একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের, রক্ত ও ভ্রাতৃত্বের যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তা কেউ কখনো নষ্ট করতে পারবেনা বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সেটা ভাষায় ব্যাখ্যা করার মতো না। বাংলাদেশ- ভারত ঐতিহাসিক রক্তের বন্ধন, বাংলাদেশ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছিল। পৃথিবীর যত দেশ আছে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এক ধরনের, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ এ সম্পর্ক রক্ত দিয়ে লেখা। এই বন্ধুত্ব এবং ভ্রাতৃত্ব কোনভাবেই মিশিয়ে ফেলা যাবেনা। পঁচাত্তরের পর কত চেষ্টা হয়েছে এটা কিন্তু পারেনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগস্থ সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার অডিটোরিয়ামে ভারতে শিক্ষালাভকারী বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সমিতি (অ্যাবসি) আয়োজিত ‘মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের রক্ত বাংলাদেশে আছে, আমাদের রক্ত ভারতে আছে। একাত্তরে আমাদের দেড় কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। গর্ভবতী নারী, শিশু বৃদ্ধরাও ছিল। গবেষকরা বলছেন, সেসময় ১৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। এক মুক্তিযুদ্ধ পেরিয়ে আমাদের যে মৈত্রীত্ব, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব তৈরি হয়েছিল, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সেটাকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। আঞ্চলিক অস্থিরতা তৈরির জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা ধর্মকে ব্যবহার করেছিল। কিন্তু সত্য কখনো আড়াল করা যায়না। আজকের বাংলাদেশ সেটাই প্রমাণ করে।
বিগত ১২ বছরে নৌ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মোংলা বন্দরের সব সুবিধা ভারতের জনগণ নিতে পারবে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ফেনী নদীর উপর মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরায় ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে। এটা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। এর জন্য তাকে অনেক রাজনৈতিক সমালোচনা সইতে হয়েছে। বন্ধুত্বকে ধারন করেন বলেই চ্যালেঞ্জের মধ্যেও তিনি এই বিষয়গুলোর সমাধান করেছেন। খালিদ বলেন, ভোট আসলেই ভারতবিরোধী একটা স্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হয়। সেই জায়গায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সত্য ও সুন্দরের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করার কারণেই সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে বাংলাদেশ তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত বড় সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে ভারত। পদ্মাসেতুতেও ভারত ভূমিকা রাখছে। সর্বক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে আমাদের অসাধারন সম্পর্ক। করোনা মহামারীর মধ্যেও ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ আঞ্চলিক সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশে আসায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনার পেছনে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঐতিহাসিক ভূমিকাও স্মরণ করেন নৌ প্রতিমন্ত্রী। তিনি প্রত্যাশা করেন, ভারতে লেখাপড়া করা শিক্ষার্থীরা এ বন্ধনের বিরাট সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবেন।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. ডালিম চন্দ্র বর্মণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (শিক্ষা) অক্ষয় যোশী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এ মামুন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন নীপু। বিশিষ্ট সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. অজয় দাশ গুপ্ত ‘বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব’ বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।