ভারত বন্ধু না শত্রু, জবাব দিলেন তালেবান মুখপাত্র
Advertisements

ভারতকে তালেবান কোন চোখে দেখে, বন্ধু নাকি শত্রু। প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মুখপাত্র মুহাম্মদ সোহেইল শাহীন। শুক্রবার ভারতের এনডিটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই ব্যাপারে খোলামেলা কথা বলেছেন।

এনডিটিভির সাংবাদিক শাহীনকে প্রশ্ন করেন, তালেবান ভারতকে বন্ধু না শত্রু মনে করে? উত্তরে শাহীন বলেন, ‘আমাকে জিজ্ঞেস না করে ভারত সরকারকে জিজ্ঞেস করা উচিত, তারা তালেবানকে বন্ধু না শত্রু মনে করে। দেখুন, আমাদের বিরুদ্ধে লড়তে ভারত সরকার যদি আফগানিস্তানের মানুষের হাতে অস্ত্র, গোলাবারুদ তুলে দেয়, তাহলে তা অবশ্যই শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে।

‘আর ভারত যদি আফগানিস্তানের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে, তবে তা কখনোই শত্রুতা হিসেবে দেখা হবে না। ভারত কোনটা চায়, সে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে।’

তালেবানের সাথে ভারত সরকারের সম্প্রতি বৈঠক হয়েছে- বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে তা প্রকাশ হয়। এ বিষয়ে শাহীন বলেন, ‘আমিও শুনেছি, দোহাসহ অন্যান্য জায়গায় তালেবানের সাথে ভারতের এক প্রতিনিধিদলের কয়েকটা বৈঠক হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।

‘আমি শুধু জানি, গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তালেবানের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।’ শাহীন জানান, তালেবান ক্ষমতায় গেলে আইএস বা আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠনকে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।

রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি আফগানিস্তানে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। অভিযোগ করা হয় তালেবানই তাকে হত্য করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনডিটিভির সাংবাদিককে শাহীন বলেন, ‘আমাদের যোদ্ধাদের হাতে দানিশের মৃত্যু হয়েছে, এটা আপনি বলতে পারেন না। ‘তিনি আমাদের সাথে সমন্বয় করেননি। আমরা একবার নয়, বেশ কয়েকবার বিদেশি সাংবাদিকদের জানিয়েছি, আপনারা আফগানিস্তানে এলে অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন। ‘আমরা আপনাদের (বিদেশি সাংবাদিক) নিরাপত্তা দেব।’

তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘দানিশ কাবুলের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ছিলেন, আমাদের সাথে নয়। যুদ্ধের ময়দানে নিরাপত্তা বাহিনী, মিলিশিয়া বা সাংবাদিক- সবাই এক।

‘বন্দুকযুদ্ধে দানিশের মৃত্যু হয়। কোন পক্ষের গুলিতে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, তা জানা যায়নি।’ দানিশের মৃত্যুর পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান দানিশকে ধরার পর মেরে ফেলে। তার দেহও বিকৃত করা হয়। এ অভিযোগ অস্বীকার করে শাহীন বলেন, ‘আমরা বহুবার দানিশের দেহ বিকৃত করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছি। ‘এটা আমাদের নীতি নয়। আফগান নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের নামে কুৎসা রটাতে এমনটা করে থাকতে পারে।

‘লাশ বিকৃত করা ইসলাম ধর্মের বরখেলাপ।’

সাংবাদিকরা তালেবানের সাথে যোগাযোগ করে যুদ্ধের ময়দান থেকে সংবাদ পাঠাতে পারেন কি না, জানতে চাইলে সংগঠনটির মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এসে বিদেশি সাংবাদিকরা যদি প্রতিবেদন তৈরি করতে চান, তা তারা করতে পারবেন। ‘বাস্তবতা নিজের চোখে দেখতে সাংবাদিকরা আমাদের এলাকায় তাদের শাখাও খুলতে পারবেন।’

পাকিস্তান তালেবানকে সক্রিয় সহযোগিতা করছে- এ অভিযোগও অস্বীকার করেন শাহীন। এনডিটিভির সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘আপনি বলছেন, পাকিস্তান তালেবানকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে আমার মনে হয় আপনি এটা বলছেন কারণ পাকিস্তানের সাথে আপনাদের শত্রুতা রয়েছে।

‘আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি দেখে আপনি এমনটা বলছেন না।’ ১৬ জুলাই আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহার প্রদেশের পাকিস্তান সীমান্তবর্তী স্পিন বলদাক শহরে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের সংঘর্ষ চলাকালে মৃত্যু হয় পুলিৎজারজয়ী ভারতীয় ফটোসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকির। ৪১ বছর বয়সী দানিশ ভারতে রয়টার্সের প্রধান ফটোগ্রাফার ছিলেন।

সূত্র : এনডিটিভি

Advertisements