতা। কিন্তু যদি ক্ষমতার প্রয়োজনের বা স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় তখন এই পর্দা সরিয়ে তাকে উদাম করে দেয়া হয়। তখন পতন হয় তারকার। নিজের ক্ষুদ্র কমিউনিটিতে সে হয়তো তখনও তারকা হিসেবে টিকে থাকতে চেষ্টা করে। কিন্তু সমাজিক ও বৃহৎ জনগোষ্ঠির কাছে তার তারকাগিরিকে জাহির বা হাজিরের পথ কোন না কোনভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। কিছু দিন মুখরোচক গল্পের খোরাক জুগিয়ে হারিয়ে যায় সেই তারকা। দেখবেন বিভিন্ন সমাজে ও দেশে- এই ধরণের তারকা বা সেলিব্রেটিদের খুব সুন্দরভাবে ব্যবহার করা হয় ফ্যাসিবাদের পক্ষে। তাদের মধ্যে এই সেলিব্রেটিদের নিয়ে ভাগবাটোয়ারাও চলে। স্বার্থের সংঘাত শুরু হলে তখন হয়তো একদল আর এক দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে দেয়। আর তখন জনগণ ডাবল বিনোদন পেতে থাকে। কাল যে বিশাল সেলিব্রেটি, জাতির গর্ব ছিল আজ হয়ে যায় সব চেয়ে খারাপ, নোংরা মানুষ। মিডিয়া রসিয়ে রসিয়ে এই ঘটনার বয়ান করতে থাকে। যদিও এই ধরণের সেলিব্রেটিদের বেশিরভাগই ক্ষমতার দাস। কোন নাগরিক পজিশন নাই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে, স্রোতে বিরুদ্ধে দাঁড়াতে দেখা যায় না। তাদের কাছে সেটা অবশ্য কেউ আশাও করে না।
আবার এই সেলিব্রেটি ক্রেজজনিত বিষয়টা যদি ক্ষমতার বিপক্ষে যায় তাইলে তাকে হাজির করা হয় একটা নীতির প্রশ্ন আকারে। তখন তাকে মিডিয়া ও সমাজের সামনে প্রথমে অনৈতিক কাজের জন্য হেয় করা হয়। আবার যখন দরকার হয় তখন তাকে ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করে তার পক্ষে জনগণের সিম্পেথিও তৈরির চেষ্টা করা হয়। একই কারণে সে পূজিত, নন্দিত, আবার একই কারণে নিন্দিতও হতে পারে। মানে, তার নিজের জীবনের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রন থাকে না। তার কোন সেল্ফ/স্বত্ববোধ থাকে না। এই জন্য বেশির ভাগ সেলিব্রেটিই ননপলিটিক্যাল থাকতে চেষ্টা করেন। এটা করতে গিয়ে ক্ষমতার পক্ষেই থাকতে হয়। না হলে তো তাকে মূলধারায় টিকতে দেয়া হবে না।
বিরোধিতা করলে বা তাকে ক্ষমতার প্রয়োজনে কুরবানি দিতে হলে দেখা যায়- কোন তারকার যদি মদ খাওয়ার লাইসেন্স থাকে তার পরেও তাকে মদ্যপ হিসেবে প্রচার করা হয়। যদি তার বিয়ে করা বউ থাকে কিন্তু বেকায়দায় পেলেই তাকে সাইজ করার জন্য যৌনতাকে ব্যবহার করা হয়। তখন যৌনতাকে হাজির করা হয় মোরাল ব্লেইম আকারে। তখন হয়তো ধর্ষকামী একজন জাজ করেন তিনি প্রেমিকা নিয়া ঘুরতে বের হয়েছেন না, নাকি তাকে বিয়ে করেছেন, নাকি ফূর্তি করতেছিল টাকা বা কোন কিছুর বিনিময়ে। আসলে সত্যি সে কি করছেন তাতে কিছু যায় আসে না। ক্ষমতা যে ধারণাটা পয়দা করতে চায় সেটা সে করবেই সেই ব্যক্তি মহাপবিত্র হলেও কোন সমস্যা নাই। এবং যারা স্লেভ/দাস নৈতিকতার চর্চা করে তাদের জন্য এটা খুবই সহজ। দাসের নৈতিকতা হলো, অন্যের কাছে দেখানোর জন্য, মানুষ কি বলবে(এগুলাই স্লেভ/দাস নৈতিকতা। যা ভয়ংকর রূপ নিয়ে হাজির হতে পারে যে কোন সময়)। নিজের কাছে তার কোন জবাবদিহিতা নাই। কাজেই এই ধরণের নৈতিকতার আলোকে যে সমাজ চালিত হবে সেখানে একজন গুন্ডা রায় দেবে আপনি ভদ্র না অভদ্র। একজন ধর্ষক বিচার করবে যৌনতার বিষয়গুলো।
জেন্ডারের বাংলা কোনভাবেই লিঙ্গ হতে পারে না। জেন্ডার এমন কিছু যা লিঙ্গ নির্ধারণে ব্যবহার হয়। বাজে অনুবাদে খোদ জেন্ডারকেই লিঙ্গ বানিয়ে ফেলা হয়েছে
এইসব স্লেভ মোরালিটি এক ধরণের নৈতিক সুড়সুড়িমূলক খেলার পরিবেশ তৈরি করে। এটার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, নন-ইস্যুকে ইস্যুতে পরিণত করা যায় সহজেই। কে কারে নিয়ে কই গেল, শুইলো না বসলো এটা মোটেও কোন ইস্যু না। এটা খুবই অপ্রয়োজনীয় বিষয়। কিন্তু এটাই তখন দুনিয়ার সবচেয়ে দরকারী একটা বিষয় হয়ে যায়। এইসব ঘটনাকে হাজির করে সাইলেন্ট পর্নোগ্রাফির আমেজ দিয়ে জনতার কল্পনাকে উত্তেজিত করার সুযোগ কেন হাতছাড়া করবে ফ্যাসিবাদ? কিন্তু অবাক করার বিষয় হল, পাবলিক এতটা ফটকা হয় কি করে? এরা এগুলা এন্টারটেইন করছে। যতদিন এই ফ্যানাটিসিজম থাকবে ততদিন ফ্যাসিবাদ আরামেই থাকবে। এমন সব বিষয়ের সাথে এই ধরণের ইস্যুটাকে জড়িয়ে ফেলা হয় যেটা নিয়ে ঠিক পারিবারিক পরিমণ্ডলে আলাপ করা যায় না। বা ভদ্রলোকের রুচির বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় পুরো ইস্যুগুলোকে। শুধু উম্মাদরাই এগুলো নিয়ে মেতে থাকে। সো পাগল আর শিশুদের ক্ষমতাসীনদের কোন ভয় নাই। অন্যদিকে আরও হাস্যকর বিষয় হলো, পরাধীন মানুষগুলোও প্রগতির আলগা আস্ফালনে এইসব ঘটনায় যৌনস্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠে। এগুলা সবচেয়ে সরস ফটকা। যে কোন স্বৈরাচারের প্রথম পছন্দ হলো এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন স্বেচ্ছাচারপ্রিয় লোকজন।
মনে রাখতে হবে, যতদিন ভাল ও মন্দের বাইনারি জাজমেন্ট (এক এর বিপরীতে আর এক) দিয়ে আমরা একজনকে বিচার করবো ততদিন আমরা সত্য থেকে দূরে থাকবো। যে কোন সেকুলার-ফ্যানাটিক কন্ডিশনে ভালো ও মন্দ একই জিনিস। আজ যাকে ভালো মনে করছেন কাল এই আপনিই তাকে খুবই মন্দ ও বাজে মনে করতে শুরু করবেন। কারণ, আপনার কাছে যা খুব খারাপ অনেকের কাছে তা খুব ভালো। এবং এটার একটা তর্ক সমাজে জারি থাকে, জারি রাখা হয়। আপনি এই তর্কদ্বারা প্রভাবিত হয়ে, ভালো বা খারাপের পক্ষে অনড় কোন পজিশনে থাকতে পারেন না। সমাজে এইসব ধারণা যেভাবে পরির্বতন হয় আপনিও এটার সাথে সাথে মত পরির্বতন করে ফেলেন। এভাবে মতাদর্শিক কোন পজিশন নেয়ার মতো অবস্থা থাকে না আর। এতে ইডিওলজিহীন একটা জনগোষ্ঠী তৈরি হয়। তারা এই একজনকে আকাশে তুলছে , এই একজনকে পাতালে নামাচ্ছে। পুরাই হুলস্থুল ব্যাপার।
কাজেই এইসব চিন্তাহীন, সেল্ফ কমিটমেন্টহীন সেকুলার কন্ডিশনে ভালো-খারাপের পার্থক্য থাকে না। একই জিনিস হয়ে যায়। এই জন্যই দেখাতে পাওয়া যাচ্ছে- কালকের ভারতবিরোধী, আজ ভারতপন্থী। আজকের পাকবিদ্বেষী কাল পাকপ্রেমী। আমাদের দেখতে হবে ‘বিয়ন্ড গুড এন্ড ইভিল’ (ভাল-মন্দের বাইনারীর বাইরের) পজিশন থেকে। ভাল ও মন্দের দ্বৈততা থেকে আমরা যখন মুক্ত হতে পারবো তখন বাকি থাকবে সত্যের দিকে পৌঁছানোর পথ, আর তা না হলে তথাকথিত ভালো-মন্দের তর্কে আটকে থাকতে হবে। অনেকে হয়তো বুঝতে পারছেন, আমি এখানে পুরাই নীতশীয়ান। নীতশের শিক্ষার আলোকে এইসব বিষয় দেখে থাকি। এগুলা নিয়ে আরও বিস্তারিত লিখতে হবে। আপনি ধর্ম করেন বা না করেন, সেকুলার হন বা হুজুর হন- আপনার চিন্তার কাঠামো যদি হয় স্লেভ মোরালিটি দ্বারা প্রভাবিত, আপনি মাঝে মাঝে মোরাইল গেইম দিয়ে অন্যকে জব্দ করবেন হয়তো। এবং মাঝে মাঝে অন্যরা আপনাকেও জব্দ করবে। যৌনতা ও মোরালিটি ফ্যাসিবাদের খুব কমন ব্যবহারের জিনিসগুলোর একটা। আমরা দেখতে চাই বিয়ন্ড গুড এন্ড ইভিল পজিশন থেকে। বিয়ন্ড স্লেভ মোরালিটি থেকে। দেখতে চাই ট্রুথফুল কন্ডিশন থেকে।