বড় ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। বেশ কয়েকজন পাত্রী দেখা হয়েছে। এরমধ্যে একটি মেয়ের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করব। কারণ এই চিত্রটা আমাদের সমাজে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
সাধারণত পাত্র-পাত্রীকে অভিভাবকদের সামনেই একান্তে আলাপ করতে দেয়া হয়। যেন প্রত্যেকেই নিজের চাহিদা ও স্বপ্ন একে অপরের সাথে শেয়ার করতে পারে এবং নিজেদের ভিতর একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়। এই বোঝাপড়াটা বিবাহের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হয়।
সেই একান্ত আলাপনে পাত্রীর পক্ষ থেকে একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হন আমার ভাই। সেই প্রশ্নটি হল, বিবাহের পর ছেলে ফ্রেন্ডের এক্সেস আছে কিনা? প্রশ্নটা শোনার পর আমার ভাই বোকা হয়ে যান। এরপর আর কোন আলোচনা সামনে আগানো সম্ভব না এবং এখানেই আমাদের ফ্যামিলি থেমে যায়।
আমাদের সমাজে ফ্রিমিক্সিং একটি বৈধ ও স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অথচ ইসলামী শরীয়তে এটি অকাট্য হারাম বিষয়। একটা সময় মুসলিম সমাজে ফ্রি মিক্সিংয়ে অভ্যস্ত এবং এতে লিপ্ত হতে চাওয়া মেয়েকে পাত্রী হিসেবে প্রত্যাখ্যানযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হত। ফলে পাত্রী পূর্ব থেকে ছেলেদের সাথে মেলামেশায় অভ্যস্ত থাকলেও ছেলের পরিবারের কাছে বিষয়টি সর্বোচ্চ গোপনীয় রাখার চেষ্টা করত। আর এখন বিবাহ পূর্ববর্তী একটি চাহিদায় পরিণত হচ্ছে এই ফ্রি মিক্সিং।
বর্তমানে ফ্রিমিক্সিং চর্চার একটি ভয়াবহ ক্ষেত্র হল টুরিস্ট গ্রুপগুলো। বিগত কয়েকবছরে বাংলাদেশে ট্যুর একটি ফিৎনা এবং মতবাদে রূপ নিচ্ছে। এবং জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থা থেকে এর প্রভাব মাদ্রাসায়ও ঢুকে পড়েছে। এই ট্যুর এমন এক নেশায় পরিণত হচ্ছে যেখানে দ্বীন, নৈতিকতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের কোন কেয়ার থাকে না। উন্মাদ এক নেশা কাজ করে এই সমস্ত ট্যুর গ্রুপগুলোতে। সুযোগ পেলে একদিন ইসলামে ভ্রমণনীতি ও বর্তমান ট্যুরিজম নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।
দেখা যাচ্ছে, হিজাব, বোরকা, দাড়ি, টুপি পরিধান করেও অনেকে ফ্রিমিক্সিংয়ে লিপ্ত হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বাধ্য হয়ে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে। এটা সত্য। কিন্তু অধিকাংশই হচ্ছে ইচ্ছাকৃত, স্বপ্রণোদিত এবং জাহেলিয়ায় গাঁ ভাসিয়ে দেয়ার তাড়না থেকে।
তিনচারটা ছেলের সাথে একটা মেয়ে ঢাকা থেকে চট্রগ্রামে চলে যাচ্ছে। লঞ্চের কেবিনে করে বরিশাল ট্যুর দিচ্ছে। দূর দূরান্তে গিয়ে হোটেল ভাড়া করে থাকছে। এর মধ্যে অনেক হিজাব ও বোরকা পরিহিত বোনকেও দেখা যায়। প্রথমত মাহরাম ছাড়া সফর করাই মেয়েদের জন্য নিষিদ্ধ। সেখানে এই বোনেরা মাহরাম ছাড়া ফ্রি মিক্সিংয়ের পরিবেশ সাথে নিয়ে ঘুরছে ফিরছে। ব্যাপারটা ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই নিষিদ্ধ। দোষটা উভয়ের কাঁধেই যাবে।
এই কাজগুলো সমাজকে খুব এগিয়ে নাচ্ছে তাও না। বরং সমাজে নানারকম জটিলতা সৃষ্টি করছে। ধর্ষণ, হত্যা, পরকীয়া, বৈবাহিক সম্পর্কে ফাটল, ডিভোর্স, বিবাহ বিড়ম্বনা ইত্যাদি সামাজিক অপরাধকে সংস্কৃতি বানিয়ে দিচ্ছে। কদিন আগেও লঞ্চে তিন ছেলের সাথে একলা এক মেয়ে ট্যুরে বের হয়। তারপর কেবিনে যৌনক্ষুধার শিকার হয়ে লাশে পরিণত হয়। এরকম কিংবা কাছাকাছি ঘটনাগুলো নিয়মতই ঘটছে। কিন্তু সমস্যা হল, আমরা ও আমাদের অভিভাবকরা এখান থেকে শিক্ষা নিচ্ছি না। পরে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কপাল মারা শুরু করি।
একটি সভ্যতা, একটি সমাজকে ধ্বংস করার জন্য এই ফ্রি মিক্সিং সংস্কৃতিই যথেষ্ট। এর প্রভাব অত্যন্ত বিস্তৃত। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবাই এর প্রভাবে ধ্বসে নামতে থাকে। সমাজে ফ্রিমিক্সিংয়ের ব্যাপারটা যতই স্বাভাবিক এবং ব্যপক হয় ততই সমাজের সভ্যতা ও সংস্কৃতি ধ্বসে পড়তে থাকে। নিউ ওয়াল্ড অর্ডারের সময়কালে ফ্রিমিক্সিংয়ের বিরুদ্ধে বলা অনেকের কাছেই মধ্যযুগীয় পশ্চাতপদতা মনে হতে পারে। কিন্তু তারা যদি মুসলিম হয়, তবে বুঝতে হবে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে সেই মধ্যযুগীয় পশ্চাতপদতার দিকেই ফিরে যেতে হবে। সেটাই আমাদের স্বর্ণযুগ।