মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে নিজের মধ্যে কোন ভয় বা আতঙ্ক নেই জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, এটা তাদের জন্য সঙ্কটের কারণ হবে যারা ঘুষের টাকায় তথা দুর্নীতি করে আমেরিকায় বাড়ি-গাড়ি করেছে। ভিসা না পেলে সেখানকার সম্পদ কীভাবে দেখভাল তথা রক্ষা করবে? তা নিয়ে তারা শঙ্কিত বলে মনে করেন তিনি। মার্কিন ভিসানীতিসহ বর্তমান রাজনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে ‘জাগো নিউজ’-এর সঙ্গে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে তিনি নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মাতামাতির পেছনে সংবাদ মাধ্যমের দায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। বলেন, আমাদের সংবাদ মাধ্যম বিদেশিদের বক্তব্য শুনলেই লাফিয়ে ওঠে।
বিদেশে যখন ইলেকশন হয়, আমেরিকায় যখন ইলেকশন হয় কোনো বিদেশি সাংবাদিক তাদের খবরও দেয় না। কোনো রাষ্ট্রদূত কিংবা বিদেশি সম্মানিত নোবেল লরিয়েটের আমেরিকার ইলেকশন নিয়ে কথা বলার সাহস নেই। বিদেশিরা কিছু বললেই ফলাও করে প্রচার করা হয় মন্তব্য করে ড. মোমেন বলেন, আমাদের দেশের মানুষের মন-মানসিকতাও ভাল না। বিদেশিরা বললেই বলে ভালো, আর দেশি লোক হলে সম্মান দেয় না, এটা দুঃখজনক। রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের আগে আমেরিকার নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমি আমেরিকার নাগরিক ছিলাম। নাগরিকত্ব বাদ দিয়ে এসেছি।
খুব কম সংখ্যক লোক নাগরিকত্ব ত্যাগ করে স্বদেশে ফিরে। দেশের অনেক সরকারি কর্মচারী, ব্যাংকের মালিক কিংবা ব্যাংকার (এমডি-সিইও), সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি, হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট বিদেশের পয়সায় চলেন মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে পাওয়া অর্থ তারা কীভাবে খরচ করেন তা আমরা জানি না!
আমেরিকায় এভাবে এক পয়সাও খরচ করা যায় না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা টাকা কিভাবে খরচ করেন তা আল্লাহই ভাল জানেন। তাদের ছেলেমেয়েরা সব বিদেশে। আমরা যাদের সুশীল বলি, তাদের একটি বিরাট অংশের ছেলেমেয়ে বিদেশ থাকে। তারা অনেকেই আসলে পলিটিক্যাল অ্যাকটিভিস্ট (সক্রিয় কর্মী), তারা রাজনীতি করেন। সরাসরি রাজনীতিতে সাপোর্ট না পেয়ে তারা হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন বানিয়ে ফেলেন! এটি বানিয়ে তারা রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠির বক্তব্য প্রচার করেন আর দেশ-বিদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন।
আমাদের দেশে যদি হিসাব করেন সুশীল সমাজ দেখবেন অধিকাংশই রাজনৈতিক অ্যাকটিভিস্ট। মন্ত্রী বলেন, পেপারে দেখলাম ২৯ জন সচিবের একাধিক ছেলেমেয়ে বিদেশে থাকেন। বিদেশে কিন্তু থাকা খুব ব্যয়বহুল, এটি খুব সহজ নয়। তার মানে তাদের কত পয়সা? কেউ কেউ হয়তো কাজকর্ম করে, কিন্তু তারপরও বিদেশে পড়াশোনার ব্যয় মিটানো সহজ নয়।
বিদেশিরা কখনো বাংলাদেশের মঙ্গল চাইবে না এমন মন্তব্য করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ভারতবর্ষ সম্পদে ভরপুর ছিল। বিদেশিরা একের পর এক আসতে লাগলো। সব শেষে এলো বৃটিশরা। দেশটাকে একেবারে ছারখার করে দিয়ে গেলো! মন্ত্রী বলেন, ফের তারা (অন্যভাবে) আসতে চায়, যাতে বাকি সম্পদ লুট করতে পারে। ড. মোমেন বলেন, বিদেশিরা আমাদের মঙ্গলের জন্য আসে না। বড় বড় ইস্যুতে কথা বলে, মানবাধিকার অমুক-তমুক, এগুলো সব ভাঁওতাবাজি। এটা খুবই দুঃখজনক যে আমাদের অনেক লোক এ ধরনের ভাওতাবাজির শিকার হয়। চলতি বছরে প্রায় ৬০টি দেশে নির্বাচন হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ২৫টি দেশে নির্বাচন হবে।
কোনো গল্প শুনেছেন? কোনো সরকারের রাষ্ট্রদূতরা সেই নির্বাচন নিয়ে কোনো বক্তব্য দিয়েছেন? কেউ দেননি। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রশ্নে আমেরিকা বা ভারতে কোন কথা হয় না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কিন্তু বাংলাদেশে একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যে নিজেদের ওপর আত্মবিশ্বাস কম। আমরা আমাদের নির্বাচন করবো। আমরা চাইবো আমাদের নিজেদের তাগিদেই স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন। আমরা যে কাজ করছি সেটি গ্রহণযোগ্য কি-না? সেটা নির্বাচনের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই হবে।